বঙ্গ-নিউজঃ আজ ৮ মার্চ জাতিসংঘের স্বীকৃতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জাতিসংঘ এ দিবসটির স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৪ সনে। তবে, বামপন্হীরা ১৯১৩ সনে এ দিবসটি ঘোষনা করে। রাশিয়াতে তা রাস্ট্রীয়ভাবে পালিত হয় কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর থেকে। মূলত নারী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের দাবি থেকে এ দিবসটির উৎপত্তি।
আর, নারীর এ ন্যায্যতা প্রাপ্তির আন্দোলনের বয়স মাত্র একশো পার হলো।
অথচ, আজ আমাদের ঐ ইতিহাস ভুলে গেলে চলবেনা যে, শুধু নারীর মজুরি নয়, সামগ্রিক অধিকার প্রদানের কাজটি শুরু হয় আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগে, ইসলামের শাসনে, স্বয়ং রাসুলাল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে।
অমুসলিম মনীষী Pierre Crabites , সে পরম সত্যটি স্বীকার করে বলেছিলেন, ” Mohammad was the greatest champion of women’s rights the world has ever seen “.আমরা সে ইতিহাস স্মরণে আনা দরকার যে, ইসলামের আবির্ভাবের প্রাক্কালে নারীদের মানুষের অধিকার তো দূরে বাঁচার অধিকারও ছিল নিয়ন্ত্রিত। কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো, যা বন্ধ করেছে ইসলাম। পিতার সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ছিলনা, তা দিয়েছে ইসলাম। বিধবা বিয়ে নিতে পারতোনা, সে অমানবিক কুসংস্কার বন্ধ করেছে ইসলাম।
শুধু তাই নয়, নবীজির যৌবনের প্রথম শাদী ছিল ৪০ বছর বয়স্কা বিধবা হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রা) ‘র সাথে। অথচ, নারীর এ সব সহজাত মানবিক অধিকার আজো অমুসলিম সমাজের কোন কোন ক্ষেত্রে আসেনি।
অধিকার দেবে তো দূরের কথা, এক সময় অন্য ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্হায় নারী ছিল ঘৃণাকর প্রাণী মাত্র।
মাত্র সেদিন, সপ্তদশ শতাব্দিতে, তথাকথিত সভ্য -জ্ঞাণীদের এক সম্মেলন হয় রোম নগরীতে। Council of the wise এর এ সম্মেলন সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত ঘোষনা দেয় যে, –”woman has no soul “(নারীর কোন আত্মা নাই) ।
সুতরাং এ সব জ্ঞাণপাপিরা নারীর সব অধিকার হরনের পর স্রস্টা প্রদত্ত আত্মাকে পর্যন্ত অস্বীকার করার মাধ্যমে তাদের পরিপূর্ণ মানুষ নয় মর্মে ঘোষনা দিয়েছিল। হিন্দু সমাজে নারী সম্পর্কে, তাদের গুরু মনুর উক্তি প্রনিধানযোগ্য। মনুর মতে, নারীকে দিবারাত্রি পুরুষদের কঠোর শাসনে রাখতে হবে, কারণ তারা জন্মগত পাপী ও লম্পট। অধ্যাপক ইন্দ্রের ভাষায়, ” নারীদের ন্যায় এত পাপ -পন্কিলতাময় প্রাণী আর নাই। নারী প্রজ্বলিত অগ্নিবিশেষ। সে ক্ষুরের ধারালো দিক। - - -নারীদের ভালোবাসা পুরুষদের উচিত নয়। ( there is no creature more sinful than women.Woman is burning fire. She is the sharp edge of the razor. She is verily all this in a body - - - man should not love them. @by Prof. Indra, Status of Women in Mohabharat, p -16.)
