বঙ্গ-নিউজঃ লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের মিলন মেলা সাঙ্গ হচ্ছে আজ। পর্দা নামছে ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলার। বছর ঘুরে আবারও ফিরে আসবে বইমেলা-২০১৮। সারা বছরের প্রতীক্ষিত মেলা, লাখো পাঠকের পদধ্বনিতে মুখরিত বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণের এই প্রাণের মেলার জন্য আবারও ক্ষণ গণনা শুরু হবে। বইমেলায় বেজে উঠল বিদায়ের সুর।
একুশের গ্রন্থমেলা জ্ঞান, বুদ্ধি, শিক্ষা ও প্রজ্ঞা অর্জনে অন্যতম ভূমিকা রাখে। মেধা ও আত্মার মনন ঘটাতে পারে একমাত্র বই। বর্তমান আকাশ-সংস্কৃতির যুগে, সাইবার নেশায় নেশাগ্রস্ত, ইন্টারনেট আসক্ত তারুণ্যকে বই পড়ার পবিত্র অভ্যাস গড়ে তুলতে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। বই পড়ার মধ্য দিয়ে যেমন জ্ঞানের পরিধি বাড়ে, তেমনি মানুষের অনুভূতি, অনুধাবন ক্ষমতা, স্বপ্ন দেখার প্রবৃত্তি জন্মে। অন্যবারের চেয়ে পরিধি বেড়েছে এবারের বইমেলার। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো। মাসজুড়ে বইপ্রেমী পাঠক-দর্শনার্থীর ছিল উপচেপড়া ভিড়। নতুন-পুরনো লেখকরা পাল্লা দিয়ে বই বিক্রি করেছেন।
কেমন হলো এবারের মেলা_ প্রশ্ন ছিল কবি রাজীব মীরের কাছে। তিনি জানান, বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত শক্তি অনুধাবনের একটা মাধ্যম। গোটা জাতির পালস বোঝা যায় কী হারে পঠন-পাঠন ও বাংলা সংস্কৃতির ধারা বহমান রয়েছে। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট যেমন ধর্মান্ধতা, জঙ্গিবাদ কিছুটা হলেও মানুষের মন বিষাদগ্রস্ত করে ফেলেছিল। বইমেলায় সবার যূথবদ্ধ অংশগ্রহণ, আড্ডা, আলোচনা, বাংলা বইয়ের প্রসার মানুষের প্রগতিশীল মন ও জীবন মান অগ্রগতির দিক নির্দেশ করে। এবারের বইমেলাও তাই। যদিও মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা বা পুলিশের বই পড়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অচিরেই সেসব বাধা কাটিয়ে ওঠার জন্যও বইমেলার পাঠক-লেখক-প্রকাশক সংগঠিত স্বপ্ন সমাজ গড়বে, সরকার আরও সচেতন হবে_ আশা করি। এবারের বইমেলায় সব মত-পথের নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়, যা বাংলা ভাষার শক্তি বৃদ্ধিতে তথা সুস্থ বাংলা সংস্কৃতি বিনির্মাণে আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এবারের বইমেলা নিয়ে অনেক পাঠক জানান, কিছু ক্ষেত্রে বইমেলায় নূ্যনতম গুণগত মানের ব্যাপারটা বিবেচনা করা হয়নি। বিশেষ করে অনুবাদের বই এবং শিশুতোষ বইয়ের ক্ষেত্রে। পাশাপাশি প্রবন্ধ, ভ্রমণ কিংবা ভালোমানের কবিতার বইয়ের সংকট ছিল। আবার কিছু নিম্নমানের বইয়ে মেলা সয়লাব হয়েছে। এ বিষয়গুলোর দিকে বাংলা একাডেমির নজর দেওয়া উচিত। বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও কিছু নীতিমালা থাকা উচিত বলে জানান অনেকেই। সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ হোসেন জানান, সার্বিকভাবে মেলা ভালো হয়েছে। তবে কিছু অসঙ্গতিও রয়ে গেছে। মেলার পরিসর বাড়লেও স্টল বিন্যাসে সৌন্দর্যহানি হয়েছে। মেলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই স্টল পেতে বঞ্চিত হয়েছেন। অন্যদিকে কিছু বই প্রকাশের ক্ষেত্রে মানের দিকে বিবেচনা করা হয়নি। উপন্যাস, কবিতার বই প্রকাশের চাপে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বইয়ের সামঞ্জস্যতা রক্ষা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
সবার দাবি, বইমেলা হোক সৃজনশীলতার প্রতীক। তবে এবারের মেলার শুরুতেই বাংলা একাডেমিকে পড়তে হয় নানা সমালোচনায়। স্টল বরাদ্দের সময় শ্রাবণ প্রকাশনীকে এবারের একুশে বইমেলায় নিষিদ্ধ করা হয় এবং বইমেলায় তাদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা আসে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এবারের বইমেলা নিয়ে তরুণ লেখকদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বেশ উৎফুল্ল। এ বছর নান্দনিক প্যাভিলিয়ন নির্মাণের জন্য বাংলা একাডেমি থেকে পুরস্কার পেয়েছে পাঞ্জেরী।
ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিকে ধারণ এবং বাংলা ভাষার সৃজনশীল ধারাকে বিস্তৃত করতে বাংলা একাডেমির প্রতি বছরের নিয়মিত আয়োজন এ বইমেলা। আসছে বছর আবারও লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের মেলবন্ধনে মুখর হবে প্রাণের বইমেলা। আজ মেলার শেষ দিন হওয়ায় কিছুটা সময় বাড়ানো হয়েছে। মেলা খোলা থাকবে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।