বঙ্গনিউজঃ নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে পথ চলবে— এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা সাথী ছিলেন, মুক্তির সংগ্রামে যারা যারা অংশ নিয়েছিলেন, একে একে তাদের সবাইকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। নতুন যারা আছেন তারা এসব বর্ষীয়ান নেতাদের অনুসরণ করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নেবেন। আমাদের সময় হলে চলে যেতে হবে। কিন্তু দেশ নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, নতুনদের মধ্যে সে চেষ্টা থাকতে হবে।
জাতীয় সংসদে সিনিয়র সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের পর দীর্ঘ আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্মরণে বৈঠকে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। চলতি সংসদের সংসদ সদস্য মারা যাওয়ায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে স্মরণ করে সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সংসদে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন, তাদের একে একে হারাতে হচ্ছে। আমার জন্য এটা সত্যিই কষ্টকর। অনেক সংগ্রামের পথ হেঁটে আমরা গণতন্ত্রকে একটা জায়গায় দাঁড় করাতে পেরেছি। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম করেছি, সেই অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি।’
সুরঞ্জিত সেনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা স্মরণ করে সংসদ নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা একসাথে আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী।’
বক্তব্যে এরশাদ আমলে সুরঞ্জিত সেনের গ্রেফতার হওয়া, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তার আহত হওয়ার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসব নির্যাতন, হয়রানির শিকার হওয়া ছাড়াও বাহাত্তরের সংবিধান রচনাসহ দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ চলে যায়, তার কীর্তি ও কথা থেকে যায়। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট কথার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। যেকোনও কঠিন বিষয় নিয়ে হেসে কথা বলতে পারতেন। কঠিন কথাকে হাস্যরস দিয়ে সহজভাবে তুলে ধরতে পারতেন।’
সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা কখনও পূরণ হবে কিনা জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাখির পালকের মত হালকা। একেবারে বাতাসের সঙ্গে উড়ে যায়। আর কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাহাড়ের মত ভারী। একেবারে জগদ্দল পাথরের মতো আমাদের বুকের ওপর ভারি হয়ে থাকে। সুরঞ্জিত সেনের মৃত্যু ঠিক তেমনই আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে।’
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কর্নেল (অব.) শওকত আলী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, আবদুল মতিন খসরু, সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫১:০১ ৩৬০ বার পঠিত