বঙ্গ-নিউজঃ 1“`ফলাফল পাওয়ার পর সহপাঠীদের সঙ্গে বাছিরন নেছামেহেরপুরের বাছিরন নেছার বয়স ৬৫ বছর। সাধারণ হিসাবে বয়সটা অবসরের। অথচ এই বয়সে বই-খাতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছেন তিনি। এ বয়সে নাতি-নাতনিদের সহচর্যে গল্প-খেলায় সময় কাটানোর কথা তার। তিনি সময় কাটাচ্ছেনও নাতি-নাতনিদের বয়সীদের সঙ্গেই। তবে সেটা পড়ালেখার জন্য। বার্ধক্যে এসে বাছিরন নেছা অংশ নিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায়। তাতে পাস করে সবাইকে চমকেও দিয়েছেন তিনি।
বাছিরন নেছা হোগলবাড়ীয়া পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেন। আর এই পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন জিপিএ ৩.০ পেয়ে। এই পরীক্ষায় তার স্কুল থেকে অংশ নেওয়া ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনিই সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছেন। তাতে স্কুলের শিক্ষকরা তো বটেই, স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ও রাজনৈতিক নেতারাও শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন জানিয়েছেন বাছিরন নেসাকে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হোগলবাড়ীয়া গ্রামের মৃত রহিল উদ্দীনের স্ত্রী বাছিরন নেছা। পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি গোটা এলাকায় সাড়া ফেলে দেন। ওই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার জন্য তাই বাছিরনের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উৎসুক হয়ে ছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) ফল ঘোষণার দিক বেলা ১১টার আগেই বাছিরন পৌঁছান স্কুলে। অপেক্ষা করতে থাকেন ফলাফলের। শেষ পর্যন্ত দুপুর আড়াইটার দিকে জানতে পারেন, উত্তীর্ণ হয়েছেন পিইসি পরীক্ষায়। শুধু তাই নয়, নাতি-নাতনিদের বয়সী সহপাঠীদের পেছনে ফেলে স্কুলের মধ্যে প্রথমও হয়েছেন।
বাছিরন নেছাকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা আখতার বানুবাছিরনের এই ফলাফলে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। স্কুলে উপস্থিত সবার মধ্যে বিতরণ করা হয় মিষ্টি। ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শন করে সহপাঠী ও স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনন্দও প্রকাশ করেন বাছিরন। এই ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় বাছিরন নেছা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাশ করার মধ্যে যে এত মজা তা আগে বুঝিনি। এর জন্য শিক্ষক, সহপাঠী ও পরিবারের সদস্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’ যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাছিরন।
বাছিরনের পিইসি পরীক্ষার ফলাফল জানতে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা আখতার বানু। তিনি ইচ্ছাশক্তির কাছে বয়স কোনও বাঁধা নয়। তা আবারও প্রমাণ করলেন বাছিরন। আমার এই এলাকায় এমন একজন বয়োবৃদ্ধ লেখাপড়া করে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন, এজন্য আমি নিজেও গর্বিত।’ বাছিরন দেশের এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছেন বাছিরন নেছাবাছিরনের ফলাফলে অত্যন্ত খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। হোগলবাড়ীয়া পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনার কলি বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বাছিরনকে লেখাপড়া করাচ্ছি। তিনি আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফলাফল করবেন।’ এই ফলাফলে তিনি গর্বিত বলে জানান তিনি।
বাছিরন নেছাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে তার বাড়িতে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান ও মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদও গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০:৫৯:৪২ ৪৯৪ বার পঠিত