বঙ্গ-নিউজঃ হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার অন্যতম বর্ণাঢ্য পর্ব কুমারী পূজা আজ অনুষ্ঠিত হলো মহা-আড়ম্বরে। দেবী দুর্গার পার্থিব প্রতিনিধি হিসেবে কুমারীকে পূজা করায় এই পর্বের মাহাত্ম্য অনেক বেশি বলে মনে করেন ভক্তরা।
দেশের সব মণ্ডপে এ পূজার আয়োজন করা হয় না। শুধু রামকৃষ্ণ মিশনের কিছু কিছু শাখা মহাষ্টমীর দিনে এ পূজার আয়োজন করে থাকে। ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, হবিগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, যশোর জেলায় হয়ে থাকে কুমারী পূজা। এ ছাড়া মহানবমীর দিন নেত্রকোনায় এ পূজা হয়ে থাকে।
রবিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গাপূজা মণ্ডপের সামনের অংশে একটি আসনে শর্বাণী ভট্টার্য (বিদ্যা) নামের এক কুমারীকে দেবীর আসনে বসানো হয়। এরপর পূজার মন্ত্র পাঠ করে ভক্তদের মধ্যে চরণামৃত বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
দুর্গাপূজার অন্যতম পর্ব কুমারী পূজা। শাস্ত্র অনুসারে এক বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করা যায়।
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী- এই তিন দিনই দেবী পূজার অন্তে কোনো কুমারী বালিকাকে নতুন বস্ত্র পরিধান করিয়ে দেবীজ্ঞানে পূজা করার রীতি প্রচলিত।
শনিবার মহাসপ্তমী পূজা শেষ হওয়ার পর থেকেই চলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ কুমারী পূজার আয়োজন। কুমারী পূজার মূল ভক্ত হলো সনাতন ধর্মের কিশোরীরা। এ ছাড়া সব বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেয় রামকৃষ্ণ মিশনের কুমারী পুজায়। তারা সবাই সমস্বরে দেবী দুর্গার আসনে অধিষ্ঠিত কুমারী বিদ্যাকে জয় ধ্বনি দিতে থাকে।
রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা করতে আসা পুণ্যার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্গার মহাশক্তি যাতে সমাজের প্রতিটি নারীর ভেতরে জাগ্রত হয়, সেই লক্ষ্যেই মূলত কুমারী পূজা করা হয়।
সনাতন ধর্মগ্রন্থ পুরাণের বর্ণনা থেকে জানা যায়, দেবতাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে দেবী চণ্ডীকা কুমারী কণ্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিল। তবে অনেকে মনে করেন দুর্গাপূজায় কুমারী পূজা সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনা মতে।
রামকৃষ্ণ মিশনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় শক্তিপীঠগুলোতে কুমারী পূজার রীতি প্রচলিত ছিল। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে কুমারী পূজার কথা উল্লেখ আছে। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, দেবীর কুমারী নাম অনেক পুরনো। একইভাবে তার আরাধনা ও পূজার রীতিনীতিও অনেক প্রাচীন।
নটর ডেম কলেজের গণিত বিষয়ের শিক্ষক সজল কান্তি রুদ্র এসেছেন রামকৃষ্ণ মিশনের কুমারী পূজায়। তিনি ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে কুমারী পূজার তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, কুমারী পূজা নারী তথা মায়েদের সতীত্ব বজায় রাখার যে ত্যাগ, তারই নিদর্শনস্বরূপ এ কুমারী পুজা করা হয়ে থাকে। দেবী দুর্গাকে তার প্রতিনিধি হিসেবে শক্তিদায়িনী মাকে মহাষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা করা হয়। এ পূজার মূল লক্ষ্য হলো আত্মত্যাগ ও নিজেদের সতীত্ব ধরে রাখা।
রামকৃষ্ণ মিশনের আর এক পুণ্যার্থী রত্না সরকার বলেন, ‘কুমারী হলো শক্তির প্রতীক। প্রতিটি মায়ের মধ্যে আমরা শুভ শক্তি দেখতে পাই। কুমারী হলো শুদ্ধ আত্মা। প্রতিটি মায়ের মধ্যে এই শুভশক্তি বিরাজ করে।’
কুমারী পূজা সম্পর্কে মিশনের প্রধান মহারাজ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ বলেন, বৃহদ্ধর্মপুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী দেবতাদের স্তরে প্রসন্ন হয়ে দেবী চণ্ডিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণে বিস্তারিত এ বিষয় উল্লেখ আছে। তবে অনেকে মনে করেন যে, দুর্গাপূজায় কুমারী পূজা সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনামতে। একসময় শক্তিপীঠগুলোতে কুমারী পূজার রীতি প্রচলিত ছিল। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেও কুমারীর কথা উল্লেখ আছে। আর এ থেকে অনুমান করা কঠিন নয় যে, দেবীর কুমারী নাম অনেক পুরনো।
তিনি অরো বলেন, দেবীজ্ঞানে যেকোনো কুমারীই পূজনীয়, তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত। তন্ত্রানুসারে এক থেকে ষোল বছর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ বালিকাদের কুমারী পূজার জন্য নির্বাচিত করা যায়। তবে অন্য জাতির কন্যাকেও কুমারীরূপে পূজা করতে বাধা নেই। কিন্তু অবশ্যই তাদের ঋতুবতী হওয়া চলবে না। ধর্মের বিধান।
কুমার পূজার তত্ত্ব নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সাবেক মহারাজ স্বামী অমেয়আনন্দ ঢাকাটাইমসকে বলেন, কুমারী পূজার মাহাত্ম্য হলো মা দুর্গার মহাশক্তির প্রতি আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য জীবিত রূপকে পূজা করি। সহজ-সরল শুদ্ধ কুমারীর প্রতীক দুর্গার পূজা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৯:৪০ ৩৬৯ বার পঠিত