আজকাল নারীবাদি নামের নারীদের প্রবল হৈচৈ দেখি। নিজেদের অবস্থান স্থায়ী করার জন্য তারা একটা বিষয়ে সবাই মিলে বলেন তা হচ্ছে পুরুষ বিদ্বেস। এবং নিজেদের নারী করে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা তাদের।
পুরুষ এ ধরায় নারীকে যতটা অবমননা করেছে তার পরিমাপ করলে সব নারী এর নিচে চাপা পরে যাবে সত্যি। কিন্তু নারীরা নিজেও নিজেদের যতক্ষণ নারী ভাববেন মানুষ হবেন না। ততক্ষণ বৈষম্য বাড়বে বৈ কমবে না।
নারীবাদী বলে নিজেকে পরিচয় দিতে আলাদা একধরনের আত্মপ্রসাদে ভোগেন নারীবাদি নারীরা।
কিন্তু আমি নারী নই, পুরুষ নই মানুষ হতে চাই। আর নারী পুরুষ মিলেই এই ধরায় জীবন যাপন সমতা আনন্দ। কেউ কারো পরিপন্থি কারো শত্রু এমন মনে করি না। এমনটি ভাবা উচিৎ নয় নারী এবং পুরুষ জীব জগতে আলাদা প্রাণী।
আমার ব্যাক্তিগত জীবনে আমি যত পুরুষ দেখেছি। বাবা ভাই চাচা মামা খালু, ফুপা স্বামী ছেলে বন্ধুজন আরো যত সম্পর্কের পুরুষ আমি এ জীবনে দেখেছি এসব বেশীর ভাগ পুরুষকেই আমি জেনেছি দেখেছি অতিসয় সজ্জ¦ন হিসাবে। এদের কারো বিরুদ্ধে আমি কোন অপবাদ দেয়ার মতন কারণ খুঁজে পাইনা। যে তারা নারী বিরোধী বা নারীকে পূর্ণমর্যাদা দেননি। প্রতিটি সংসারে দেখেছি স্ত্রীর মতামতের গুরুত্ব দিতে তাদের আলাদা সম্মান দিতে। এইসব প্রতিটি সংসারে আমি দেখেছি সুখের ছায়া। আমি দেখেছি নারীদের পূর্ণ অধিকার নিয়ে জীবন যাপন করতে।
যোগাযোগ মাধ্যমে এবার দেখছি পুরুষরা আগ বাড়িয়ে নারীদিবসের শুভেচ্ছা দিচ্ছেন। নারীদের সম্মান জানাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ। সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে মানসিকতার উন্নতি হচ্ছে। কোন কালে কোথাও সব পুরুষ নারীর শত্রু ছিলেন না এখনও নেই। সব সময়ই কেউ না কেউ সমঅধিকার সমমর্যাদা দিয়ে নারীকে মূল্যায়ন করেছেন। যে নারীর গর্ভে জন্ম। যে নারী দুগ্ধ পান করে জীবন পথ চলার শুরু। যে নারীর সাথে প্রেমময় সম্পর্ক ¤েœহের সম্পর্ক তাদের যথযথ মূল্যায়ন করেছেন অনেক পুরুষ।
যেমন ১৮৫৭র নারী আন্দোলনে পুরুষরা সায় দিয়েছেন নারীর জন্য। যেমন বেগম রোকেয়াকে সহায়তা করেছেন পুরুষ ভাই, স্বামী তেমনি যুগে যুগে পুরুষ; নারীর পাশাপাশি থেকেছেন। কিন্তু গড়পরতা কিছু নিয়ম আদিকাল থেকে নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্যও কিছু পুরুষ কাজ করে গেছেন। নারীদের উপর অধিকার স্থাপনের জন্য। নারীকে নানা ভাবে ব্যবহার করার জন্য। এবং নারীকে কথা বলার অধিকার বঞ্চিত করার জন্য এ সব ব্যবস্থা বিশেষ করে সব ধর্ম ব্যবস্থায় চালু হয়েছে। এবং প্রকৃত পক্ষে সে বাঁধা অতিক্রম করা সে সব নিয়মের বেড়ি খুলে ফেলার জন্য এখনও পশ্চাদপদ মানসিকতা কাজ করে পুরুষের মনে, পাশাপাশি নারীর মনেও। এ পুরুষতন্ত্র নয় এই চাপিয়ে দেয়া ভয়াবহ আইন নিয়ম শিঙ্খলা তৈরি করা বেড়া ধর্ম এবং সামাজিক ভাবে যা মানতে মানতে মানুষ অনুশাসিত ভাড়বাহী জন্তু হয়ে গেছে। সেসব শৃঙ্খল মুক্ত অনেক মানুষ যারা স্বাধীন ভাবে জীবন যাপন করেন। যারা নিজেদের মা, বোন, স্ত্রী, বোন কন্যাদের মর্যাদা দিতে কর্পণ্য করেন না। আমি বাংলাদেশের জীবনযাত্রায় এমন মুক্তমনের পরিচয় অনেককাল আগে থেকে দেখেছি। এখনও অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশ নারীমুক্তির চিন্তা ভাবনায়।
