বঙ্গ নিউজঃআওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নির্ধারিত হলেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কে হচ্ছেন এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ পদটির জন্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের নাম গত কয়েকমাস ধরে আলোচনায় রয়েছে। তবে এই আলোচনায় সৈয়দ আশরাফ বরাবরই এগিয়ে রয়েছেন।সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আশরাফ হ্যাট্রিক করতে যাচ্ছেন-এমন সম্ভাবনার কথা কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু গত দু’দিন ধরে বাতাস কিছুটা উল্টো বইতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে সাধারণ সম্পাদকের পদের আলোচনায় ওবায়দুল কাদের চলে এসেছেন। বিশেষ করে বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরকে গণভবনে ডেকে পাঠানোর পর এই আলোচনা ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছে। এরই সূত্র ধরে ওবায়দুল কাদের শিবিরেও উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে সৈয়দ আশরাফকে ছাড়িয়ে ওবায়দুল কাদের এগিয়ে গেছেন বলে দলের নেতারা মনে করছেন।
বিগত কয়েকটি সম্মেলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি আগে থেকে অনেকটাই নির্ধারিত থাকার কারণে এ পদ নিয়ে নেতাকর্মী বা অন্যদের আকর্ষণ থাকে না। এ কারণে দলের প্রতিটি সম্মেলনেই সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এ পদের জন্য দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সবার মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। অন্যান্য বারের মতো এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে মনে করেন দলের নেতারা।
এদিকে গত ৩টি সম্মেলন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০০২ সাল থেকে যে কয়েকজনের নাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তারা শুনে আসছেন তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের অন্যতম। ২০০২ সালে তিনি এ পদের প্রার্থীও হয়েছিলেন বলে তারা জানান। অবশ্য ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে দলের ভূমিকার প্রশ্নে ২০০৯ সালের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন সেটা আগেভাগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
সর্বশেষ ২০১২ সালের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফের পাশাপাশি ওবায়দুল কাদেরের নাম বেশি আলোচনায় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফই সেই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এ পদের দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সৈয়দ আশরাফ আবারও দলের সাধারণ সম্পাদকের পদটি পেতে যাচ্ছেন এমন ধারণা তাদের আগে থেকেই রয়েছে। তাদের মতে জাতীয় চার নেতার একজন সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান হওয়ায় সৈয়দ আশরাফ দলীয় সভাপতির সব থেকে বেশি ট্রাস্টের জায়গায় রয়েছেন। দলের এই অংশ মনে করছেন, সৈয়দ আশরাফের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। সৎ রাজনীতিক হিসেবেও কর্মীদের কাছে রয়েছে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। কর্মীদের মতে, সৈয়দ আশরাফ দলের মধ্যে কোনও গ্রুপিং করেন না। কাউকে অহেতুক বিরক্ত কিংবা কারও ক্ষতি করার মানসিকতাও নেই তার। দলে সার্বক্ষণিক সক্রিয় না থাকলেও তার বিরুদ্ধে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কোনও অভিযোগ নেই। এছাড়া সভাপতি হিসেবে গত টার্মগুলোতে যে কয়জন রানিংমেট পেয়েছেন, তার মধ্যে আশরাফের সঙ্গে কাজ করে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বেশি স্বস্তি পেয়েছেন বলে দলের নেতারা মনে করেন। দলের ‘সংকট সমাধানকারী’ হিসেবে পরিচিত আশরাফ তার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। যে কারণে নতুন টার্মেও আশরাফ দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদটি পাবেন, এমনটা মনে করছেন দলের নেতারা। অবশ্য আশরাফের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্নতা ও নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলার ‘প্রবণতা’র অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে বরাবরের মতো আলোচনায় থাকা ওবায়দুল কাদের বিগত কিছুদিন ধরে বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিলেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদটি পাবেন না-এমনটা তিনি নিজেও মনে করতেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তার আভাসও দেন। ওই অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদকসহ কোনও দলের অন্য কোনও পদে প্রার্থী হবেন না জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সবাই নেত্রীর ওপর আস্থাশীল। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন যখন হয় আমি মাঝে-মাঝে বিব্রত হই, লজ্জাও পাই। মনে অনেক প্রশ্নও জাগে। সম্মেলনকে সামনে রেখে আলাপ-আলোচনা আসে, পত্রিকায় ছবি বের হয়। আমি আপনাদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি আওয়ামী লীগের কোনও পদে প্রার্থী নই।’
ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর দলের ভেতরে-বাইরে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, পদে আসার সম্ভাবনা নেই মনে করেই তিনি কোনও প্রসঙ্গ ছাড়াই ওই মন্তব্যটি করেন।
তবে, বুধবার দুপুর থেকেই এ পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরকে গণভবনে ডেকে পাঠান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে বলেন বলে ওবায়দুল কাদের তার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার কাছে দাবি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণভবনে সাক্ষাৎ ও তার দাবির পর আওয়ামী লীগের মধ্যকার হিসাব-নিকাশও অনেকটা পাল্টে গেছে। ওবায়দুল কাদের এবার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছেন-এমন খবর দলের নেতাকর্মীদের মুখে-মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদেরকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। তার অনুসারীদের মধ্যেও বেশ উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওবায়দুল কাদেরের কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ খুশি বলে জানা গেছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রম তদারকি ও বিভিন্ন স্থানে তার আকস্মিক ভিজিটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়েও মন্ত্রণালয় পরিচালনায় ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পর ওবায়দুল কাদের আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতির খবর নিতে যান তিনি। সেখানে তিনি উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার কাছে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেত্রীর সর্বশেষ অবস্থানের কথা জানান। তিনি জানান, নেত্রী তাকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কাউন্সিলের সম্মতি সাপেক্ষে তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন এমন দাবিও করেছেন তিনি।
এদিকে, সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা সম্মেলনের কাউন্সিলরাই ঠিক করবেন।’ পদপদবি না পেলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘কোনও পদে না থেকেও কর্মী হয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। দলকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে।’
এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে ওয়াদুল কাদের নাম আলোচনায় আসার খবর শুনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে যান বলেও একটি সূত্র জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ৭:২৫:২০ ৪২৮ বার পঠিত