বঙ্গ-নিউজঃ প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করে পানি ছিটিয়ে নগরীর ধুলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রতিদিন কয়েকটি প্রধান সড়কে ট্রাক দিয়ে পানি ছিটানো হয়। এতে কিছুক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট সড়কে ধুলা নিবারণ হলেও পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর সড়কের ধারে পড়ে থাকা বালি ও মাটি আবারও ধুলা উড়তে থাকে।পরিবেশবাদীরা নগরীতে ধুলার উৎপাত কমাতে সড়কের ধারে বালি ও মাটি ফেলে রাখার প্রবণতা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কের পাশে থাকা মাটি ও বালুর কারণে নগরীতে ধুলা হচ্ছে। এগুলো যেন সড়কের পাশে পড়ে না থাকে, সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এর পাশাপাশি ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য নগরীর বড় সড়কগুলোতে সকাল-বিকাল পানি ছিটানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রাক দিয়ে ছিটানো পানিতে পুরোপুরি না হলেও নগরী তিন-চার ঘণ্টা ধুলামুক্ত থাকছে।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে মালিবাগ-মৌচাক সড়কের ওপর সারাক্ষণ মাটি ও বালি পড়ে থাকছে। মিরপুরের রূপনগর, ছয় নম্বর সেকশন, ১৪ নম্বর সেকশন, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর-বসিলা সড়ক, পুরনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরহাজীর বাগ, দোলাইরপাড়, পোস্তগোলা প্রভৃতি এলাকার প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। এসব কাজের সুবিধার্থে রাস্তা খুড়ে তোলা মাটি প্রধান সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ডিভাইডারের মাটি ধুলা উৎপাদনের প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। একটু জোরে বাতাস বইলে ডিভাইডারের মাটি উড়ে গিয়ে আশপাশের দোকানপাট নষ্ট করে দেয়। রাজধানী মার্কেটের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উৎসস্থল ঠিক না করায় ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে ধুলার উৎপাত সবচেয়ে বেশি।’ তিনি বলেন, ‘এখন তো আর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে না। তাহলে সিটি করপোরেশন ফ্লাইওভারের নিচের ডিভাইডার মেরামত করে না কেন? ধুলার উৎসস্থল মেরামত না করে শুধু পানি ছিটিয়ে কী লাভ?’
মিরহাজীর বাগের অলিগলি মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারের লোকজন বালি ও পাথর ফেলে রেখেছে সড়কের ওপর। যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে এ বালি বাতাসে উড়ছে। দয়াগঞ্জ মেথরপট্টির সামনের সড়কেও প্রায় সময়ই বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য আনা বালি ফেলে রাখা হয়। মাঝে মধ্যে সকালে সিটি করপোরেশনের ট্রাক দিয়ে এসব সড়কে পানি ছিটানো হলেও দেড়-দুই ঘণ্টা পর সেখানে আবারও ধুলা উড়তে থাকে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিএনসিসির লোকজন ট্রাক দিয়ে নিয়মিত পানি ছিটাচ্ছে। এর পাশাপাশি সড়কে যারা সংস্কার কাজ করছে সেইসব ঠিকাদারকেও কঠোর ভাষায় বলে দেওয়া হয়েছে, যাতে ধুলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধুলা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না করে শুধু পানি ছিটিয়ে লাভ হবে না। এতে কিছু সময়ের জন্য ধুলা দূর হতে পাবে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান হবে না।’ তিনি বলেন, ‘মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ধুলার জন্য চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে প্রতিটি নির্মাণ কাজের জন্য ধুলা নিয়ন্ত্রণের শর্ত জুড়ে দিতে হবে। এই শর্ত যেন কঠোরভাবে পালন করা হয়, তা দেখবে সিটি করপোরেশন।’
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৬:২৩ ৩১৮ বার পঠিত