বঙ্গ-নিউজঃ প্রশ্ন জালিয়াতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অবৈধ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই পরীক্ষার্থীর পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুক্রবার জালিয়াতির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।
এই দুই পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে পুরো জালিয়াতি চক্রকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা দুই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা আবার নিয়েছি। ফলাফলে তাদের জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তাদের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের বিষয়ে ডিনের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
আরেক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওদের মাধ্যমে পুরো চক্রকে আটক করার চেষ্টা করা হবে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ডিন কমিটির বৈঠক ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবো না। পরে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
তবে ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার মানেই হলো এই দুই পরীক্ষার্থীর আগে ফল বাতিল। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা রবিবার আসতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দিনই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষা শুরুর আগে ও পরীক্ষা চলাকালীন অনলাইনের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মেলে জালিয়াতির অভিযোগে আটক শিক্ষার্থীদের মোবাইল থেকে।
পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, নয় লাখ টাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৫ম স্থান অর্জন করার অভিযোগ উঠে ভর্তিচ্ছু তাজরীন আহমেদ খান মেধা ও তার আত্মীয় নুর মাহফুজা দৃষ্টি (নিপু)’র বিরুদ্ধে।
শক্রবার দুই অভিযুক্ত পরীক্ষার্থী, ঘ ইউনিটের মেধা তালিকায় ৫ম স্থানে থাকা তাজরীন আহমেদ খান মেধা ও ৭৮তম স্থানে থাকা নুর মাহফুজা দৃষ্টি (নিপু) মৌখিক পরীক্ষা দিতে এলে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পুনরায় এমসিকিউ পরীক্ষা দিতে বাধ্য করে।
আজ শুক্রবার ভাইভা দিতে এলে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীর পুনরায় পরীক্ষা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসে তাদের এমসিকিউ পরীক্ষা নেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ দুই শিক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে এলে প্রশ্ন জালিয়াত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে তাজরীনকে নতুন করে প্রণীত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে বলা হয়। শুধু বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রতি বিষয়ে ২৫টি করে সর্বমোট ৫০টি প্রশ্ন দেয়া ছিল। প্রতি প্রশ্নের মান ১.২০ করে প্রশ্নের সর্বমোট মান ৬০ নম্বর।
ওএমআর শিটে নেয়া উত্তরপত্র মূল্যায়নে দেখা যায়, তাজরীন বাংলা বিষয়ে ১৭টি প্রশ্নের উত্তর ভরাট করেন। এরমধ্যে বাংলায় সঠিক হয় ৯টি এবং ভুল হয় ৮টি। তার প্রাপ্ত নম্বর ৮ দশমিক ৪। অথচ মূল ভর্তি পরীক্ষায় বাংলায় পেয়েছিলেন ২৭ নম্বর।
‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাংলায় নূন্যতম ৮ পেলেও তিনি কোনো বিষয় মনোনয়নের জন্য বিবেচিত হবেন না। আর ইংরেজিতে ২৩টি প্রশ্নের উত্তর ভরাট করেন তিনি। এতে সঠিক হয় ১৫টি ও ভুল হয় ৭টি। প্রাপ্ত নম্বর ১৫ দশমিক ৬। পাস নম্বর ৮ হিসেবে তিনি ন্যূনতম পাস করেন। অথচ মূল ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে তিনি ২৪ নম্বর পান।
অপরদিকে, আর এক অভিযুক্ত ৭৮তম মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া, তাজরীনের আত্মীয় নূর মাহফুজা দৃষ্টি (নিপু)। তাকেও একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়। মেধা তালিকায় অবস্থান করলেও নিপু আজকের পরীক্ষায় ফেল করেছেন। বাংলা অংশে ৩০ এর মধ্যে পেয়েছেন ৬ দশমিক ৬ এবং ইংরেজি অংশে ৩০ এর মধ্যে পায় ১১ দশমিক ৪ নম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ০:১৫:১৯ ৩৪৪ বার পঠিত