শিক্ষাঙ্গন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে !! -নবনীতা চক্রবর্তী

Home Page » ফিচার » শিক্ষাঙ্গন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে !! -নবনীতা চক্রবর্তী
শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭



 ধর্ষণ চিত্র মূর্ত এর চিত্র ফলাফল

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড , কথাটি সারৎবৎ সত্য ।যুগে যুগে কালের বিবর্তনে শিক্ষা এক মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারের মর্যাদায় আসীন ।বই খাতা কলম পেন্সিল বা বিশ্ববিদ্যালয় এর মত শিক্ষার হাজার অনুষঙ্গের মধ্যে গুরুত্ব পূর্ণ দুটি উপাদান হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী । এই দুই পক্ষের সুসমন্বিত ও পারস্পরিক প্রীতিময় একটি সুস্থ স্বাভাবিক অঙ্গীকার এবং সহযোগিতায় নির্মিত হয় শিক্ষা পরিবেশ, বিনির্মাণ ঘটে স্বত্ব সুন্দর আগামীর । একটি শিক্ষালয় যেখানে ‘দিবে আর নিবে , মিলিবে আর মেলাবে ‘ এর মত বিশ্বজনীন শিক্ষা পরিবেশ গড়ে ওঠে । কিন্ত বিপন্ন পৃথিবী র দ্বিধা গ্রস্থ মানুষদের অস্থির মস্তিষ্ক প্রতিনিয়তই উৎপন্ন করে যাচ্ছে হিংসা দ্বেষ আক্রোশ সন্ত্রাস কুটিল রাজনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি ।তার ঢেউ এসে পড়েছে শিক্ষা অঙ্গনে ।ওই যে ,”নগর পুড়লে কি আর দেবালয় এড়ায়” । শিক্ষা অঙ্গন দূষিত হচ্ছে ছাত্র রাজনীতির নাম ছাত্র সন্ত্রাস ,ক্যাম্পাস দখল ,ছাত্র -শিক্ষক রাজনীতি হল সন্ত্রাস লেজুড়বৃত্তির মত ঘৃণ্য ও অনাকাঙ্খিত বিষয়বস্তূ দ্বারা । সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ছাত্রী নিপীড়ণের মতো ঘটনা । বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের মতো যৌন নিপীড়ন বা উত্তক্ত্যকরণ এক বিবাদ মান সমস্যা । উষ্ণ পৃথিবীতে নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বাড়ছে , অনেক ক্ষেত্রেই তারা অবহেলিত সময়াংশে সঠিক আইনি সহযোগিতা থেকে হয় তারা বঞ্চিত ,এ সমস্ত তথ্যের সত্যতার সাথে দ্বিমত নেই কোথাও ,কিন্তু যখন আঙ্গুল নির্দেশিত হয় একজন শিক্ষকের দিকে তখন বিষয়টি ভাবনার জন্ম দেয়,জন্ম দেয় ক্ষোভের। কারণ অভিযোগ শুধু শিক্ষকের উপর নয় ,অভিযোগের কাঠগড়ায় সমগ্র জাতি।


কিছুদিন আগেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে র একজন শিক্ষক অভিযুক্ত হয়েছিলেন ছাত্রী নিপীড়ণের অভিযোগে । অতঃপর নিত্য নতুন মুখরোচক খবরে সরগম শিক্ষাঙ্গন ,সেই সাথে অভিযুক্ত শিক্ষক কে তুলোধোনা, বিভিন্ন মাধ্যমে তর্ক বিতর্কের ঝড় ।
পরবর্তীতে তদন্ত হলো,তদন্তে দেখা গেলো ব্যক্তিগত আক্রোশ হতে প্রতি হিংসার বশ বর্তী হয়ে ছাত্রী টি শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি দাখিল করে । অভিযোগটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা ।অতঃপর সব নিশ্চুপ। এটি নিয়ে আর একটিও ব্যাকক্যালাপ হয়নি। তবু সুখের কথা এই যে ,শিক্ষক অবমাননার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা একটা প্রতিবাদ অন্তত করেছিল। কি রকম একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি র মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। ইচ্ছে হলেই আমাদের শিক্ষকেরা ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করছেন,লেজুড়বৃত্তির পথ প্রসস্থ করছেন, ঘটছে যৌন নিপীড়ণের মতো ঘটনাও। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে নেই প্রকাশ্যে শিক্ষক লাঞ্ছনা,গাড়ি ভাঙচুর,অবরুদ্ধকরণ ক্ষেত্র বিশেষে যৌন নিপীড়ন কে ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করার প্রণোদনা। কতটা নৈতিক অধঃপতন ঘটেছে আমাদের। সব জেনে বুঝেও না বুঝার,না দেখার,না শোনার ভান করছি আমরা। কাকে এড়িয়ে যাইতে চাইছি আমরা ?


