বঙ্গ-নিউজঃরাজা -জমিদারের যুগ শেষ হয়ে গেলেও গফরগাঁও এর এসি ল্যান্ড শামসুল আরেফীনের ক্ষমতার যুগ শেষ হয়নি । তার প্রকাশ্যে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও একটি অভিযোগেরও প্রতিকার পাননি । ম্যানেজ মাস্টার খ্যাত এ কর্মকর্তা দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানিয়ে উপজেলার ১৫টি তফসিল অফিস থেকে মাসে কোটি টাকার ঘুষ বানিজ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ।
উপজেলার উথরি গ্রামের আলী হোসেন জানান , ছেলেদের জমি লিখে দেয়ার চাপের মুখে মেয়ের বাড়ীতে আশ্রিত এক অশতিপর বৃদ্ধকে উদ্ধারে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে এসি ল্যান্ড বৃদ্ধের বাড়ীতে হাজির হলেন ,বৃদ্ধকে উদ্ধার করলেন , ছবি উঠালেন। বৃদ্ধ তার মেয়ের বাড়ীতেই রয়ে গেলেন । কিন্তু পরের দিন তার এ মহানুভবতা পত্রিকার শিরোনাম হলো । কিন্ত্রু আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য ২কাঠা জমি বিক্রির দরকার হয় । তিন মাস ঘুরেছি নাম জারির জন্য কাজ হয়নি । তিন মাস পর বাধ্য হয়ে ৯হাজার টাকা যোগার করে দেই । টাকা দেয়ার পর আমার কাজটি আর দেরি হয়নি ।
দত্তের বাজার ইউনিয়নের কন্যামন্ডল গ্রামের মো: রফিক জানান , গত ৬বছর আগে তার নামে ক্রয় করা ৫৬শতক জমি নিজ নামে নামখারিজ করার জন্য তিনি ভূমি অফিসে আবেদন করেন । চাহিদা মত ঘুষের টাকা না দেওয়ায় তার ক্রয় করা জমিটি ‘ ক’ তফসিলের জমি বলে তাকে হয়রানী করছে । তিনি ‘ক ‘তফসিলতূক্ত জমির সরকারি গেজেটে নিয়ে এসি ল্যান্ডকে দেখালে এসি ল্যান্ড বলেন , গেজেটে ভুল করে আপনার জমির দাগ খতিয়ানটি উঠানো হয়নি । আমার তালিকাটি সঠিক । সরকারি গেজেট ভুল । বাধ্য হয়ে গরু এবং পুকুরের মাছ বিক্রি করে চাহিদা মত টাকা দেওয়ার পর তিনি তার নাম খারিজটি একদিনের মধ্যেই হাতে পেয়েছেন ।
সালটিয়া গ্রামের আজিজুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান , ৫/৬বছর আগে ৬ভাইয়ের ক্রয়করা দেড় একর জমি নামজরি ও জমাখারিজ করার জন্য ৪ মাস আগে তিনি গফরগাঁও ভুমি অফিসে আবেদন করেন। আবেদন করার ২০/২৫ দিন পর তিনি এসি ল্যান্ড শামসুল আরেফীনকে অবহিত করায় তিনি সহকারি ভূমি কর্মকর্তা রহমত আলীর সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন । রহমত আলীর সাথে যোগাযোগ করলে রহমত আলী অফিসের একজন কর্মচারি পর্যায়ের অপর একজনকে দেখিয়ে দেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন । পরামর্শমত তৃতীয় ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দু‘দিনের ভেতর কাজটি করে দেয়ার বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন । আজিজুর রহমান জানান , ঘুষ দিয়ে তিনি কাজ করাবেন না বলে তৃতীয় ব্যক্তির প্রস্তাব নাকচ করে দেন । বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে ৪৫ কর্মদিবস পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন । তা ছাড়া তাকে কোন রশিদও দেওয়া হয়নি ।কাজেই তার ৪৫ দিন গণনা কবে শুরু হবে আর শেষ কবে তিনি জানেন না । তিনি জানান , যার কাছে প্রতিকার চাইলাম তিনিও এসি ল্যান্ডের ভাষায়ই কথা শোনালেন ।
দীর্ঘকাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, তার গ্রামের বাড়ীতে কিছু জমি নাম খারিজ করতে গিয়ে গফরগাঁও ভূমি অফিসের চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন । তিনি প্রতিকারের জন্য যথাযথ উধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানান ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গফরগাঁও ভূমি অফিসের একজন কর্মচারি বলেন , এসি ল্যান্ড শামসুল আরেফীন সপ্তাহের বেশীর ভাগ দিনই ৪টার পর অফিসে আসেন ।
উপজেলা স্বাস্থ্য, মৎস্য প্রাণি সম্পদ অথবা কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনের উপজেলায় কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তাদের শামসুল আরেফীন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা । কিন্তু তিনি আইনশৃঙ্গলা, শিক্ষা -স্বাস্থ্য,দুর্নীতি প্রতিরোধ এমনকি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে. মাঠে ময়দানে সভা-সমিতিতে রিতিমত বক্তৃতা দিয়ে স্ট্যান্ডবাজী চালিয়ে যাচ্ছেন ।
