বঙ্গনিউজঃ বাংলাদেশে উৎপাদিত হাজার হাজার টন রাবার গুদামে পচছে। অথচ রাবারজাত পণ্য উৎপাদনকারীরা বিদেশ থেকে আমাদানি করছেন। রাবারের আমদানি শুল্ক কম হওয়ায় দেশি রাবার বাদ দিয়ে বিদেশ থেকে কম দামে আমদানি করা হচ্ছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই সরকরি কর্মকর্তারা দেশীয় রাবারের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে সংসদীয় কমিটি। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। পরে কমিটি দেশীয় রাবারের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহারসহ বিদেশি রাবারের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানোর সুপারিশ করে।
বর্তমানে রাবারের পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলো দেশিয় রাবার কিনতে গেলে তাদের ১৫ শতাংশ মূসক এবং ৯ শতাংশ বিক্রয় কর দিতে হয়। অন্যদিকে রাবারের আমদানি শুল্ক মাত্র ৫ শতাংশ।
বৈঠকে শেষে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চলতি বাজটের আগে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। পরে তার নির্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশি রাবারের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু চলতি বাজেট প্রণয়নের সময় তা আবার বহাল করা হয়। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিষয়টি ভুলে হয়েছে। কিন্তু সংসদীয় কমিটির কাছে তথ্য আছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যেই মন্ত্রণালয়ের লোকজন এই কাজটি করেছেন। সংসদীয় কমিটি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।’
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ রাবার রফতানি করে ৭ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে বলে কমিটির সভাপতি জানান।
জলবায়ু পরিবর্তনে ঋণ নয়, অনুদান
এদিকে বৈঠকে কমিটি আসন্ন বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় ঋণের পরিবর্তে অনুদানের দাবি জানাতে সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জলবায়ু তহবিলের বাণিজ্যিকীকরণের একটা বিষয় সামনে চলে আসছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মতো বৈশ্বিক অর্থ লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান তহবিলে টাকা ছাড়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এইচএসবিসি ব্যাংকও নাকি এই অর্থ ছাড় করবে। আমরা শুরু থেকে বলে আসছি, এ খাতে ঋণ নয়, অনুদান দিতে হবে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকও দুই বিলিয়ন ডলার দেবে বলেছে। কিন্তু এটা ঋণ হিসেবে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ এই তহবিলের টাকা জনগণের। এটা লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে যাওয়া ঠিক নয়।’ মরক্কোতে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছে বলে কমিটির সভাপতি জানান।
জয়বায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত বিশ্ব দায়ি উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়। উন্নত দেশগুলো কলকারখানায় কার্বন নিঃস্বরণ ঘটিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করেছে। কপ সম্মেলনে কোন দেশ কতটা কার্বন নিঃস্বরণের সুযোগ পাবে, সে বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ১৯৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। তার আগ পর্যন্ত এ ধরনের বিধি-নিষেধ যেন বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা না হয়, সে বিষয়ে কপ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘জয়বায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মানুষ উদ্বাস্তু বা রিফিউজি হয়ে গেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে রিজিউজির সংজ্ঞায় তাদের নাম নেই। সংসদীয় কমিটি লবণাক্ততা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে উদ্ধাস্তুদের নাম রিফিউজির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে।’
আগামী ৭ থেকে ১৮ নভেম্বর মরক্কোর মারাকাশে ২২তম বৈশ্বয়িক জলবায়ু সম্মেলন বসতে যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনে ২০২০ সাল পরবর্তী প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের কর্ম কাঠামো প্রণয়ন করা হবে। বাংলাদেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় ওই চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
হাছান মাহমুদে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম, নবী নেওয়াজ, গোলাম রাব্বানী, টিপু সুলতান, ইয়াসিন আলী ও মেরিনা রহমান অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২০:৩৬ ৩২৮ বার পঠিত