বঙ্গ-নিউজঃ বাইরে অস্ত্রহাতে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। লাইন ধরে ভিতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। আর্চওয়ে গেট আর মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে প্রত্যেককে। সিসিটিভি দ্বারা পর্যবেক্ষণ তো চলছেই। ভেতরে ও বাইরে সাদা পোশাকেও রয়েছেন অসংখ্য পুলিশ সদস্য। বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া।
দৃশ্যটি রাজধানীর গোপীবাগ রামকৃষ্ণ মিশনের। শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে পূজা মণ্ডপটি ঘিরে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই দৃশ্যটি শুধুমাত্র রামকৃষ্ণ মিশনের নয়, ঢাকার ২২৬টি পূজা মণ্ডপে এমনিভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)। রাজধানীজুড়ে এই নিরাপত্তায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শারদীয় দুর্গা পূজায় মণ্ডপগুলোয় আগত ভক্ত ও আয়োজকরা।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী, রমনা, কলাবাগান, বনানী, রামকৃষ্ণ মিশন পূজা মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য ধর্মের লোকদের প্রচুর সমাগম। সবাইকে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে পূজা মণ্ডপে প্রবেশ করতে হচ্ছে। নিরাপত্তার খাতিয়ে কোনও ব্যাগ, পুটলা, ছুরি, কাঁচি ও যে কোনও ধরনের দাহ্য পদার্থ নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ডিএমপি।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পূজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার কোনও হুমকি না থাকলেও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে সমস্ত নগরী। ২২৬ টি পূজামণ্ডপের মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, ধানমণ্ডি ও বনানী পূজামণ্ডপে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে রমনার কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী ও উত্তরা। এছাড়া নগরীর ৮৮টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৮৩টি তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ এবং ৪৮টি মন্দিরকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। তবে প্রতিটি পূজা মণ্ডপেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও কাজ করছে।
কলাবাগান পূজামণ্ডপে আর্চওয়ে গেট দিয়ে প্রবেশ করছে ভক্তরা
ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পূজাকে কেন্দ্র করে রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কোথায় সামান্য পরিমাণ অন্যায় বা অপরাধ ঘটতে দেওয়া হবে না। এছাড়া বিসর্জনে র্যালি যে যে সড়ক হয়ে যাবে পুরো রাস্তাটিই সিসিটিভি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে। র্যালির দুইপাশে থাকবে নিরাপত্তার বলয়। যা ভেদ করে রাস্তায় কেউ প্রবেশ করতে পারবেনা, বের হতেও পারবেনা।
এছাড়া বিসর্জন র্যা লিতে বাদ্যযন্ত্র বহন ও বিসর্জনকালে অতিউৎসাহী হয়ে পানিতে ঝাঁপ না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
পূজায় নিরাপত্তা র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি পূজা মণ্ডপই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। র্যা বের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী র্যাব সদস্যরাও মাঠে কাজ করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক নিরাপত্তায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ। তিনি বলেন, অন্য যেকোনও বারের তুলনায় পূজারীসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে কঠোর নিরাপত্তার কারণে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট।
একই কথা বলেন, রামকৃষ্ণ মন্দিরে আগত ভক্ত রাহুল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, জায়গায় জায়গায় তল্লাশি হওয়ার পর ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। এতো নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আগে কখনও মন্দিরে আসেনি। তবে সবকিছু দেখে নিজেকে সেফ ভাবতে পারছি এটাই অনেক ভালো লাগছে।
পূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রমনা কালী মন্দির পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাবেক ডিআইজি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ। তিনি বলেন, ভক্তরা নিরাপদের পূজামণ্ডপে আসছে। সিকিউরিটি ব্যবস্থা যেকোনও সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। ভক্তদের ও পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা তাদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।
বনানী পুজামণ্ডপে র্যাবের ডগ স্কোয়াডের তল্লাশী
নিরপত্তার কড়াকড়ির কারণে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে না পারায় ধানমণ্ডি কলাবাগান মাঠের সামনে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দীপক রায়। তিনি বলেন, ক্লাস শেষ করে সব বন্ধুরা মিলে পূজা দেখতে আসছি। কিন্তু সাথে ব্যাগ থাকায় আমাকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হলো না। সবাই ভিতরে গেছে আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।
ধানমণ্ডি থানার এসআই নূর বলেন, এ ধরনের ব্যাগসহ যেকোনও ধরনের থলে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। এব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে এই নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি বলেন, পূজায় নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডিএমপি কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা একাধিকবার মন্দিরগুলো নিরাপত্তা পরিদর্শন করে গেছেন। আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। আমাদের সেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যায় সুশৃঙ্খলভাবে পূজা উদযাপন শেষ হবে। অশুভ শক্তির পতন হবে।
গত ৭ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা শুরু হয়। মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমীর পর আগামীকাল শুক্রবার বিজয়া দশমীতে দেবীর পূজা সমাপন ও বিসর্জন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০:১৪:৪৯ ৪০৭ বার পঠিত