বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সোনালি আঁশের দুর্দিন কাটছেই না। এক সময়কার সোনালি আঁশ পাটকে এখন কৃষক দেখছেন গলার ফাঁস হিসেবে। এ কারণে দিন দিন কমছে পাটের আবাদ এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি। সেই সাথে বাড়ছে পাটচাষিদের ভোগান্তি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রফতানি কমেছে ১৮ শতাংশ। কমেছে পাট আমদানিকারক দেশ ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। এ নিয়ে দেশের লাখ লাখ পাটচাষি ও ুদ্র ব্যবসায়ীর চরম দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত হলেও সরকার নির্বিকার।রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২৪৩ মিলিয়ন ডলার ল্যমাত্রার বিপরীতে কাঁচা পাট রফতানি হয়েছে মাত্র ১৯৯ মিলিয়ন ডলার। এ সময়ের মধ্যে ল্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি পড়েছে ১৮ শতাংশ রফতানি। কাঁচা পাট রফতানির এ পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের ২২৫ মিলিয়ন ডলারের চেয়েও ১২ শতাংশ কম বলে জানায় ইপিবি। অথচ দেশের সার্বিক রফতানিতে এ সময়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ) সূত্রে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১৫ লাখ ৭ হাজার ৪০৯ বেল কাঁচা পাট রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৪ বেল। গত বছর একই সময়ে ২৩টি দেশে রফতানিকারক ছিল ১৬৪টি প্রতিষ্ঠান। এবার ১২৯টি প্রতিষ্ঠান পাট রফতানি করেছে ২০টি দেশে। পাটের এই ভয়াবহ চিত্র দেখে হতাশ সংশ্লিষ্টরা।
সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, কাঁচা পাট রফতানির েেত্র এবারো ভারতের অবস্থান শীর্ষে। এবারো দেশটিতে রফতানি কিছুটা বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের ৯ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে এ পণ্য রফতানি হয়েছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৬ বেল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৫১ বেল। বাংলাবান্দা বন্দর দিয়ে গত অর্থবছরে নেপালে রফতানি হয়েছিল ৪৬ হাজার ৬৫৪ বেল। এবার রফতানি হয়েছে ৮৬ হাজার ৫৫৬ বেল। বেনাপোল ও বাংলাবান্দা বন্দর দিয়ে ভারত ও নেপালে রফতানি বাড়লেও মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চীন, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে পাট রফতানি কমেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে মংলা বন্দর দিয়ে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৫২ বেল ও চট্টগ্রাম দিয়ে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯২ বেল রফতানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানি হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৮ ও ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ বেল। এবার চীনে রফতানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৯ মাসে রফতানি হয়েছিল ৫ লাখ ১ হাজার ৩৫৬ বেল। চলতি অর্থবছরে গেছে মাত্র ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৫ বেল।
পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার ল্েয সম্প্রতি সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ করেছিল পাট কমিশন। কিন্তু সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের কোনো উদ্যোগই ল করা যায়নি, যার কারণে কৃষক পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এবং পাটের অস্তিত্ব পড়েছে হুমকির মুখে। ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন পুঁজিসঙ্কটে। মহাজোট সরকার কয়েকটি বন্ধ পাটকল চালু করে এই খাতকে পুনর্বার চাঙ্গা করার বাহবা নেয়। কিন্তু পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার যদি না বাড়ে এবং রফতানিচিত্র উজ্জ্বল করা না গেলে এর ইতিবাচক প্রভাব আশা করার সুযোগ নেই বলে জানান বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আরজু রহমান ভূঁইয়া বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতে কাঁচা পাটের দর বেড়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও ছিল ভালো। কিন্তু চীনে রফতানি ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে রফতানি আয় কমেছে। তিনি বলেন, দেশে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই সেই আইন মানছে না। আইনটি কার্যকর হলে অভ্যন্তরীণ বাজারেই পাটের ব্যবহার ও চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কৃষক যাতে উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য পান তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পাট কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেরও দাবি জানান আরজু রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫১:৫২ ৫০০ বার পঠিত