আ. লীগের কেন্দ্রীয় ৩৮ পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ

Home Page » জাতীয় » আ. লীগের কেন্দ্রীয় ৩৮ পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ
বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৬



4.pngবঙ্গনিউজঃ সম্মেলনের দিন রবিবার ও এরপর মঙ্গলবার মিলে দুই দফায় আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ৪৩ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও ৩৮ সদস্যের নাম। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর তিন জন, দু’জন উপ-সম্পাদকসহ সাত জন সম্পাদক এবং ২৮ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বাকি থাকা এই ৩৮ পদে সুযোগ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের পদপ্রত্যাশীরা। আগামী শনিবার বা রবিবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা গত কয়েক মাস ধরেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এই পদপ্রত্যাশীরা দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাসহ সম্মেলন কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচিতে তাদের সরব উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির অর্ধেকের বেশি পদে নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় পদ-প্রত্যাশীদের জায়গা খানিকটা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে বাকি পদগুলোতে নির্বাচিত হতে তারা শুরু করেছেন শেষ সময়ের প্রচেষ্টা। সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর বেশিরভাগ পদ পূরণ হয়ে যাওয়ায় শেষমেষ তারা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এ জন্য সদ্যঘোষিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পাওয়া প্রভাবশালী নেতাসহ দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিয়মিত যাতায়াত করছেন আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তার কর্মসূচিসহ দলের সব ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন এই পদ-প্রত্যাশীরা।

সম্মেলনের পরদিন সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা জানিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সম্পাদকমণ্ডলীর ২২ পদের নাম ঘোষণা হয়। এদিকে মঙ্গলবারও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নাম ঘোষণাকালে আগের অবস্থানের কথা পুর্নব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমি আগেই বলেছি, এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে। আমরা সেটাই করতে চাই।’

এদিকে কার্যনির্বাহী কমিটির ২৮ জন সদস্য মনোনীত করতে আগামী শুক্রবার সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকেই বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর বাকি সদস্যসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনয়ন দেন।

এর বাইরে উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় কমিটি ও সহসম্পাদক পদও রয়েছে। দলের গঠনতন্ত্রে এসব কমিটি নির্বাচনে দলীয় সভাপতিকে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৪ জন সম্পাদকমণ্ডলীর পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ২৭টি পদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি পদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, কৃষি ও সমবায়, পরিবেশ ও বন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যুব ও ক্রীড়া, উপদফতর, উপপ্রচার ও প্রকাশনা পদে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। এ ছাড়া রয়েছে ২৮টি সদস্য পদ।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সম্পাদকমণ্ডলীর মতো কেন্দ্রীয় সদস্য পদেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। এ পদে বেশিরভাগই আবারও স্বপদে বহাল হতে পারেন। তবে কেন্দ্রীয় সদস্যের দুই পদ ‍বৃদ্ধি ও আগের কমিটির ৫ জন সম্পাদকমণ্ডলীতে পদোন্নতি পাওয়ায় কিছু পদ খালি হয়েছে। এসব পদে নতুনদের পাশাপাশি সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদপড়া দুই জনও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে জানা গেছে।

দলের নেতারা জানান, পদ পাওয়ার জন্য যে কারোরই প্রত্যাশা বা প্রচেষ্টা থাকতে পারে। তবে, বাকি পদগুলোতে কে বা কারা আসবেন, সেটা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই ঠিক করবেন। কারণ কাউন্সিলররা তাকে এই ক্ষমতা দিয়ে গেছেন। আর শেখ হাসিনা যোগ্য ও ত্যাগীদেরই পদে বসাবেন।

এদিকে মঙ্গলবার কমিটি ঘোষণাকালে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলে অনেক পরিবর্তন আসছে। যারা জনগণের সঙ্গে আচরণ খারাপ করবেন, যাদের অপকর্মের কারণে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন থাকবে।’ এক প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘কমিটিতে আরও নতুন মুখ আসবে। নতুন রক্ত সঞ্চালনও এখানে থাকবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ সংগঠন। এ দলের অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার প্রত্যাশা থাকাটা স্বাভাবিক। এটাকে চেষ্টা তদ্বির বলার কোনও সুযোগ নেই।’

দলের এই নেতা বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে দলীয় সভাপতি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনয়ন দেন। এজন্য আগামী শুক্রবার সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে এটা চূড়ান্ত করে শনিবারের মধ্যেই আমরা কমিটিট দিতে পারব বলে আশা করছি।’ এর আগে সভাপতিমণ্ডলীর বাকি ৩টি ও সম্পাদকমণ্ডলীর ৭টি পদও চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দু’দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২১জনের নাম ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা টানা অষ্টমবারের মতো পুনর্নির্বাচিত হন। প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। ওই দিন সভাপতিমণ্ডলীর ১৪ জন্য সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে ৭ জন বিদায়ী কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তারা হলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সভাপতিমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে নতুন যুক্ত হয়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, আবদুল মান্নান খান, রমেশ চন্দ্র সেন ও পীযূষ ভট্টাচার্য। তাদের মধ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান ও আবদুল মান্নান খান বিদায়ী বিদায়ী কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন।

প্রথম দিনে চারটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের নাম ঘোষণা করা হয়। তিনটিতে পুরনোরাই বহাল আছেন। তারা হলেন- মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক। নতুন করে যুক্ত হন বিদায়ী কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুর রহমান। কোষাধ্যক্ষ পদে আগের এইচএন আশিকুর রহমানই বহাল রয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার সম্পাদকমণ্ডলীর ২২ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জন স্বপদে বহাল আছেন। তারা হলেন আইনবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহম্মদ আবদুল্লাহ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সাত্তার, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ। এছাড়া আগের কমিটিতে প্রথমে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেলেও পরে দফতরের দায়িত্ব পাওয়া আবদুস সোবহান গোলাপ এবারও দফতর সম্পাদক হয়েছেন। আগের কমিটির উপদফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল হয়েছেন সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক। আগের কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য থেকে এবার পদোন্নতি পেয়ে সম্পাদকমণ্ডলীতে এসেছেন ৪ জন। তারা হলেন অর্থ ও পরিকল্পনা-বিষয়ক সম্পাদক টিপু মুন্সী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আগের কমিটির ৬জনই আগের পদে বহাল আছেন। তারা হলেন আহমেদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিএম মোজাম্মেল, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এনামুল হক শামীম ছাড়াও এপদে নতুন যুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী। এছাড়া শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে শামসুন নাহার চাঁপা এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক পদে নতুন মুখ হিসেবে এসেছেন রোকেয়া সুলতানা।

আংশিক ঘোষিত কমিটির অনুযায়ী সম্পাদকমণ্ডলী থেকে আগের কমিটির ৫ জন সিটকে পড়েছেন। তারা হলেন অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক আ হ ম মোস্তফা কামাল, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জান নূর, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভুইয়া ডব্লিউ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর উয়েশিং।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি আগে ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট হলেও এবার গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ৮টি পদ বাড়িয়ে ৮১ করা হয়েছে। বৃদ্ধি পাওয়া পদগুলোর মধ্যে হচ্ছে সভাপতিমণ্ডলীর ৪টি, সম্পাদকমণ্ডলী ২টি (১টি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১টি সাংগঠনিক সম্পাদক) এবং ২টি সদস্য।

বাংলাদেশ সময়: ১২:২৭:৪৮   ৩৭৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