বঙ্গ-নিউজ: সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়াতে যাচ্ছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের বর্ধিত দাম কার্যকর হবে।বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুল হক জানান, গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণের বিষয়ে তারা সরকারের সম্মতি পেয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম নির্ধারণে হিসাব শেষ পর্যায়ে। যেকোনো দিন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। দাম যতটাই বাড়ানো হোক, তার প্রধান কারণ গ্যাসের দামের ওপর থেকে সরকারের শুল্ক ও কর সংগ্রহের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি।
এ সম্পর্কে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এস এম শামসুল আলম বলেন, ১৯৯৮ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে ৫৫ শতাংশ রাজস্ব (৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ মূসক) না নিয়ে গ্যাস খাত পরিচালনায় তা ব্যয় করার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে এসআরও (২২৭ নম্বর) জারি করেছিল, এখন তার অন্যথা করা জনস্বার্থের অনুকূল নয়।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা আরো বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য বাড়তি যে অর্থ সংস্থাগুলোর প্রয়োজন, তার সংস্থান তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়েই করা সম্ভব। গ্যাস খাতের প্রতিটি কোম্পানির হাতে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে, যা এ খাতের উন্নয়নের কোনো কাজে লাগছে না। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
এদিকে সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংকট দূর করতে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের সংকট তীব্র হচ্ছে। এই সংকট দূর করার ব্যাপারে তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো আশার কথা শোনাতে পারেননি। তারা বলেছেন, সমাধানের চেষ্টা করছেন। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের এই সংকটের মধ্যে বাড়তি পাওনা হতে চলেছে মূল্যবৃদ্ধি।
বিইআরসির সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছিল, গ্যাসের দাম গড়ে ৯০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর। কিন্তু গণশুনানির সময় তা কমিয়ে ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর সংশোধিত প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাবের ওপর শুনানিতে অনেক বিষয় উঠে আসে, যাতে ৬৫ শতাংশ দাম বাড়ানোরও যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়নি। কাজেই ওই প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়ছে না। তখন আবাসিকে ২ চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা, ১ চুলার জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা, আবাসিকে মিটারযুক্ত গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের বর্তমান দাম ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৩২ শতাংশ, সারে প্রায় ৩৬ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, শিল্পে প্রায় ৫৬ শতাংশ, বাণিজ্যে ৬৭ শতাংশ, চা-বাগানে ৬৮ শতাংশ ও সিএনজিতে ৪৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়।
এর আগে গত বছরের (২০১৫ সাল) ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন ২ চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ এবং ১ চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। এ ছাড়া সব গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারি।
শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পেট্রোবাংলাসহ গ্যাস বিক্রেতা সরকারি কোম্পানিগুলো প্রায় প্রতিটিই লাভজনক।
পেট্রোবাংলার তহবিলে ২৫ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। তাই গ্যাসের দাম বর্তমানে বাড়ানো যৌক্তিক হবে না। এতে সার্বিক অর্থনীতি ও জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩২:১০ ৪৩০ বার পঠিত