বঙ্গ-নিউজঃ রফিকুল ইসলাম একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার স্ত্রী সায়মা হক একজন ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা। রফিক-সায়মা দম্পতির সাত বছরের মেয়েশিশু নাহিয়ান এখনও কথা বলে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে গিয়ে দেখেন, নাহিয়ানের শারীরিক কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। পরবর্তীতে চিকিৎসক তাকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য মানসিক চিকিৎসকের কাছে পাঠান। দীর্ঘ ছয় মাস নিয়মিত যাতায়াতের পর নাহিয়ান কথা বলে ঠিকই, কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে সে কথা বলে না সচরাচর। মানসিক চিকিৎসকের মতামত, বাবা-মায়ের প্রতিনিয়ত ঝগড়া আর অত্যাচারের কারণে নাহিয়ানের এ অবস্থা।
জাহেদুল হক ও নাসিমা বেগমের সংসার দশ বছরের। একমাত্র সন্তান আবিরের বয়স যখন তিন বছর, তখন একবার সংসার বিচ্ছিন্ন হলেও পুনরায় একত্রিত হন তারা। যদিও সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি আজও। প্রতিদিনের ঝগড়ার মধ্যে স্বচ্ছল এই পরিবারের সন্তান আবিরের জিদ বেড়ে গেছে। স্কুলে পাঠানো হলেও সেখানে সে পড়তে চায় না। শিক্ষকদের কথা শুনতে চায় না।স্কুল থেকে বারবার অভিভাবকদের বিষয়টি জানানো হয়। আবির তার বাবা-মায়ের সঙ্গে এখনও কাউন্সিলিং এ আছে।
দেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ২০১৬ সালের তথ্যচিত্রে দেখা যায়, দেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক শূন্য এক ভাগ লোক মানসিক রোগে আক্রান্ত। অন্যদিকে, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশই মানসিক রোগে আক্রান্ত।
এছাড়া, এই বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩ দশমিক ৮ ভাগ মানসিক প্রতিবন্ধী,২ ভাগ শিশু মৃগীরোগে আক্রান্ত এবং শূন্য দশমিক ৮ ভাগ শিশু মাদকাসক্ত।
মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের শিশু বর্ধন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দাম্পত্য কলহের কারণে শিশুদের সামাজিক দক্ষতা হ্রাস পায়। তাদের মধ্যেও কলহ প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এমনকি ব্যক্তিত্ব বিকারের মতো মারাত্মক সমস্যাও চিহ্নিত হতে পারে।’
ব্যক্তিত্বের বিকারের মধ্যে কোন ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দেয় প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘তার আচরণের সমস্যা হয়। অন্যের ওপর সে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এমনকি তারা যখন বড় হয়ে নিজেদের পরিবারে প্রবেশ করে, সেটাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার মানে দাঁড়ালো, জীবনের শুরু থেকে শিশু অবস্থায় সে যেমন খারাপ থাকে, বড় হয়েও সেসব স্মৃতির কারণে অশান্তিতে থাকে।’
মানসিক রোগের চিকিৎসক মোহাম্মদ আসিফ মনে করেন, পরিবারই যেহেতু অন্যতম ইন্সটিটিউশন, সেহেতু সেখানে শিশু একটি সুস্থির পরিবেশ না পেলে, তার বেড়ে ওঠায় সমস্যা তৈরি হবেই। অভিভাবকদের শিশু পরিচর্যা নিয়ে আমাদের এখানে তেমন কোনও প্রশিক্ষণ নেই। ফলে শিশুর সামনে কী করা যাবে বা যাবে না, এসব নিয়ে আমরা কথা বলি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে শিশুদের ইগনোর করার একটা প্রবণতা কাজ করে। আমাদের ছোট ছোট আচরণ যে তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এটাও আমরা মনে রাখি না। কিন্তু এই একেকটি ইমেজ তার মনে যে প্রভাব ফেলে, সেখান থেকে তার আর বের হওয়ার উপায় থাকে না। কোনও সন্তানের মধ্যে অস্বস্তিকর কিছু দেখা গেলে তাকে কাউন্সিলরের কাছে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি মেডিসিন দেওয়া যেমন দরকার, একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও চিকিৎসা এবং কাউন্সিলিং দরকার।’
বাংলাদেশ সময়: ০:২১:১১ ৪৫৯ বার পঠিত