যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সীমান্ত শুল্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে পোশাক শিল্প আরও বেশি শুল্ক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প যে সব বড় পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, তার মধ্যে সীমান্ত শুল্ক পরিকল্পনা বা ‘বর্ডার ট্যাক্স’ একটি৷ আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ সীমান্ত শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন তিনি৷ ট্রাম্পের দাবি, এর মধ্য দিয়ে অসম বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি বাজারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে৷
এ পরিকল্পনার আওতায় যেসব কোম্পানি পণ্য আমদানি করবে, তাদের সীমান্তে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে৷ কাজেই ২০ জানুয়ারি শপথ নেয়ার পর ট্রাম্প যদি প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করেন, তাহলে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জন্যও হবে খারাপ সংবাদ৷ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমস-এর খবরে বলা হয়, ‘ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্কের কষাঘাত হানবেন কিনা অথবা অফশোর (বেনামি কাগুজে) কোম্পানিগুলোকেই নিশানা বানাবেন, সে ব্যাপারেই এখনও বেশিরভাগ আলোচনা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে৷ তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সীমান্ত শুল্ক অনুমোদনের প্রস্তাব মার্কিন আমদানি খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷’
ফিন্যানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে হংকং-এর এইচএসবিসি-র অর্থনৈতিক গবেষণার সহ-প্রধান ফ্রেডেরিক নিউম্যানকে উদ্ধৃত করা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এটা এশিয়ার জন্য বড় একটা ইস্যু৷ এ ঘটনার মধ্য দিয়ে অন্য দেশগুলোর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠবে৷”
বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মানসুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যদি শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবিত সীমান্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে অন্য দেশগুলের মতো আমরাও ভুক্তভোগী হবো৷ তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি এটা আমাদের জন্যও বাজে একটি খবর হবে৷”
তিনি বলেন, ‘‘একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশই যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে৷ এর জন্য বাংলাদেশকে এখন ১৫ ভাগের মতো শুল্ক দিতে হয়৷ কিন্তু তখন শুল্ক দিতে হবে ৪০ ভাগ৷ শুধু পোশাক নয়, যুক্তরাষ্ট্রে অন্য যেসব পণ্য রপ্তানি হয় সেসব ক্ষেত্রেও এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷”
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি সিদ্দিকুর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘যদি প্রস্তাবিত সীমান্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান হারাবো৷”
বর্তমানে মার্কিন খুচরা বিক্রেতাদের বাংলাদেশ থেকে পোশাক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়৷ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তার ৯৫ ভাগই পোশাক পণ্য৷ যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিকারকদেরকে চীন থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ, তুরস্ক থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়৷
সেই দিক থেকে তুলনা করলে এখনই বাংলাদেশি পোশাকের ওপর শুল্ক অনেক বেশি৷ তাই সীমান্ত শুল্ক অনেক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে৷ অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে যাবে বাংলাদেশ৷ তবে আহসান এইচ মানসুর মনে করেন, ‘‘এ নিয়ে বাংলাদেশের দেন দরবার করার হয়ত সুযোগ আছে৷ বিশেষ করে গরিব দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সীমান্ত শুল্কের বিরুদ্ধে তার যুক্তি তুলে ধরতে পারে৷” সূত্র: ডয়চে ভেলে
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫৯:৪০ ৩০৮ বার পঠিত