‘বঙ্গ-নিউজঃ গত ৫ বছরে কোনও ইনক্রিমেন্ট পাইনি, বেতনও হয় না নিয়মমতো। চাকরি জাতীয়করণ করা হবে বলে জানালেও সেই সিদ্ধান্ত এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। মানবেতর জীবন যাপন করছি। এ কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। যাদের অন্য চাকরিতে যাওয়ার বয়স নেই, তারা এখানে ধুঁকছি।’ এভাবে কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত একজন হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার।
চাকরি জাতীয়করণ না হওয়া, বছরের পর বছর ধরে ইনক্রিমেন্ট না হওয়া, ক্লিনিক বন্ধ করে অন্যত্র কাজ করা, ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া এবং বেতন বৈষম্যসহ নানা অস্থিরতা বিরাজ করছে সরকারের এই আলোচিত স্বাস্থ্যসেবাদাতাদের মধ্যে। তারা বলছেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে, রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারতের (সিএইচসিপি) ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হয়নি। অথচ সারা দেশে দৈনিক প্রায় ৯০ লাখ রোগী দেখেন তারা। আর এই ৫ বছরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তারা রোগী দেখেছেন ৭০ কোটি বার রোগী দেখেছেন। নারী সিএইচসিপিরা প্রায় আড়াই হাজার নারীর সন্তান প্রসব সফলভাবে করেছেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে সারা দেশে ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণেও সিদ্ধান্ত নিলেও ২০০১ সালে প্রকল্পটির কর্যক্রম বন্ধ করে দেয় পরবর্তী সরকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর আবার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চালু করে এবং ১৩ হাজার ৫০০ সিএইচসিপি নিয়োগ দেয়। বর্তমানে তাদের সংখ্যা ১৪ হাজার। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান রয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার। এদিকে, ২০১৪ সালে সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণ করা হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ৩ বছর পেরিয়ে গেছে। তবু জাতীয়করণ বাস্তবায়িত না হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেওয়াসহ এই খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। স্থিমিত হয়ে গিয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণের আলোচনা শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। এর পরের বছরেই মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশের সিভিল সার্জনদের সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণের বিষয়টি জানানো হয়।
কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা কামাল হোসাইন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। এখানে প্রায় চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কাজ করছেন। মন্ত্রণালয় বারবার আশ্বাস দেয় সত্য। এরপর আর কোনও খোঁজ থাকে না। চলতি বছরের এপ্রিলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের ইনক্রিমেন্ট এবং চাকরি জাতীয়করণের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতির ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে, দাবি আদায় কমিটির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ বছর ধরে আমাদের অসহায়ত্ব নিয়ে কথা বলে আসছি। কিন্তু কেউ নজর দেয় না আমাদের দিকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে, সার্ভিস বুক খোলা হয়েছে। গত ৫ বছরে জাতীয় জাতীয়করণ করা হয়নি। আবারও নাকি প্রকল্পের মেয়াদ আরও ৫ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটা আরেকটি চক্রান্ত আমাদের বিরুদ্ধে।’ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যেই ৬০০-এর মতো কর্মী চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। আরও প্রায় কয়েক হাজার প্রস্তুতি নিচ্ছে চাকরি ছাড়ার। কিন্তু যাদের বয়স নেই তারা কী করবে, চাকরি যদি জাতীয়করণ না হয় তাহলে কিভাবে থাকব আমরা?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের একজন সিএইচসিপি জানান, ‘অনেক জায়গায় আমাদের ক্লিনিক বন্ধ রেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রতি নির্দেশনাই ছিল কোথাও ক্লিনিক বন্ধ রাখা যাবে না।’
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণ করে দুই বছরের একটি ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছিল। তাও হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের কল্যাণ তহবিলে ৫০ টাকা করে টাকা কেটে নেওয়া হলেও এতদিন যে টাকা কাটা হয়েছে, সেটা বেআইনি ছিল বলে জানানো হয়েছে। তাহলে এতবছরের টাকা কোথায় গেলো?’
সিএইচসিপিদের চাকরি একইসঙ্গে জাতীয়করণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির বর্তমান পরিচালক ডা. মমতাজুল হক। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি এ বিষয়ে সব সুপারিশসহ চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সমাধান হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১২:৪৭ ৩৬৬ বার পঠিত