তবে কিছু কু সংস্কার কিছু ধর্ম ভীরুতা কিছু সুযোগ সন্ধানী মন এখনও নারীকে কুক্ষিগত করে রেখে তাদের উপর অধিকার খাটাতে চায়। আর সেখানে নারী নিজে তার সহযোগী।
অনেক নারী অনেক সহসী হয়েও শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারেন না অশান্তিপূর্ণ সংসার থেকে পরিবারের আর নারীরা তাকে সমর্থন করেন না বলে।
নারী কোন সমস্যা প্রথমত নারীর কাছেই শেয়ার করেন। এবং তাদের চুপ করে থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়। আবার স্বামীর সংসারে নারীর অমর্যাদার শুরুও করে দেন অনেক নারী। ছেলে বা ভাই বউটিকে বেশী পছন্দ করলে তার বিরুদ্ধে কথা বলে। মন বিষিয়ে দিতে কার্পণ্য করেনা।
১৮৫৭ সনে আমেরিকার নারীরা সমঅধিকারের আন্দোলন করেছিল। শ্রমের মূল্য সমান পাওয়ার জন্য এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সমান পাওয়ার জন্য। ক্রমে নারীরা বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন স্থানে তাদের বক্তব্য জোড়াল কারেন এবং আট মার্চকে বিশ^ নারী দিবস ঘোষনা করেন।
দুইশত বছর আগে শ্রমিক নারীরা যে অধিকার সচেতন ছিলেন। যখন শিক্ষা ছিল না তেমন প্রসারিত। সে তুলনায় বিশ্ব এখন অনেক অগ্রসর। নারী সব কর্ম ক্ষেত্রে সমান ভাবে পদচারনা করছেন।
মাতৃতান্ত্রিক প্রচলন ছিল সমাজে এখনও আছে আদিবাসীদের মধ্যে। অথচ সেখান থেকে, নারীকে দ্বিতীয় লিঙ্গের কিছু ভাবতে এবং সেভাবে তাদের সাথে ব্যবহার করে আসছে পুরুষ অনেককাল থেকে। শাসন আইন সব ক্ষেত্রে নারীকে দ্বিতীয় লিঙ্গ হিসাবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
ধর্ম সমাজ সব ক্ষেত্রে এই আচরণ ছিল নারীর প্রতি প্রায় প্রতিটা দেশে। উন্নত বিশ্ব এই প্রথা ভেঙ্গে গেছে। নারীরা সম মর্যাদা নিয়ে নিজের মতন জীবন যাপন করছেন। সমাজ এই ব্যবস্থায় অভ্যস্থ। তাই কোন নারী একা জীবন কাটিয়ে দিলে বা লীভটুগেদার করলে তেমন কোন প্রশ্ন উঠেনা। মানুষ গালাগালী করে না। যোয়ান ওব আর্ককে ডাইনি আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারার মতন মানুষ পশ্চিমা বিশে^ ছিল। এডিথ পিয়াফ, সীমন দ্য ব্যোভওয়া, সময়ের আগে চলা নারীদের প্রতি পদে পর্যদস্ত হতে হয়েছে।
কিছু নারী অতিসয় অবলা হয়ে পুরুষের প্রতাপের কাছে হার মেনে নিজের জীবনকে পুরুষের রক্তচক্ষু এবং শাসনের কাছে যদি জীবন যাপন করেন। এবং সমাজ তাদের প্রশ্রয় দেয় এ দায় একা পুরুষের হতে পারে না।
এ চিন্তা এবং ভুল জীবনে বসবাস করে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার দায় নারীকে নিতে হবে। শিক্ষা দিক্ষায় যথেষ্ট জ্ঞানী হয়েও এই অমর্যাদকর সংসার আকড়ে পরে থাকার পক্ষে যুক্তি কী হতে পারে।
অর্থনৈকিত, সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মিয়, চিন্তা এবং মেনে নেয়া স্বভাব, সন্তানের দোহাই। যত কিছু অযুহাত দিয়ে এই যন্ত্রণাময় জীবন মেনে নেয়া হোক একটি জীবনের মূল্যের সাথে আর কোন কিছুর তুলনা করা চলে না। অপমানকর জীবন ছেড়ে যে নারী বেড়িয়ে আসতে পারে না নিজেকে নিজে মূল্যহীন করে রাখে। তার জন্য আর যতজনা কান্নাকাটি বক্ততা বিবৃতি দিক কোন লাভ নেই।
নারীর নিজের মনের মধ্যে নিজেকে মানুষ ভাবা এবং নিজের জীবন নিয়ে সুখি হওয়ার চিন্তা সবচেয়ে আগে প্রথিত হওয়া প্রয়োজন নিজের মনে।
