শীত আর অপুষ্টিতে বাড়ছে শিশুরোগের প্রকোপ
শীতকালে বেশ কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। জ্বর কিংবা সর্দি-কাশিতে ভুগলেও বড়রা অনেক সময় তা সামলে নিতে পারেন। তবে এসব রোগ থেকেই শিশুদের শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন জটিলতা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মূলত অপুষ্টি থেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় শিশুদের। আর তার ফলে ঘন ঘন অসুখে আক্রান্ত হয় তারা। শীতকালে বেড়ে যায় শিশুদের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। তাই শীতের সময়ে শিশুদের বাড়তি যত্ন নিয়ে রোগ প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
গত শনিবার (১৪ জানুয়ারি) গাজীপুর থেকে এসে মেয়ে আরিফাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন আয়েশা। মাত্র দু’মাসের শিশুটি প্রচণ্ড জ্বর আর সর্দি-কাশিতে ভুগছে। রবিবার আয়েশা বলেন, ‘মেয়ের কপালে হাত দেওয়া যায় না, এতো জ্বর। খালি কাঁদে, তবে এখানে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এখন জ্বর একটু কম, কাশিও কমেছে।’
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে রাবেয়া এসেছেন ১৩ মাস বয়সী ছেলে তাহমীদ আলীকে নিয়ে। শিশু হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে থাকা রাবেয়া বলেন, ‘শুনেছি শীতের সময়ে বাচ্চাদের রোগ একটু বেড়ে যায়। এই সময়ে বাবা-মাকে সতর্ক থাকতে হয়, বিশেষ করে যাদের বাচ্চা একেবারে ছোট। আমিও সতর্ক ছিলাম, কিন্তু অসুখটা হয়েই গেলো। তবে এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমার ছেলের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, যদিও সে খুব কষ্ট পাচ্ছে।’
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন অসুখে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি। একই অবস্থা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। সেখানে ঠাণ্ডাজনিত অসুখ নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে বেশি। গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে জ্বর, সর্দি-কাশি, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছরের শুরু থেকেই শিশুদের ভর্তির সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন বর্হিবিভাগ ও জরুরি বিভাগ মিলিয়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালটিতে। গত ১০ জানুয়ারি ১১০, ১১ জানুয়ারি ১২৩, ১২ জানুয়ারি ৮৯, ১৩ জানুয়ারি ৫৭ এবং ১৪ জানুয়ারি ৫৭ জন শিশু ভর্তি হয় শিশু হাসপাতালে। তাদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক অধ্যাপক ডা. হোসেন শহীদ কামরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বছরের এই সময়ে শিশু হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়ে যায়। কারণ শীতকালে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের সম্ভাবনা যেমন বেড়ে যায়, তেমনি কমে যায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই এই সময়ে শিশুদের নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।’
রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর ওপরে জোর দিচ্ছেন ডা. কামরুল আলম । তিনি বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে জন্মের পরপরই শিশুকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে, ব্রেস্ট ফিডিং করাতে হবে। এ কারণেই সরকার ছয়মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি ঘোষণা করেছে। ব্রেস্ট ফিডিং করালে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি হবে না। পাশাপাশি বয়স অনুযায়ী, শক্ত খাবারও দিতে হবে তাকে। এছাড়া নিয়মিত টিকার পাশাপাশি নিউমোনিয়ার টিকাও দিতে হবে।’
শীতকালে শিশুকে সুস্থ রাখতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা শিশু নবজাতক ও জেনারেল হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ খালেদ নূর। তিনি বলেন, ‘ভোর ও সন্ধ্যার ঠাণ্ডা বাতাস থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। ওই দুই সময়ের বাতাস শিশুর ঠাণ্ডা লাগার অন্যতম কারণ। প্রতিদিন শিশুকে গোসল করালেও পানি কুসুম গরম করে নিলে ভালো। তাকে ঘরের মধ্যেও জুতা পরিয়ে রাখতে হবে, যেন পায়ের তলায় ঠাণ্ডা না লাগে। রাতে নরম ও মোটা কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, শিশুর পরনের কাপড় যেন টাইট না হয়।’ সেই সঙ্গে শিশুকে ধুলাবালি থেকে দূরে রাখা এবং ঠাণ্ডা পানি ও আইসক্রিম খেতে না দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৬:৩২ ৪৫৯ বার পঠিত