আমি বাংলাদেশ বলছি -নবনীতা চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » আমি বাংলাদেশ বলছি -নবনীতা চক্রবর্তী
শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬



12573055_1744294882457669_8886465762568675655_n.jpgআমি বাংলাদেশ বলছি…

এক নিদারুণ বাস্তবতার মুখোমুখি

হলাম,সময়টা বড় উত্তাল। আমার

নিস্তরজ্ঞ জীবনের পাদপীঠে বিশাল

এক ঝড় আমাকে গ্রাস করলো। মনকষাকষি

দরের উথান পতন আর হিসেব নিকেশের

পর আমার একটা রফা হল যেন বহু সমুদ্দুর

পেরিয়ে একটু মাটি পাবার মত। মূহুতেই

অনেক স্বপ্ন আশা এসে ভর করলো মনে।

এতদিনের অন্যায় শোষন অত্যাচার

সবভুলে আমার চির সরল মন আত্মাপরিচয়

আর অস্তিত্বের আনন্দে বিভোর হল।

আমি আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম।

পুরোনো আঘাতকে অতীত ভেবে

সরিয়ে রাখতে চাইলাম,ভাবলাম এই

বুঝি পথচলা শুরু হল। একটি সুখী স্বচ্ছল

ভবিষ্যৎ এর ছবি প্রতিনিয়ত আমাকে

উদ্দীপ্ত করতে থাকলো। আমি আবার

ভালবাসতে শুরু করলাম বিশ্বাস করতে

শুরু করলাম।

নাহ সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে

যাচ্ছে। অদ্ভুত এক অন্ধকার ঘনায়মান

চারিদিকে। আমাকে নতুন হতে হবে,

নতুন করে সাজতে হবে!! নতুন পথে চলা

মানে কি সবকিছু মুছে ফেলা? আমার

এতদিনের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি,শব্দ

গীত,গাথাঁ, বণ, ছন্দ, ভাব, সৃস্টি,আনন্দ,

ভাষা কিছু ভুলে ভুলে যাওয়া!! আমার

চিরচেনা চিরজনমের আমার আমিকে

হত্যা করা। আমার স্বাধীনতা, আমার

অধিকারের উপর ভয়াল থাবা আছড়ে

পড়ল। মাথার উপর শকুনের তাণ্ডব নৃত্য আর

নিকটবর্তী অশনি সংকেত।তবুও আমি

বিশ্বাস হারালাম না।

“মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ”

এত অসহায় এত বিপন্ন আমি হইনি কখনো।

গোপনে মনের গহীনে মুক্তির ইচ্ছেটা

ক্রমশ প্রানপন হতে লাগলো। এই বাধার

বাধঁ ভাঙগবে কে।অপেক্ষায় থাকলাম

সুদিনের।। দিনে দিনে আমার

দুশচিন্তা ভয় সত্য বাস্তবে রুপ নিলো।

একদল কাপুরুষ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

শুরু হল নৃশংসতা, অকথ্য নিযাতন। চারপাশ

জুড়ে আরিস্তফেনিসদের আস্ফালন।

ওদের নিষ্ঠুর নখের ডগায় আমার ক্ষত

বিক্ষত দেহের রক্তকনা। ওদের

বেয়নেটের খোঁচায় আমার সংসার

ছিন্নভিন্ন। আমার চারিদিকের

বাতাসে শুধু আর্তনাদ, হাহাকার।

আমার নিশ্বাসে অনল, আমার চোখে শুধু

মৃত্যু মৃত্যু এবং মৃত্যু।এত বীভৎস মৃত্যু কি

দেখেছে মহাকাল ; মানুষের দানবীয়

রুপ, নিম্নগামী নগ্নতা।

এই পৈশাচিক লীলাখেলার রক্তাক্ত

সময় হতে গরজে উঠল আমার সবচেয়ে

সাহসী ও প্রতিবাদী ছেলেটি। তাঁর

দুর্নিবার ডাকে জেগে উঠল সমস্ত

চরাচর ; আত্মা উপলব্ধিজাত চৈতন্যর

প্রতি তাঁর সচকিত বোধ ও প্রেমে

সাড়া দিলো জাতি।আমার সন্তানরা

রুদ্র মূতি ধারণ করলো। শুরু হল বাঁচা মরার

লড়াই। তাদের সংগ্রামী রুপ দেখে

অপমানিত, কুণ্ঠিত, অত্যাচারিত এই

আমি মাথা তুলে দাঁড়ালাম। বুঝলাম

বিজয় সন্নিকটে। যুদ্ধ তীব্র থেকে

তীব্রতর হল। আমি অগণিত সন্তান

হারালাম, যাদের সংখ্যায় হিসাব

করা কঠিন। অবশেষে ত্যাগ তিতিক্ষা,

স্বপ্ন, প্রেম,মৃত্যু ও দ্রোহের আলিঙ্গনে

অমাবস্যার নিকষ মেঘ সরিয়ে অরুনাদয়

হল, আমি জন্ম নিলাম। প্রাচীন জনপদ

হতে হলাম স্বাধীন সাবভৌম এক রাস্ট্র।

নাম বাংলাদেশ।।

বাংলাদেশ একটি স্বপ্নের নাম

নাম একটি সাহসের,যার চলার পথে বহু

বাধা বিপত্তি। যার এখনো রয়েছে

দারিদ্র, ধনী গরীবের বৈষম্য, প্রকৃতির

খামখেয়ালিপনা,রাজনৈতিক

কোন্দল,হত্যা, সন্রাস, অগ্রাসন,

দুনীতি…..

তবুও আমি নিরভীক। আমি উদীয়মান।

চলেছি বিবর্তনের পথ ধরে।আমার উড়ান

এখন স্পর্ধাহীন। আমি শুধু আর স্বপ্ন নই

মূতমান বাস্তব। নই ব্যথা। আমি এখন

নিকটবর্তী স্বাবলম্বী হবার পথের

পথিক, উপেক্ষা করতে পারি

বিজাতিদের রক্তচক্ষু। কারো

আদেশনামা আমার ভবিতব্য নয়।আমি

অদম্য। আমার গতির দুর্বার সাথী আমার

তারুণ্য, যাদের বুননে মননে মগজে আমি

সতত সঞ্চরণশীল। যাদের অতন্দ্র স্বপ্নময়

চোখ আর কর্ম সন্ধান দেয় সেদিন বেশি

দূরে নয় যেদিন জ্ঞানে মানে ধনে

আমি বিশ্বসেরা হব।মাভৈঃ মেঘ

কেটে যাচ্ছে। বারংবার নিকষিত

জমিনের ফসল আমি।আমার যাত্রা

সমৃদ্ধির পথে,

আমি বাংলাদেশ

সাধারণ হয়েও অসাধারণ।।।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৭:৩১   ৬৭৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