বঙ্গ-নিউজঃ সোমালিয়ায় চলছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিতে বর্তমানে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সোমালিয়া গত ২৫ বছরের মধ্যে এবার নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল। যুদ্ধাবস্থা দেশটির অর্থনীতি একেবারে ভেঙ্গে দিয়েছে। সেই সাথে তীব্র খরার কারণে কৃষকরা কোন ফসল উৎপাদন করতে না পারায় এ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে চলছে দেশটি।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর হিসেব বলছে, ছয় বছর আগে ২০১১ সালের দুর্ভিক্ষে সোমালিয়ায় অন্তত ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশিই ছিল ৫ বছরের কম বয়সী শিশু। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচীর তথ্য অনুযায়ী, এবার সোমালিয়ার প্রায় ৬২ লাখ মানুষ খাদ্য ও পানি সংকটে রয়েছে। সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র খরার কারণে সৃষ্ট খাদ্য সংকটের কারণে এরই মধ্যে দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। খাদ্য ও পানির সংকটে শিশুদের জন্য স্কুলে যাওয়াটা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সংখ্যার হিসেবে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত খাদ্য সহযোগিতা না পাওয়ায় আরও এক লাখ শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার সোমালিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল্লাহি মোহাম্মদ এই অবস্থাকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ধুমা ধুমা এলাকার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদিহাকিম আহমেদ বলেন, ‘দুুভিক্ষের ফলে তার শিক্ষার্থীরা স্কুল ছাড়তে শুরু করেছে। আর শিক্ষার্থীরা একবার স্কুল ছেড়ে গেলে আর ফিরে আসে না। কারণ শিক্ষার প্রতি তাদের অনিহা ধরে যায়।’
আল-জাজিরার প্রতিবেদক ফাহমিদা মিলার সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ডলো এলাকা থেকে জানান, খরায় ধুমা ধুমা এলাকা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছে। নানা জীবাণু বাহিত রোগে সেখানকার জনোগণ আক্রান্ত্র হয়ে পড়ছে। তীব্র খরায় ডায়রিয়া, কলেরা এবং হামের মতো রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন ৫৫ লাখ মানুষ। এর প্রভাবে গত তিন মাসে ওই এলাকার শিশুরা দলে দলে স্কুল ছেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সোমালিয়ায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার শিশু এবং তীব্র অপুষ্টির শিকার ৭০ হাজার শিশু। এ শিশুদের জীবন বাঁচাতে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া এবং ইয়েমেনে প্রায় দুই কোটি মানুষ অনাহারে রয়েছেন। দক্ষিণ সুদানের উত্তরাঞ্চলে আগেই দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ঘোষণা না দেওয়া হলেও বহুদিন ধরেই অনাহারে রয়েছেন নাইজেরিয়া, সোমালিয়া এবং ইয়েমেনের বহু মানুষ।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, নাইজেরিয়ার কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চল গত বছর থেকেই দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত রয়েছে। আর সোমালিয়ায় যা চলছে ২০০০ সাল থেকে। সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের কারণ খরা হলেও বাকি দেশগুলোতে সংঘাত আর মানব সৃষ্ট কারণে ঘটছে এমন বিপর্যয়। আফ্রিকার শিং নামে পরিচিত সোমালিয়ায় দ্রুত ত্রান সাহায্য না পৌঁছলে দেশটিতে বহু মানুষ অনাহারে মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০:২১:৪৮ ৪১৫ বার পঠিত