ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করছে মৌলবাদীরা’

Home Page » প্রথমপাতা » ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করছে মৌলবাদীরা’
মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০১৬



বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ

 সোহা্নুর রহমান সোহানঃ 

31_aamrabrammanbariabshi_081116_0002.jpgরাজনৈতিক সাহচর্য ও প্রশাসনের গাফিলতিতে’ মৌলবাদী শক্তি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে ক্রমেই এক ‘বিচ্ছিন্ন দ্বীপে’ পরিণত করছে বলে অভিযোগ করেছেন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী’র ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।

সমাবেশের সঞ্চালক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোল্লাতন্ত্র আবারও জেগে উঠেছে। ঘুমন্ত দৈত্যটি এখন এই জেলাকে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করতে চাইছে।”

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশ যে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, এই ঘটনা কিন্তু তা প্রমাণ করে না। মন্ত্রী ছায়েদুল হক এই ঘটনায় উসকানি দিক বা না দিক, ঘটনার দায়ভার নিয়ে তার পদত্যাগ করা উচিত।”

কক্সবাজারের রামুর ঘটনায় অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়ায় নাসিরনগরে ‘একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি’ ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, “সরকার শুধু মুখে নয়, এ ঘটনার বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকলেও তা সরকারকে বের করতে হবে। আমরা চাই, নাসিরনগরের ঘটনাটি যেন শেষ ঘটনা হয়।”

সমাজের প্রতিটি স্তরে ‘সামাজিক প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিরোধ গড়ে উঠলে এ ধরনের দুষ্কৃতিকারীরা আর কোনো ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস পাবে না।”

ফেইসবুকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরের দত্তবাড়ির মন্দির, নমশুদ্রপাড়া মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, ঘোষপাড়া মন্দির, গৌরমন্দিরে হামলা চালায়। পরে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়, তাদের বাড়িঘর ভেঙে লুটপাটও চালায়।
এই হামলার পেছনে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ নামে একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের ‘ইন্ধন’ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কবি আসাদ চৌধুরীর অভিযোগ, “নাসিরনগরের ঘটনায় কায়েমিবাদীদের সমর্থন ছিল। ঘটনা আকস্মিক হলেও তা ছিল সুপরিকল্পিত।”

হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতাদের বহিষ্কারের ঘটনাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “১৯৭৫ সাল থেকে মানুষ হত্যার বিচার হয় না। ভোটের আগে মানুষের দাম থাকে, তারপরে মানুষের আর কোনো মূল্য নাই। সরকারের ভাজে-ভাজে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে দুর্নীতি।”

জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছেন কক্সবাজারের রামুর ঘটনার। ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার পর রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা চালায় মৌলবাদীরা। সেই ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারের পরও ‘যথোপযুক্ত শাস্তি’ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “নাসিরনগরের ঘটনায় প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করতে হবে। তাকে সমুচিত শাস্তি দিতে হবে।”

নাসিরনগরের হামলার ঘটনার পর ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় মন্ত্রী ছায়েদুল হকের সমালোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে কুৎসিত বক্তব্যের দায়ে তার পদত্যাগের দাবিও করছেন তারা। তাদের একজন কবি অসীম সাহা।

কবি অসীম সাহা বলেন, “মন্ত্রী ছায়েদুল হক এক অজ্ঞাতকুলশীল মন্ত্রী। উসকানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে তার পদত্যাগ করা উচিত।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, “নাসিরনগরের হামলায় গণতন্ত্রমনা, মুক্তমনা শক্তি কষ্ট পায়। ঘটনার সাথে সাথেই মন্ত্রীর সেখানে যাওয়া উচিত ছিল।

“নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল সেখানে যাওয়ার, কিন্তু তিনি তা করেননি। উল্টো তিনি এখন গণমাধ্যমকে দুষছেন। তার মতো এক দুর্জনের জন্য মন্ত্রিসভা কলঙ্কিত হয়।”

আওয়ামী লীগের ভেতরেই বর্তমানে মৌলবাদের জয়জয়কার বলে দাবি করেন দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান।

“একাত্তরের গণহত্যা আর নাসিরনগরের ঘটনা একইসূত্রে গাঁথা। মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশকে ক্রমেই সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত করতে চাইছে, বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। আওয়ামী লীগের ভেতরেই মৌলবাদের জয়জয়কার। আওয়ামী লীগকে এখন জামাতিকরণ করা হয়েছে।”

‘আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী’র সংগঠক রাজিব নূর বলেন, “নাসিরনগরের ঘটনায় জেলা প্রশাসক এসপি থেকে শুরু করে পাবলিক সার্ভিস, সিভিল প্রশাসন সবার গাফিলতি সীমাহীন। আর মন্ত্রী ছায়েদুল হকের আচরণ কাণ্ডজ্ঞানহীন। তিনি পদত্যাগ করবেন না, পদত্যাগের সংস্কৃতি তো বাংলাদেশে নেই। প্রধানমন্ত্রীরই উচিত তাকে পদত্যাগ করতে বলা।”

আরেক সংগঠক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহকারী সম্পাদক ফারহানা মিলি বলেন, “আশির দশকের সাংস্কৃতিক জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এখন বদলে গেছে। কখনও ভাবিনি, এই পরিবেশ বদলে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে। রাজনীতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হলেন সাধারণ মানুষ। মৌলবাদ দূষিত করছে রাজনীতি।

“একজন দেশপ্রেমিক কখনও দেশদ্রোহী হয়ে উঠতে পারেন, তার আদর্শ থেকে তিনি বিচ্যুত হতে পারেন। কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, ত্রিশ লক্ষ শহীদের সন্তান আমরা, আমরা কখনও এই লড়াইয়ের পথ থেকে সরে যাব না। মেঘনা -তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা সকল শক্তি প্রয়োগ করব। আমরা পিছিয়ে পড়ব না।”

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে একাত্তর টিভির বার্তা বিভাগের পরিচালক ইশতিয়াক রেজা, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহসাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ বারী, চিকিৎসক আশীষ কুমার চক্রবর্তী, জাকিয়া শিশির বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা এই হামলার পেছনে কোনো ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতেও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৮:০৪   ৩৫৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রথমপাতা’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