বাংলাদেশের মতন উন্নয়নশীল দেশে মানসিক চিন্তা চেতনার এক বিশাল ফারাক রয়েছে জীবন যাপন এবং নারীর মনের স¦নির্ভরতার । মানুষ সবসময় নিজেকে চিন্তা করতে পারেন পুরুষের প্রযতেœ।
বাবার অধিন থেকে স্বামীর অধিনে। ছেলের অধিনে। নিজের জীবনের হাড় মাংস চামড়া ক্ষয় করে সংসারের আর সবার সুখ ভোগের জন্য সদা প্রস্তুত থেকেও তাদের প্রতি করুণা এবং অবজ্ঞার ভাব লালন করে চলা চিন্তা ভাবনাকে উপেক্ষা করে চলার শক্তি সঞ্চয় করতে পারেন না নারী।
পদে পদে অপমানিত হয়েও নিজের আয় তুলে দিয়েও সম্পর্কের সার্টিফিকেট গলায় ঝুলিয়ে রাখেন তারা।
আধুনিক মেয়েরা নিজের পরিচয় পরিবর্তন করে হয়ে যান স্বামীর মিসেস। তারা এখনও নিজের নাম পরিবর্তন না করা বা নিজের মতন চলার চিন্তা করতে পারেন না। ব্যতিক্রম খুব কম। গতানুগতিক ধারা মেনে চলাই যেন জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ।
বিদেশে থেকেও অনেক সুযোগ যেখানে আছে সেখানেও তারা সুযোগ নিয়ে অপমানকর জীবনের অবসান ঘটাতে পারেন না। পাছে লোকে কিছু বলে এই ভয়ে। আর এই সব মেয়েদের জন্য কিছু সুযোগ সন্ধানী পুরুষ আসকারা পেয়ে যায় মেয়েদের নীচু করে রাখার, দেখার। এবং পৌরুষ ফলিয়ে তাদের শরীরের শক্তি অবলা নারীর শরীরের উপর ঢালার।
অথচ এরা সমাজে নীচু শ্রেণীর, অশিক্ষিত মানুষ তা নয়। এরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত পুরুষ। আমি ঢালাও ভাবে সব পুরুষের দোষ দেখিনা। অনেক বেশী মানবিক পুরুষ আছেন এ জগতে। তারাই নারীদের হয়ে কথাও বলে গেছন। কিন্তু নারীদের নিজেদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং নিজের মেরুদ- সোজা করে দাঁড়ানোর।
নারীকে দ্বিতীয় লিঙ্গ ভাবা এবং সব সুযোগ বঞ্চিত করে রাখা বা কম মূল্যায়ন করা শুধু উন্নয়নশীল দেশ নয় উন্নত দেশ গুলোতে সীমিত ভাবে হলে এখন পর্যন্ত চলছে। সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য ১৮৫৭ সনে নারী শ্রমিক সম অধিকারের জন্য যে কাজ শুরু করেন প্রতিবাদের মাধ্যমে আর্জিত হয় কিছুটা নারী অধিকার। ৮ মার্চ পালিত হয় আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। এ প্রথা থেকে আরো অনেক অগ্রগামী চিন্তা এখন করার সময়। দিবস পালনে যত বক্তিৃতা বিবৃতিতে তার কতটা সঠিক ভাবে ঘরে, সংসার জীবনে অনুশীলন করেন পুরুষ এবং নারী এক অপরকে সম্মান করে সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এছাড়া প্রান্তিক নারীরা দিন পালন করে একই রকম যারা এসব দিবসের খুঁজ খবর জানেন না।
অথচ নারীরা বিশে^ এখন এমন নারীরা আছেন যাদের সমকক্ষ সাধনা করেও অনেক পুরুষ হতে পারবে না। এখন প্রমাণিত মেধার কোন লিঙ্গ নাই। কোন কোন ক্ষেত্রে নারী অনেক বেশী পারদর্শি পুরুষের চেয়ে। এবং সব রকম কর্ম ক্ষেত্র নারী এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্ব নির্ভরতায়। নারীরা নিজে এখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা সংসার করবেন, বাচ্চা পালন করবেন বা না করবেন না।
কাজেই দ্বিতীয় লিঙ্গ হিসাবে যাচাই করার বা শুধুই বাচ্চা উৎপাদনের যন্ত্র হিসাবে অবলা নারী ভাবার যোগ এখন শেষ। নারীকে ভাবতে হবে মানুষ হয়ে উঠার। সম্পন্ন সয়ংসর্ম্ফণৃ একজন মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১:০৫:১৭ ৫২২ বার পঠিত