চীনের ধর্মগ্রন্হ নারীকে বলেছে, ” দু:খের প্রস্রবণ”। তাদের মতে, নারীর চেয়ে নিকৃস্ট কিছু নাই। বৌদ্ধধর্ম ও ব্যতিক্রম ছিলনা এ ক্ষেত্রে। ঐতিহাসিক Westmark বলেন ” Women are,of all the snares which the tempter has spread for men, the most dangerous :in women are embodied all the powers of infatuation which blind the mind of the world.(Westermark, as quoted in the Position of women in Islam,Nazhat afza and Khurshid Ahmad, kuwait, 1982, pp.12 -13) অর্থাৎ, মানুষের জন্য প্রলোভনের যত ফাঁদ এর মধ্যে নারী সর্বাপেক্ষা বিপদজনক, নারীর মধ্যে সকল মোহিনীশক্তি অঙ্গীভূত –যা সমগ্র বিশ্বের মনকে অন্ধ করে দেয়। এভাবে ইহুদীরা বলতো, নারী চির অভিশপ্ত। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে নারীদের বলা হতো —” শয়তানের অঙ্গ”,বিষাক্ত বোলতা, দংশনের নিমিত্তে সদা প্রস্ত্তুত বৃশ্চিক, ইত্যাদি। নারী জাতির উপর অভিসম্পাত করেছেন, –সেন্ট বার্নার্ড, সেন্ট অ্যান্টনী, সেন্ট পল এর মতো বিশ্ব বরেন্য ধর্মযাজক ও পুরোহিতগন পর্যন্ত।
অথচ, আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগের ইসলামের দৃস্টিতে –” নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমনটি পুরুষদের রয়েছে তাদের উপর “(২:২২৮)।”তাহারা তোমাদের অঙ্গাবরণ এবং তোমরা তাহাদের অঙ্গাবরণ (২:১৮৭)। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের দৃস্টিতে উত্তম”। সূরা নিসাতে বলা হয়েছে - ” স্ত্রীদের সাথে দয়া ও ন্যায়বিচারের সহিত জীবন যাপন করিবে “(আয়াত -১৯)।
ইসলামই বলেছে —মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত। ইসলামে কন্যাকে দুর্ভাগ্য মনে করা হয়না, বরং ভাগ্যের প্রতীক ধরা হয়। যে মুসলমানের একাধিক কন্যা সন্তান লালন -পালন ও বিয়ে -শাদীর সুযোগ হয়েছে –সে জান্নাতি।
Annie Besant তাঁর বিখ্যাত Kamlalectures – এ যথার্থ বলেছেন –” in islam men and women are put perfectly on equal footings.Mussalman women have been far better treated than the western women by the law.By the laws of islam her property is carefully guarded whereas Christian women do not enjoy such absolute right according to the Laws of Christian west.”
বিদায় হজ্বের ভাষনে আল্লাহর প্রিয় হাবিব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের বিষয়ে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন—” নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। এদের প্রতি নির্মম ব্যবহার করার সময় আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে নির্ভয় হয়ো না। তাদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি তোমাদের উপর তাদেরও অধিকার রয়ছে। সুতরাং তাদের কল্যান সাধনের বিষয়ে তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ করো”।
আজ এমন শান্তি -সাম্য -মৈত্রীর মহাবিধান ইসলামের অনুসারিদের জন্য আফসোস হয়, তারা নিজের ঘরের খবর না নিয়ে, পরের ভাঙ্গা দরজায় মুক্তি চায়, শান্তি খোঁজে। নারী মুক্তির মিথ্যা প্রলোভনের গোলকধাঁধায় ফেলে তাদের নতুন বন্দীখানায় আটকানোর নিত্যনতুন ছক আঁকছেন –সে জ্ঞাণীগুণিদের Council of the wise থেকে, যারা নারীকে আত্মাবিহীন এক ভিন প্রজন্ম বলতে পর্যন্ত লজ্জাবোধ করেনি। যারা নারী মুক্তি না দিলে আজো নারীর অধিকার ভাবনা থেকে যেতো কল্পনাতীত –আজ নারী মুক্তি বা নারী স্বাধীনতার সে তথাকথিত আন্দোলনের স্রোতধারা যেন ইসলামের বিরুদ্ধে এক হাতিয়ার। সাবধান মা -বোনেরা, ওরা প্রতারক। ওরা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। আসুন, নারী স্বাধীনতার ইসলামি অবদান ও রুপরেখাগুলিকে যুগের সাথে সামন্জস্যপূর্ন করে আলোচনায় আনি। নারীদের সম্মান বজায় রেখে, নারীদের সাথে নিয়ে কাজ করি। তারা আমাদের বন্ধু। কোরানে করিমে বলা হয়েছে —মুমিন নর, মুমিন নারী পরস্পর বন্ধু, তারা সৎ কাজের অাদেশ দেয়, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে”।
সুতরাং নারী নির্যাতনকারী কখনো ইসলামের বন্ধু হতে পারে না, বরং শত্রু। নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম, তাই ইসলামই হবে নারীর একমাত্র রক্ষাকবস।
-
লেখক: Adv. Musaheb Uddin Baktiar
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৬:০৫ ৩৮৪ বার পঠিত