11তিনি এসি ল্যান্ড গফরগাঁও ফেসবুক একাউন্টে স্ট্যাটাসে লিখেন: “মাননীয় এমপি মহোদয় এর সাথে গফরগাঁও উপজেলার সার্বজনীন দূর্গা পূজা মন্ডপ পরিদর্শন। সাথে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়, ভারপ্রাপ্ত মেয়র গফরগাঁও পৌরসভাসহ পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ “।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি তা পারেন কিনা বা এটি তার প্রটোকলের অংশ কীনা জানতে চাইলে শামসূল আরেফীন তা পারেননা বলে আমার বাংলার কাছে স্বীকার করেন এবং তা তার প্রটোকলেরও অংশ নয় বলে জানান ।
অনিয়ম নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনের এ কর্মকর্ত নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করে প্রতিবাদকারীকে জেল-হাজতে পাঠিয়ে দেয়ারও হুমকি দেন বলে কয়েকজন ভূক্তভোগীর অভিযোগ । এসি ল্যান্ডের কোন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন কীনা জানতে চাইলে শামসুল আরেফীন বলেন , আমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন কাজ করলেও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আমার আছে।
1212শামসুল আরেফীন এসি ল্যান্ড গফরগাঁও ফেসবুক একাউন্টে স্ট্যাটাসে লিখেন: ‘‘আজ দুপুর ০২:০০ টায় গফরগাঁও ইউনিয়নের জয়নাকান্দা গ্রামে মীম আক্তার, পিতা- মোঃ মঞ্জুরুল হক (ছিপান স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী) এর বাল্য বিবাহের সংবাদ পেয়ে সাথে সাথেই পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গমন করি। ঘটনার সত্যতা পেয়ে গফরগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, স্কুলের সভাপতি, প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ কে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। মেয়ের পিতাকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় নি। অভিভাবক হিসেবে মেয়ের নানা ও মামা কে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করি। বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ এর ৬(১) ধারায় অভিভাবকদ্বয়ের প্রত্যেককে ১০০০/- করে অর্থ দন্ড প্রদান করা হয় এবং মীম আক্তারকে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিয়ে দেয়া হবে না মর্মে অঙ্গীকারনামা নেয়া হয়। বাল্য বিবাহ মুক্ত গফরগাঁও গড়ার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন, গফরগাঁও বদ্ধপরিকর”।
ভূ’মি প্রশাসনের একজন জুনিয়র কর্মকর্তার এ ধরনের এক্তিয়ার বহি;র্ভূত আচরণ জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেগ করেছে । নিজেকে না শোধরিয়ে তার এক্তিয়ার বহি:র্ভূত কর্মকান্ডের অন্তরালের রহস্যটিও স্থানীয় জনসাধারণের কাছে দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এ বিষয়ে এসি ল্যান্ড শামসুল আরেফীনের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন , তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা -বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ।
00গফরগাঁও উপজেলা ভূমি অফিসের অনৈতিক কর্মকান্ড নিযে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তার সাথে কথা হয় । নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান , সহকারি কমিশনার ভূমি , ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন হলেও মাঠ পর্যায়ের এসব কর্মকর্তাদের সুপারভিশন করে জেলা প্রশাসন । জেলা প্রশাসন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন ।
তিনি জনবান্ধব ভূমি প্রশাসন গড়ে তুলতে সরাসরি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ভূমি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন । তিনি জানান গফরগাঁও ভূমি অফিসের দুর্নীতি -অনিয়ম সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ তাদের হাতে এসেছে ।
ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান , মাঠ পর্যায়ে ভূমি প্রশাসনের দুর্নীতি ও ভূমি মালিকদের হয়রানিকারী সে যেই হোক, তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই হবে । কয়েক সপ্তাহ আগে ময়মনসিংহের একজন জেলা প্রশাসকের রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনার প্রসংগ টেনে তিনি বলেন , অনৈতিক কর্মকান্ডের দায় সংশ্লিষ্টদেরকেই বহন করতে হবে ।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৮:৪৪ ৭৪৭ বার পঠিত