বঙ্গ-নিউজঃ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সফররত ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝাং (ডানে) গতকাল ঢাকায় সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন l ছবি: প্রথম আলোউচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। এখন বেসরকারি বিনিয়োগ যা হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। কেননা, বিনিয়োগ হলো প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন। বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্যবসা করার পরিবেশ সহজ করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সফররত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝাং এ কথা বলেন। তাঁর সফর উপলক্ষে ঢাকার এডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিনিয়োগ বিষয়ে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝাংয়ের ব্যাখ্যা হলো বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকার নিচের দিকে আছে। ধীরে ধীরে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ২৫ বছরের মতো সময় পাবে। এ সময়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিপুল বিনিয়োগ দরকার।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, আঞ্চলিক যোগাযোগ, জ্বালানি খাত, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পল্লি অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে এডিবি সহায়তা করছে। এসব খাতে সহায়তার করার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন।
এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এডিবি বাংলাদেশকে ৮০০ কোটি ডলার দেবে। বাংলাদেশ নিজেদের উন্নয়নে যত বেশি প্রকল্প নেবে, তত বেশি এডিবির সহায়তা পাবে। এখন বছরে গড়ে ১২০ কোটি ডলার পায় বাংলাদেশ। যেহেতু পাঁচ বছরের জন্য ৮০০ কোটি ডলার বরাদ্দ আছে, তাই বাংলাদেশ বেশি বেশি প্রকল্প নিয়ে বছরওয়ারি এডিবির সহায়তাপ্রাপ্তি বৃদ্ধির সুযোগ নিতে পারে।
সম্প্রতি বিদেশিদের ওপর জঙ্গি হামলার কারণে এডিবি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়েনচাই ঝাং বলেন, ‘এসব প্রকল্পে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। শুধু এডিবির নয়, সব প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই যাঁরা ওই সব প্রকল্পে কাজ করেন, তাঁরা যেন নিরাপদে এবং আনন্দের সঙ্গে কাজ করেন। এটা বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থেই করতে হবে।’
বাংলাদেশের উন্নয়নের উদাহরণ টানতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সোনারগাঁও হোটেল থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় অনেক জ্যাম। রাস্তায় গাড়ি থাকার অর্থই হলো এখানে উন্নয়ন হচ্ছে। পরিবহন খাতেও বিপুল অবকাঠামো নির্মাণের চাহিদা তৈরির নির্দেশক এটা। সড়ক, রেল, বন্দর-এসব খাতে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।’
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ তৈরির উদ্যোগের প্রশংসা করে ওয়েনচাই ঝাং আরও বলেন, এডিবি বিবিআইএন যান চলাচল চুক্তি করতে সহায়তা করেছে। আঞ্চলিক যোগাযোগে সহায়তাকারী হিসেবে এডিবি নিজেদের ‘অনেস্ট ব্রোকার’ মনে করে। তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক যোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। আবার ইউরোপ ও এশিয়াকে সংযুক্ত করছে দক্ষিণ এশিয়া। এ ধরনের আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরে প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র বা গ্রোথ সেন্টার গড়ে উঠবে, বিনিয়োগ আসবে। এ জন্য আরও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা উচিত। তাই সামনের দিনগুলো বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, স্কুল ভবনগুলো বেশ সুন্দর। শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া সুবিধা আছে। বাংলাদেশকে এখন দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে গুরুত্ব দিতে হবে। দক্ষতা বাড়লে তা মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। আবার বিনিয়োগ বাড়লে দক্ষ কর্মী দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগুচিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩০:১৯ ৩৯০ বার পঠিত