বঙ্গ-নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন চুক্তি অগ্রাধিকার পাবে বলে জানা গেছে। পানি বণ্টন ইস্যুতে ভারতের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় এ চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশও আশাবাদী। তবে পানি বণ্টন চুক্তি না করা হলে, বাংলাদেশ সবসময়ই বঞ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে মাত্র একটি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আমরা চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছি। ১৯৯৬ সালে দুদেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা চুক্তি সই হয়। ১০ বছর পরে এটিও শেষ হবে। তার আগে পানি ভাগাভাগির চুক্তি নবায়নের জন্য আমাদের আবারও আলোচনা করতে হবে।’
তিনি জানান, তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের জন্য চুক্তির বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আশা দেওয়া হচ্ছে। গত ৪ জানুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর বাংলাদেশ বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার সফরের সময়ে তিস্তা নদীন পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সরকার পশ্চিমবঙ্গসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করছে। আশা করা যাচ্ছে এ চুক্তি হবে।’ এটি তাদের কোনও ক্যাজুয়াল বক্তব্য নয় বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
জরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভারতকে এ কথা বলার জন্য বলিনি। তারা নিজে থেকে একথা বলেছে। আমরা এটিকে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছি।’ দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহের কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং এ মুহূর্তে যদি কিছু করা সম্ভব না হয় তবে আমরা এটি বিরাট বড় সুযোগ হারাবো।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ে তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যান্দোপাধ্যায়ের চরম আপত্তির কারণে এটি স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভাটির দেশ। তাই সবগুলো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তির হওয়াটা বাংলাদেশের জন্য জরুরি। কারণ পানির প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশেও বাড়ছে এবং ভারতেও বাড়ছে। সেই তুলনায় নদীর প্রবাহ বিভিন্ন কারণে কমে যাচ্ছে। আমরা যদি চুক্তির মাধ্যমে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন করতে না পারি তবে আমরা সবসময়ে বঞ্চিত হতে থাকবো।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তা ও ফেনী নদীর চুক্তি চূড়ান্ত করা আছে। বাকি ছয়টি নদী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদান করা হয়েছে। নদীগুলোর নাম মনু, মুহুরি, গোমতি, খোয়াই, ধরলা ও দুধকুমার।’
তিনি বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি হলে এ ছয়টি নদীর চুক্তি করা অনেক সহজ হবে। কারণ এ নদীগুলোর বিষয়ে চুক্তি করতে অনেক অগ্রগতি হয়ে আছে। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম চলছে কিন্তু এ বছরে তিস্তার পানি প্রবাহ ভালো। গত একটি মৌসুম খুব খারাপ গেছে কিন্তু এ বছরটি ভালো।’
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বণ্টন ইস্যুতে তিনি বলেন বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পানি বণ্টন নিয়ে আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা করছি। বাংলাদেশের মোট পানি প্রবাহের ৬০ শতাংশ প্রবাহিত হয় ব্রহ্মপুত্র দিয়ে। এটিকে উপেক্ষা করার কোনও উপায় নেই। এই নদীতে ভারত এখনও কোনও স্থাপনা তৈরি করেনি বা এর পানি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়নি। এ কারণে এটি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আমাদের অগ্রাধিকার পেয়েছে গঙ্গা ও তিস্তা যেখান থেকে ভারত তাদের পানি অন্যদিকে ব্যারাজের মাধ্যমে সরিয়ে নিচ্ছে।’
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৫:২০ ৩৯২ বার পঠিত