বঙ্গ নিউজঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। হাতীবান্ধা থানা প্রতিনিধি :প্রতিদিন জানালার ফাঁক দিয়ে স্কুলের ভবনের দেয়ালের কোনে তাকিয়ে থাকে খুদে শিক্ষার্থীরা। লক্ষ্যটা নীরব নিস্তব্ধ দেয়াল দেখা নয়, দেয়ালের কোনে বড় করে বাসা বাঁধা একটা মৌমাছির চাকের দিকে তাদের দৃষ্টি। মৌমাছির আতঙ্কে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
সেখানে বড় বড় মৌমাছির সঙ্গে অনেক ছোট মৌমাছিও উড়ে বেড়ায়। ক’দিন আগেও যে দৃশ্যটা চোখে পড়তো না, তা আজ হঠাৎ চোখের সামনে ধরা দিলো এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের। ফুটফুটে রঙিন মৌমাছিগুলো চাকের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। ঠিক এভাবে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মৌমাছির বাস। সারাক্ষণ উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। তবুও তাদের তাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই।
মৌমাছির সঙ্গে ক্ষুদে শিক্ষার্থীর এমন উৎকণ্ঠার দৃশ্য দেখা গেছে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তর্বতী কালীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মৌমাছি চাক বেঁধেছে ভবনের চারদিকে। ভো ভো শব্দে মুখোরিত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে মৌমাছির স্কুল। বিদ্যালয় চলাকালীন মৌমাছির আক্রমণের শিকার হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ ৩০ শিক্ষার্থী। তবুও এই মৌচাক কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে এ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের দেয়ালে ৩০টি মৌমাছির চাক বাসা বেঁধেছে। মৌচাকের কারণে বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা বন্ধ করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। মৌমাছির আক্রমণের ভয়ে এ পদ্ধতি অবলম্বন করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন মাস ধরে মৌমাছির সঙ্গে ক্লাস করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক কোমলমতি ক্ষুদে শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা মৌমাছির ভয়ে দরজা জানালা লাগিয়ে ক্লাস করছেন। কিন্তু তাদের অনেকেরই দৃষ্টি ওই মৌমাছির চাকের দিকে। আবার ক্লাস শেষে অনেক শিক্ষার্থী নীরবে দাঁড়িয়ে দেখছে মৌমাছির মৌচাক। দেখতে বাধা নেই তবে নাড়া দিলেই এসব মৌমাছি শত্রুতার খেলায় মেতে ওঠে।
স্কুল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমন মৌচাক দেখে ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। প্রতি বছর এ মৌসুমে বিদ্যালয়ের ভবনে মৌমাছি বাসা বাঁধে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রচুর মৌচাক দেখা গেছে। দিন দিন মৌমাছির সংখ্য বাড়ছে। মৌমাছি নিধনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা হতাশা প্রকাশ করছেন।
কালীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র রাহাদ ইসলাম বলেন, মৌমাছি থাকায় ভালোই লাগে। কিন্তু প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হয়। তবে দূর থেকে দেখতে বাধা নেই। নাড়া পেলেই তারা কামড়ানো শুরু করে।
কালীরহাট গ্রামের দোলী মুহাম্মদ (৪৫) বলেন, মৌমাছির কারণে বাড়িতে থাকতে পাচ্ছি না। বাজপাখির দল মধু খেতে মৌচাকে এলে মৌমাছি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তখন সবাইকে কামড়ে অস্থির করে তুলে।
স্থানীয় অভিভাবক সুজন মিয়া জানান, স্কুল ভবনে অসংখ্য মৌচাক বাসা বাধায় বর্তমানে সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছি না। কারণ ভয়ে ভয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হয়। যেকোনো সময় বিপদ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে কালীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নুরল ইসলাম বলেন, মৌমাছির বিষয়ে আমরা উপজেলা পর্যায়ে সবাইকে অবগত করেছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেন জানিয়েছেন।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফিরোজুল আলম বলেন, মৌমাছির বিষয়টি উপজেলা নির্বার্হী কর্মকতাকে জানানো হয়েছে। মৌমাছি নিধনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৭:০৮ ৪১৪ বার পঠিত