জাতির জনকের ভাস্কর্য সরানোর দাবী তুলেছে কলকাতার মুসলিম ছাত্রদের একাংশ

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » জাতির জনকের ভাস্কর্য সরানোর দাবী তুলেছে কলকাতার মুসলিম ছাত্রদের একাংশ
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭



ভাস্কর্যটি

বেকার হোস্টেলের যে কক্ষটিতে শেখ মুজিবুর রহমান থাকতেন সেখানে একটি ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে।

বঙ্গ-নিউজঃ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য সরানোর দাবি তুলছে কলকাতার মুসলমান ছাত্রদের একাংশ।

শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনে কলকাতার যে ছাত্রাবাসে থাকতেন, সেই বেকার হোস্টেলের বর্তমান বাসিন্দাদের একাংশ এই দাবি তুলছেন। বেকার হোস্টেলটি মুসলমান ছাত্রদের আবাস।

শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরানোর দাবি নিয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে ছাত্রদের একাংশ মঙ্গলবার যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা জানিয়েছেন যে উপ-দূতাবাসে পৌঁছানোর আগেই পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। তাদের দাবী সনদও জমা নিতে চায়নি বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় থানার অফিসার-ইন-চার্জ সেটি গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান।

সরকারী ছাত্রাবাস বেকার হোস্টেলের যে ঘরে শেখ মুজিব থাকতেন, সেটিতে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে। ওই সংগ্রহশালাতেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতির ভাস্কর্য স্থাপন করেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

বর্তমানে বেকার হোস্টেলে বসবাসকারী ছাত্রদের মধ্যে যারা ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার দাবি করছেন, তারা বলছেন গোটা হোস্টেল চত্বরে ইসলামিক পরিমণ্ডল রয়েছে। সেখানে একটি মসজিদও আছে। তার মধ্যে কোনও ব্যক্তির ভাস্কর্য রাখাকে ‘ইসলাম-বিরোধী’ হিসেবে বর্ণনা করছে দাবি উত্থাপনকারী ছাত্ররা।

তবে সেখানে যে সংগ্রহশালা রয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই।

একজন শিক্ষার্থী সাহেব আলি শেখ বলছিলেন, “এই হোস্টেলে যারা থাকি, সকলেই মুসলমান। এটা একটা ধর্মীয় স্থানও - মসজিদ আছে। ইসলাম ধর্মে মূর্তি পূজা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই আমাদের হোস্টেলের পরিবেশে কোনও ব্যক্তির মূর্তি রাখা আমরা মেনে নিতে পারছি না।”

বেকার হোস্টেলে থেকে এমএ পড়ছেন নাজমুল আরেফিন। তার কথায়, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আমাদের হোস্টেলেরই প্রাক্তন আবাসিক। কোনও অসম্মান হোক তাঁর, সেটা আমরা চাই না। কিন্তু একই সঙ্গে এটা একটা ধর্মীয় প্রাঙ্গণ। সেখানে কোনও ব্যক্তির মূর্তি থাকা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। সংগ্রহশালা করা হোক, লাইব্রেরী করা হোক, কিন্তু মূর্তিটা সরানোর দাবি করছি আমরা।”

“ওই মূর্তিটা সংগ্রহশালার ঘরে লাগানো কাঁচের দরজার বাইরে থেকেই দেখা যায়। সেখানে অনেক ফুলও দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। একটা ইসলামিক পরিবেশে মূর্তি থাকাটা হারাম। তাই সেটিকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হোক,” বলছিলেন বেকার হোস্টেলের আরেক আবাসিক ছাত্র মুহম্মদ গোলাম মাসুদ মোল্লা।

ঋতিক হাসান বেকার হোস্টেলেই থাকেন। যে কলেজে শেখ মুজিবুর রহমান পড়তেন, সেই মাওলানা আজাদ কলেজেই উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স পড়ছেন। হোস্টেল থেকে কলেজে যাওয়ার পথে তিনি বলছিলেন, “বঙ্গবন্ধুকে আমরা সকলেই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মূর্তি রাখা অনুচিত। তাই সেটিকে সরিয়ে দেওয়া হোক।”

ছাত্রাবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান বেকার হোস্টেলের বাসিন্দা হয়ে পড়শোনা করতেন তখনকার ইসলামিয়া কলেজে, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ছাত্রাবাস পরিচালনা করলেও তিনতলার যে ঘরে শেখ মুজিব থাকতেন, সেখানে তৈরি হওয়া সংগ্রহশালাটি তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস দেখাশুনা করে। ঘরের মূল চাবিটিও থাকে উপ-দূতাবাসেই। অন্য চাবিটি থাকে হোস্টেলের সুপারিন্টেনডেন্ট ও মাওলানা আজাদ কলেজের অধ্যাপক দবীর আহমেদের কাছে।

মি. আহমেদের কাছে অবশ্য আবাসিক ছাত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনও আবেদন জানান নি।

সম্প্রতি ১৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে ওই সংগ্রহশালায় রাখা ভাস্কর্যে ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় উপ-দূতাবাস সহ নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে।

বেকার হোস্টেলের প্রাক্তন আবাসিক ও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলছিলেন, সেদিন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে সরব হয় বর্তমান আবাসিকরা।

“পশ্চিমবঙ্গের কোনও সিলেবাসে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সম্পর্কে পড়ানো হয় না। তাই সাধারন ছাত্রদের পক্ষে এটা জানা সম্ভব নয় বঙ্গবন্ধুর জীবন, বাংলা ভাষা, বাঙালী জাতির জন্য তাঁর লড়াই সংগ্রাম কী ছিল। সেজন্যই সংগ্রহশালা হচ্ছে না মূর্তি বসানো হচ্ছে, তা নিয়ে এতদিন ওই হোস্টেলের আবাসিকদের আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ১৭ই মার্চের অনুষ্ঠানের পরে ছাত্রদের মধ্যে একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ওই মূর্তি মুসলিম ছাত্রাবাসে রাখা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কলকাতার যে কোনও জায়গায় সম্মানের সঙ্গে ওই মূর্তি স্থাপন করা হোক,” বলছিলেন মি. কামরুজ্জামান।

বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সূত্র বলছে, তাদের কাছেও শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে বেকার হোস্টেলের ছাত্রদের এই প্রতিক্রিয়ার খবর পৌঁছেছে। বিষয়টি তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং ভারত সরকারের কাছে জানিয়েছেন।

কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারছেন না যে সংগ্রহশালায় ভাস্কর্য বসানোর এতদিন পরে হঠাৎ করে কেন ছাত্রদের মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া তৈরি হলো?

সুত্রঃ বিবিসি, কলকাতা

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১০:২৯   ৩৭৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আজকের সকল পত্রিকা’র আরও খবর


নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন হাজী মোহাম্মদ হারিজ খান
সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা
আশুলিয়ায় খুশবু রেস্তোরাঁ উদ্বোধন
ধর্মপাশায় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচী
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের আন্তরিক হতে হবে: শেখ হাসিনা
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন

আর্কাইভ