সম্প্রতিতম সময়ে আবারো একই অভিযোগে অভিযুক্ত আরেকজন শিক্ষক। গণমাধ্যম গুলো সরব হয়ে উঠেছেছাত্রী নিপীড়ন অভিযোগটিকে কেন্দ্র করে। বিষয়টি একই সাথে দুঃখজনক ও বিবেচিনার দাবিদার। দুঃখের ব্যাপারটি এখানে আমূল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্পর্ক টি আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হলো এবং চিন্তার শেকড় আরো গভীরে। অভিযোগ টি এখনো তদন্তনাধীন অর্থাৎ তদন্ত চলছে। একটি কথা আমাদের মনে রাখা দরকার , একটি খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত কাউকে যেমন খুনি বলা যায় না তেমনি তদন্ত কালীন সময়ে কাউকে দোষী বলাও সমুচিন নয়। তদন্তের ফলাফল যে কোনো কিছুই হতে পারে। অভিযোগটি সত্য বলেও প্রমাণিত হতে পারে আবার প্রমাণিত হতে পারে অভিযোগটি মিথ্যা। সত্য মিথ্যার এই দ্বন্দ্বের অবসানের জন্য ধৈর্য ধরাটাই বিবেক প্রসূত ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। সেই সাথে আইনের প্রতি আস্থা রাখা উচিত। কিন্তু ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা আমাদের ধাতে নেই, হয়তোবা শ্রদ্ধাশীল নই আইনের প্রতি। বাস্তবিক পক্ষে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো যেরকম একপেশে ভাবে মুখর হয়ে উঠেছে অভিযুক্ত শিক্ষকের সমালোনোচনায় যেন তিনি অপরাধী ,অনেকটা বিচার হবার আগেই ফাঁসি কার্যকর। ভুলে যাওয়া স্বভাব আমাদের মজ্জাগত। আমরা ভুলে যাই অথবা ভুলে যেতে ভালোবাসি,প্রত্যেক টি ঘটনার দুটি দিক থাকে,যেমন থাকে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ ,থাকে প্রত্যেকটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া। সুতরাং একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত দেয়া ও নেয়া কোনো চিন্তাশীল সুস্থ ও শিক্ষিত জাতির পক্ষে সম্ভব নয়,উচিত ও নয়। সময় এখন সংযত হবার ,একটু মানবিক হবার,গঠনমূলক চিন্তা করবার। ভাবতে হবে উভয় পক্ষের কথা। ছাত্রী নিপীড়ন অবশ্যই নিন্দনীয় ,কঠোর শাস্তিযুক্ত একই সাথে অনুচিত আগাম অহেতুক সমালোচনা। কারণ প্রত্যেক মানুষেরই সামাজিক পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জগৎ আছে। ব্যাক্তি দোষী হলে আইন অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হোক এই দাবি সবার ,কিন্তু তার আগে নয়। ব্যাক্তি নির্বিশেষে সম্মানের স্থানটুকু সুরক্ষিত থাকুক। নিদেন পক্ষে তাকে সন্মান করতে না পৰ যায় অন্তত শিক্ষক হিসেবে হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে বিরত থাকি, যখন সম্পূর্ণ বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। কারণ সময় চলে যায় কিন্তু তার প্রতিঘাত থেকে যায় সু স্পষ্ট রূপে।


অপেক্ষা হোক একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের। অপেক্ষা হোক সঠিক ও সত্যভাষণের। সুস্থ শিক্ষা পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করবার অধিকার সকল শিক্ষার্থীর। ঠিক তেমন ভাবেই শিক্ষকের রয়েছে উপযুক্ত সন্মান পাবার অধিকার। ছাত্রী নিপীড়ণের মতো নেক্যারজনক বিব্রতকর ঘটনা কাম্য নয় কারোর ,সেই সাথে কাম্য নয় শিক্ষক অবমাননা ।
কারণ পরিশেষে দায়টি আমাদের সবার।

নবনীতা চক্রবর্তী।
শিক্ষার্থী ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
২৪-০২-২০১৭ইং

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৮:৫১   ৪৪৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ফিচার’র আরও খবর


অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে

আর্কাইভ