বঙ্গ-নিউজঃ নাল্ড ট্রাম্পমার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে অভিষেক হচ্ছে তার। নির্বাচিত হওয়ার পর ১১ জানুয়ারি বুধবার নিউ ইয়র্কে নিজ কার্যালয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর এতেই মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন এক ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিক। এমনকি সংবাদমাধ্যমটি ‘ভুয়া খবর’ প্রকাশ করে দাবি করে তাদের প্রতিনিধিকে কোনও প্রশ্ন করারও সুযোগ দেননি ট্রাম্প। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে ঠিক কি কারণে সিএনএন-এর মতো একটি প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের ওপর এভাবে চড়াও হলেন ট্রাম্প? সিএনএন-এর খবরে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসায় সংবাদমাধ্যমটির প্রতি এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিলেন ট্রাম্প। এই ক্ষোভেরই হয়তো বিস্ফোরণ ঘটেছে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ৫৮তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রচারণা থেকে শুরু করে বুধবারের সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত সামগ্রিক বিষয়ে যারা নজর রেখেছেন তাদের কাছে অবশ্য ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বাচনভঙ্গি নতুন কিছু নয়। নির্বাচনি প্রচারণায় অভিবাসী ও মুসলিমরা বরাবরই ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বাক্যবাণে জর্জরিত হয়েছেন। আর ভিন্নমতের সংবাদমাধ্যমের প্রতি শুরু থেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছেন ট্রাম্প। নির্বাচনি প্রচারণায় ফক্স নিউজ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার প্রায় সব সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেই কমবেশি অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন ট্রাম্প।
মঙ্গলবার সিএনএন-এর খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন যাতে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের বিষয়টি উঠে এসেছে। সংবাদমাধ্যমটিতে এ খবর প্রচারিত হওয়ার পর একে ‘মিথ্যা ও ভুয়া’ খবর হিসেবে আখ্যায়িত করে টুইট করেন ট্রাম্প। সংবাদ সম্মেলনেও ওই টুইটের পুনরাবৃত্তি করেন তিনি।
রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের ৩৫ পৃষ্ঠার দলিল মূলত প্রকাশ করে আরেক সংবাদমাধ্যম বাজফিড। ট্রাম্প বাজফিডকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তাদেরকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। অবশ্য তারা এখনই পরিণতি ভোগ করে চলেছে।
ট্রাম্পের বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রায় ২৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সিএনএন-এর হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি ট্রাম্পকে প্রশ্ন করার জন্য অনুমতি চান। তিনি বলেন, আমাদের সংবাদমাধ্যমকে যখন আপনি আক্রমণ করে যাচ্ছেন, সেখানে আমাদের কি একটি প্রশ্ন করার সুযোগ দেবেন?
এর জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আপনাদের সুযোগ দেব না। না, আমি আপনাদের কোনও প্রশ্ন করতে দেব না। আপনাদের খবর ভুয়া।
ট্রাম্পের এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্য অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছে সিএনএন। নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সিএনএন দাবি করেছে, সূত্রের বরাতে পাওয়া খবর প্রকাশে তারা সবসময়ই সতর্ক এবং নিজেদের প্রতিবেদনের ব্যাপারে তাদের পুরো আত্মবিশ্বাস রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে প্রচারিত খবর এবং এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তার বৈঠকের ঘটনা ফাঁস হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ট্রাম্প। এ ধরনের খবর প্রকাশকে তিনি নাৎসি জার্মানির সঙ্গেও তুলনা করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয় এটা ছিল লজ্জার, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাতে প্রকাশিত খবর মিথ্যা এবং ভুয়া। এটা এমন লজ্জাকর যে এ ধরনের কিছু শুধু জার্মানির নাৎসিরাই করত।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির হ্যাকিংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে অবিচল থাকার কথাও জানান তিনি। ট্রাম্প বলেন, পুতিন (রুশ প্রেসিডেন্ট) যদি আমাকে পছন্দ করেন তাহলে এটা কোনও দায় নয়, এটা সম্পদ।
ট্রাম্প জানান, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় এখন তার ব্যবসা দুই ছেলেই দেখবেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ হবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই ভিন্নমতের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি নিজের ক্ষোভের জানান দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরই নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ট্রাম্প। এতে সিএনএন, এনবিসি, সিবিএস নিউজ, ফক্স নিউজ, এমএসএনবিসি, এবিসিসহ বেশকটি গুরুত্বপূর্ণ টিভি চ্যানেলের কর্মকর্তা এবং জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপকরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের শুরুতেই ট্রাম্প সিএনএন ও এনবিসি চ্যানেলে তাকে নিয়ে প্রচারিত খবরের কঠোর সমালোচনা করেন। এসব সংবাদমাধ্যমের খবরকে তিনি অসত্য ও পক্ষপাতমূলক হিসেবে অবহিত করেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, সিএনএন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১০:২৪ ৪২৭ বার পঠিত