বঙ্গনিউজঃ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তৈরি ‘ন্যানো স্যাটেলাইট’ মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা৷
বুধবার জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি (কেআইটি)-তে স্যাটেলাইটটি হস্তান্তর অনুষ্ঠান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়৷
ন্যানো স্যাটেলাইটটি জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির মাধ্যমে মার্চ মাসে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে৷ স্যাটেলাইটটির নকশা তৈরি থেকে শুরু করে এর চূড়ান্ত কাঠামো তৈরির কাজ করেছেন ব্র্যাক বিশ্বদ্যিালয়ের তিন শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মানোয়ার৷
বিভিন্ন গণমাধ্যম এই সংবাদটি প্রকাশ করেছে৷
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘‘ন্যানো স্যাটেলাইটটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করবে এবং এটি পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে ৯০ মিনিট সময় লাগবে৷ এটি ১৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে আর বাংলাদেশকে প্রদক্ষিণ করবে ৪ থেকে ৫ বার৷’’
এই তিন তরুণ শিক্ষার্থী এখন শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন৷ মোস্তফা কে মোল্লা ফেসবুকে বাংলাদেশি এই তিন শিক্ষার্থী এবং তাঁদের পুরো দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
শেখ রুমি ইসলাম ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘রায়হানা শামস ইসলাম (ফেসবুকে অন্তরা অন্ত), আবদুল্লা হিল কাফি (এএইচকে কাফি) ও মাইসুন ইবনে মানোয়ার ইতিহাস গড়েছে৷ আমরা সবাই আপনাদের জন্য গর্বিত৷’’
ফেসবুকে অন্তরা অন্ত নামে পরিচিত রায়হানা শামস ইসলাম তাঁর কাজের পেছনে নিজের সাংবাদিক বোন মৌসুমি ইসলামের উৎসাহের কথা লিখেছেন৷ এছাড়া তিনি লিখেছেন, ‘‘মহাকাশে বাংলাদেশের অস্তিত্ব জানিয়ে দেবে আমাদের৷ বাংলাদেশিদের নিজেদের তৈরি স্যাটেলাইট৷ আশা করি, এই যাত্রায় পাশে পাবো সবাইকে, দোয়া করবেন৷’’
নিলাদ্রী অধিকারী টুইটারে খবরটি শেয়ার করেছেন৷
আহমেদ রাইসুস সালেহিন মারুফ ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশ ন্যানো স্যাটেলাইটের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে৷ বেশিদিন না, হয়তো একদিন বাংলাদেশিদের তৈরি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটের সব ডাটা সংগ্রহ করা হবে৷ শুভকামনা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরির কাজে থাকা সংশ্লিষ্ট মানুষজন৷ শুভকামনাটা একটু বেশি প্রাপ্য মাইসুন ভাই, অন্তরা আপু, কাফি ভাইদের - যারা দেশের হাওয়া বাতাস ছেড়ে সুদূর জাপানে রাতের ঘুম হারাম করে, ঈদের আনন্দ মাটি করে ‘বাংলাদেশ’ নামক দেশটার অর্জনের পাল্লাটা আরও একটু ভারি করছেন৷’’
এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন লিখেছেন, ‘‘এটুকু নিঃসন্দেহে বলা যায়, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে কাজ করার জন্য আগ্রহের শেষ নেই৷ তাদের দরকার একটু পৃষ্ঠপোষকতা আর গবেষণার সুযোগের৷ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এই প্রচেষ্টা সত্যিই অনেক আনন্দের বিষয়৷ ব্যাপারটা যে এত সহজ না সেটা অনেকেই জানেন৷ বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই খলিলুর রহমান স্যারকে৷আর যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রজেক্টটা দাঁড়িয়েছে তাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন৷ আশা করি, তোমাদের এই নতুন অভিজ্ঞতা আর ইচ্ছের উপর ভর করে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণায় আরো অনেকটা পথ এগিয়ে যাবে৷’’
উজ্জ্বল সরকার লিখেছেন, ‘‘আজ অনেক স্বপ্নই আর স্বপ্ন নয়৷ আমরা আজ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে অনেক দূরের স্বপ্নকে বাস্তবতার কাছে নিতে চাই৷ অভিনন্দন৷’’
গবেষণা কাজে জড়িত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ কে এইচ কাফি লিখেছেন, ‘‘২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে আসি জাপানে ৷ বুকে ছিল ন্যানো-স্যাটেলাইট তৈরির স্বপ্ন৷ আমরা তিন জন অন্তরা, আমি আর মাইসুন দিন রাত পরিশ্রম করেছি, খাওয়া-দাওয়া কোনো কিছুর ঠিক ছিল না৷ শুধু চিন্তা স্যাটেলাইট বানানো৷ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারলে সেটি হবে দেশের জন্য একটি বড় কাজ, প্রথম কাজ৷ শুরু হবে মহাকাশ গবেষণায় পথচলা৷ সময় কেটেছে উৎকণ্ঠায়৷ কখন স্যাটেলাইট এর মুখ দেখব৷ আমাদের কাজ হলো স্যাটেলাইট তৈরি করে JAXA এর কাছে হস্তান্তর৷
বাংলাদেশ সময়: ০:৩১:৫৩ ৩০৩ বার পঠিত