বঙ্গ-নিউজঃদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন ওয়াং কি। তার জীবনের সবচেয়ে বড় ‘অপরাধ’টা হয়ে গিয়েছিলো তখনই। পরিবারের অনটন দূর করার প্রত্যয়ে করেছিলেন পড়ালেখা। চাকরি পেয়েছিলেন চীনের সেনা- সার্ভেয়র হিসেবে। কিন্তু তার জীবন পথ হারিয়ে ১৯৬৩ সালে ঢুকে পড়ে ভারতে। আর কোনো দিন চীনে ফিরতে পারেননি হতভাগা ওয়াং।
ভারতে আটকে পড়ার ৫০ বছরেরও বেশি সময় চীনে নিজের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান ওয়াং কি।
সুদীর্ঘ অর্থ শতাব্দীতে হাজার হাজার বার চীনে ফেরার চেষ্টা করেছেন ওয়াং। কিন্তু ভাগ্য তাকে চীনের পথটা আর পেতে দেয়নি। একে একে চলে গেছে দিন। পেরিয়ে সপ্তাহ। ফুরিয়েছে মাস, বছর, দশক ও যুগ। কিন্তু ভারত থেকে আর ফিরতেই পারেননি তিনি।
১৯৬৩ সালে ভারতের সঙ্গে লাগোয়া সীমান্ত এলাকায় চীনা সেনাবাহিনীর হয়ে সার্ভে করছিলেন ওয়াং। হঠাৎ নিজের ক্যাম্পের পথ হারিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েন তিনি। দীর্ঘ পথ হেঁটের নিজের ক্যাম্প খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন ওয়াং। হয়ে পড়েন ক্ষুধার্ত। রেড ক্রসের একটি গাড়ি দেখে সাহায্য চান তিনি। কিন্তু সাহায্যের বদলে রেডক্রস তাকে ধরে তুলে ভারতীয় সেনাদের হাতে।
এরপরই শুরু হয় দেশে ফেরার জন্য তার ‘প্রায়’ অন্তহীন ও যন্ত্রণাময় অপেক্ষা। ভারতে আটকে পড়ার ৪০ বছর মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ হয় ওয়াংয়ের। তখন তার মা বলছিলেন যে, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মৃত্যুর আগে একবার তাকে দেখতে চান।
১৯৬৩ সালে ২১ বছর বয়সে ভারতে আটকে যাবার পর আর কোনোদিন নিজের মাকে দেখতে পারেননি ওয়াং। ২০০৬ সালে তার মা মারা যান।
কিন্তু ওয়াং তার মায়ের মৃত্যুর আগে চীনে ফিরে যেতে পারেননি। ২০০৬ সালে ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে মারা ওয়াংয়ের মা। মায়ের মৃত্যুর খবরটাও অনেক বছর পরে পান ওয়াং।
এর মধ্যে ভারতের নাগরিকত্ব নেয়ার চেষ্টাও করেন তিনি। কিন্তু তাকে তা দেয়া হয়নি। চীনে ফেরত যাওয়ারও অনুমতি মিলেনি ওয়াংয়ের। দুঃসহ এক যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে যান তিনি। শুরুর দিকে কয়েক বছর জেলে বন্দি থাকার পর মধ্য প্রদেশের তিরোদি নামক এক গ্রামে জায়গা হয় ওয়াংয়ের।
সেখানকার মানুষদের সঙ্গে এক সময় সখ্য গড়ে উঠে তার। ১৯৭৫ সালে লোকজন ‘জোর করে’ বিয়েও করিয়ে দেয় ওয়াংকে। তার স্ত্রীর নাম সুশিলা। স্বামীর বিষয়ে সুশিলা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘একজন বিদেশির সঙ্গে বিয়ে দেয়ায় আমি আমার বাবা- মার প্রতি খুব রেগে গিয়েছিলাম। কারণ আমি ওর কথা বুঝতাম না। ধীরে ধীরে ওর সঙ্গে অবশ্য মানিয়ে নিতে পেরেছি।’
জীবনের নানা দুর্বিপাকের মধ্যেও ভারতেই একটা সংসার হয়ে গেছে ওয়াংয়ের। যে সংসারে থেকে তিনি তার দুঃসহ জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছেন।
বিয়ের পর তিরোদিতেই ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিলেন ওয়াং। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের কারণে তিনি তা পারেননি। পুলিশ তার কাছে ঘুষ চেয়েছিলো। কিন্তু সৎ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ওয়াং ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ জন্য পুলিশের মারও খেতে হয় তাকে।
২০০৯ সালে ওয়াংয়ের এক ভাতিজা ভারত সফরে এসে তার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে একটি চীনা পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করেন। তারপরও এখনো এটা স্পষ্ট নয় যে, ওয়াং কি কখনো চীনে ফিরে যাবেন নাকি তার বাকি জীবনটা ভারতেই কাটিয়ে দিবেন।
ওয়াং বলছেন, ‘কোথায় আর যাবো! এখানেই তো এখন আমার পরিবার হয়ে গেছে।’ ওয়াং যদি চীনে যান তিনি কি আর তার দুঃসহ স্মৃতির জায়গা— ভারতে ফিরবেন? তার স্ত্রী সুশিলা আশা করছেন, ওয়াং ঠিকই ফিরবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৬:৪০ ২৯৪ বার পঠিত