বঙ্গ-নিউজঃ এক সময়ে বাংলাদেশের সামনে শঙ্কা ছিল তিনশ ছাড়ানো রানের লক্ষ্য পাওয়ার। বোলারদের চমৎকার বোলিংয়ে তত দূর যেতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যেও শেষের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকদের লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন থিসারা পেরেরা।তৃতীয় ওয়ানডেতে উপুল থারাঙ্গা-দানুশকা গুনাথিলাকার ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পাওয়া শ্রীলঙ্কাকে মাঝের ওভারে টানেন কুসল মেন্ডিস। সিরিজে থিসারার দ্বিতীয় অর্ধশতকে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ২৮০ রান করে শ্রীলঙ্কা।
সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠ বা এসএসসিতে এরচেয়ে বড় রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে কেবল একটি। ১৯৯৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৮২ রানের লক্ষ্যে ৬ বল হাতে রেখে পৌঁছেছিল স্বাগতিকরা।
উইকেটে বোলারদের জন্য খানিকটা সুবিধা আছে, সেটা নিতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ৩৬ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১৯২ রানের দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড়ানো স্বাগতিকদের তিনশ রানের আগে থামানো সাফল্যই। থিসারাকে দ্রুত ফেরাতে পারলে হয়তো লক্ষ্যটা আরও ছোটো রাখা সম্ভব ছিল।
এসএসসিতে শনিবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারাতে পারতো শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় ওভারে গুনাথিলাকার ফিরতি কঠিন ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা।
টস জিতে আগে বোলিং করার যে সুবিধা অধিনায়ক নিতে চেয়েছিলেন সেটাও হাতছাড়া হয়ে যায় শুরুর এলোমেলো বোলিংয়ে। ঠিক লাইন-লেংথে বল না করার সুবিধা পুরোপুরি উঠিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কা। থারাঙ্গা-গুনাথিলাকার ব্যাটে ১০ ওভারে উঠে ৭৬ রান।
দুই বাঁহাতির জমে উঠা উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তরুণ অফ স্পিনারের ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়ে কাভার মাহমুদউল্লাহকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৫ রানে জীবন পাওয়া গুনাথিলাকা। এরপর বেশিদূর যাননি অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা। তাসকিন আহমেদের দারুণ এক বলে এলোমেলো হয়ে যায় তার স্টাম্পস।
ভালো সূচনা পাওয়ার সুবিধা কাজে লাগান দিনেশ চান্দিমাল ও মেন্ডিস। একদমই তাড়াহুড়া করেননি তারা। অপেক্ষা করেছেন বাজে বলের জন্য, প্রান্ত বদল করে সচল রেখেছেন রানের চাকা। দুই জনের ব্যাটে বড় জুটির আভাস, তখনই অবাক করা এক রান আউটে ফিরেন চান্দিমাল।
তাসকিনের থ্রো পেয়ে মুশফিকুর রহিম স্টাম্প ভাঙার সময় ক্রিজের ভেতরেই ছিলেন চান্দিমাল। কিন্তু বেলস পড়ার সময় পা ও ব্যাট দুটোই ছিল উঁচুতে। আউট হওয়ার পর বিশ্বাসই হচ্ছিল না লঙ্কান ব্যাটসম্যানের।
বদলি ফিল্ডার শুভাগত হোম চৌধুরীর থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরেন মিলিন্দা সিরিবর্ধনেও। দুই রান আউটের ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই মেন্ডিসকে হারায় স্বাগতিকরা।
৭ রানেই ফিরতে পারতেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ঠিক মতো থ্রো করতে পারেননি মিরাজ, রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান মেন্ডিস। পরের বলেই সাকিব আল হাসানকে চার হাঁকিয়ে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন।
মুস্তাফিজের তৃতীয় স্পেলের শেষ বলটি থার্ড ম্যানে খেলতে গিয়ে ঠিক মতো পারেননি মেন্ডিস। ব্যাটের কানা নেওয়া সহজ ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করতে কোনো সমস্যা হয়নি মুশফিকের।
৭৬ বলে ৫৪ রান করার পথে চারটি চার আসে মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। তার বিদায়ের রানের গতিতে খানিকটা ভাটা পড়ে। চাপ কমানোর চেষ্টায় মাশরাফিকে স্লগ করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দেন আসেলা গুনারত্নে।
নুয়ান প্রদিপের জায়গায় দলে আসা সিকুগে প্রসন্ন পারেননি ঝড় তুলতে। মুস্তাফিজের স্লোয়ার উড়াতে গিয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে।
হঠাৎ দিক হারানো শ্রীলঙ্কার ত্রাতা থিসারা। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ফিরে যেতে পারতেন ব্যক্তিগত ২১ রানে। একটুর জন্য ফিরতি ক্যাচের নাগাল পাননি মুস্তাফিজ। ইনিংসের শেষ ওভারে মাশরাফির বলে ফেরার আগে ৪০ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৫২ রান আসে থিসারার ব্যাট থেকে।
শেষ ওভারে জোড়া উইকেটসহ ৬৫ রানে ৩ উইকেট নেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম ৩ ওভারে ২৫ রান দেওয়া মুস্তাফিজ পরে নিজেকে কিছুটা ফিরে পান। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ৫৫ রানে নেন ২ উইকেট।
অফ স্পিনার মিরাজ ১ উইকেট নেন ৪৯ রানে। টানা দুই ম্যাচে উইকেটশূন্য সাকিব। এই ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেটে তাকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকার এককভাবে শীর্ষ উঠে আসেন মাশরাফি। ওয়ানডেতে সাকিবের উইকেট ২২১, দেশের হয়ে মাশরাফির উইকেট ২২৪টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮০/৯ (গুনাথিলাকা ৩৪, থারাঙ্গা ৩৫, মেন্ডিস ৫৪, চান্দিমাল ২১, সিরিবর্ধনা ১২, গুনারত্নে ৩৪, থিসারা ৫২, প্রসন্ন ১, দিলরুয়ান ১৫, কুলাসেকারা ১*, লাকমল ২*; মাশরাফি ৩/৬৫, মুস্তাফিজ ২/৫৫, মিরাজ ১/৪৯, তাসকিন ১/৫০, মাহমুদউল্লাহ ০/৫, সাকিব ০/৪১, মোসাদ্দেক ০/১৩)
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৬:১৯ ৩২৩ বার পঠিত