১২ ঘণ্টা পর জঙ্গি আস্তানা থেকে মা-শিশু উদ্ধার

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ১২ ঘণ্টা পর জঙ্গি আস্তানা থেকে মা-শিশু উদ্ধার
রবিবার, ৯ অক্টোবর ২০১৬



316.jpg
বঙ্গ-নিউজঃ দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা আটকে থাকার পর গাজীপুরের পাতারটেকে জঙ্গি আস্তানা থেকে এক মা ও তার শিশুকে নিরাপদে উদ্ধার করেছে পুলিশ। দোতলা ভবনটির নিচ তলা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও জঙ্গিদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় তারা এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। গ্রেনেড ও গুলির শব্দে তিন বছরের শিশুটি এতোই ভয় পেয়েছে যে, সে তার মায়ের কোল থেকে কিছুতেই নামছে না।

শনিবার রাত নয়টায় অভিযান শেষে জঙ্গিদের লাশ হাসপাতালে পাঠানোর পর ভবনের নীচ তলার ফ্ল্যাট থেকে মা আয়েশা বেগম ও তার তিন বছরের মেয়ে নুরুন্নাহারকে বাইরে নিয়ে আসা হয়। এরপর মা ও মেয়েকে তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সবুর বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘তারা নীচ তলার একটি ফ্ল্যাটের রুমে ছিলেন। স্বজনদের কাছে তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা ভালো আছেন।’

এর আগে শনিবার সকাল ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের পাতারটেকের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের শ্বাসরুদ্ধকর ১২ ঘন্টার অভিযান ‘অপারেশন শরতের তুফান’-এ ওই আস্তানায় সাত ‘জঙ্গি’ নিহত হয়। অভিযানে কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর সোয়াত, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, গাজীপুরে জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অংশ নেন। ‘অপারেশন শরতের তুফানে’ নিহত সাত জঙ্গির ছবি প্রকাশ করা হলেও তাদের এখনও নাম, ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশ করতে পারেনি পুলিশ। তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

জঙ্গিদের লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

অভিযান শুরুর আগে পাতারটেকের ওই বাড়িটি শনিবার সকাল ৮টার দিকেই ঘিরে ফেলে পুলিশ। দোকান-পাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটে থাকা ভাড়াটেদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হলেও আয়েশা বেগম তার মেয়েকে নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলেন। পুলিশের ডাকাডাকি শুনতে পাননি বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন তিনি।

আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমি গ্রামের বাড়িতে থাকি। আমার স্বামী সোবহান শেখ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। নিচ তলার পূর্বপাশের ফ্ল্যাটের একটি রুম দুহাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে মূলত আমার স্বামী থাকেন। আমার খালাতো ভাইও তার সঙ্গে ওই রুমে থাকেন। আমি কয়েকদিন আগে বেড়াতে এসেছি। সকালে ঘুমিয়ে ছিলাম। তার আগে আমার স্বামী অফিসে চলে যান।’

আয়েশা বলেন, ‘হঠাৎ ১১ টার দিকে প্রথমে গোলাগুলির শব্দ পাই। এরপর ঘুম থেকে জেগে উঠি। বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দেখতে পাই, বাইরে থেকে দরজা লাগানো। এরপর আমি ফোনে আমার স্বামীকে বিষয়টি জানাই। তার কাছ থেকে শুনি যে, বাড়িতে জঙ্গি ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আমাকে চুপ করে ঘরের ভেতরে বসে থাকতে বললেন। আমাদের এক আত্মীয় আছেন পুলিশে, তাকেও আমার স্বামী বিষয়টি জানান।’

তিনি বলেন, ‘দুপুরের দিকে আর কোনও শব্দ পাইনি। হঠাৎ সাড়ে তিনটার পর আবার শব্দ। কিছুক্ষণ থেমে থেমে শব্দ হচ্ছিল। তখন মেয়েও কান্না করে। আমিও কান্না করি। দোয়া পড়তে থাকি। মনে হচ্ছিল, ভবনটি ভেঙে মাথায় পড়বে। সারাদিন রুমের এক কোনে গিয়ে বসেছিলাম। মেয়ে কান্না থামাচ্ছিল না। আমিও কান্না করতে ছিলাম। বারবার সবাইকে ফোনে জানিয়েছি। তবে তারা সবাই বলেছেন, চুপ করে থাকতে। আমি এমন ভয় আর কখনও পাইনি। ওই বাসায় আমি আর যাবো না।’

আয়েশা বেগম বলেন, ‘সকাল থেকে মেয়ে এবং আমি কিছুই খাইনি। চারটার পর আর কোনও গুলির শব্দ পাইনি। এরপর ফোনে জানতে পারি গোলাগুলি শেষ। তারপর রাত ৯টার দিকে পুলিশ আমাদের বের করে নিয়ে আসে। কখনও বুঝিনি এখানে এতো জঙ্গি আছে।এখন আমি কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাতারটেক এলাকার একটি জলাশয়ের পাশেই অবস্থিত দোতলা ভবন। বাড়িটির মালিক সৌদি প্রবাসী সোলায়মান সরকার। তার ভাই কলেজ শিক্ষক ওসমান গনি বাড়িটি দেখা শোনা করেন। তিনিও সেখানে থাকেন না। দুই ইউনিটের ভবনে মোট চারটি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে তিনটি করে রুম। পরিবার ও ব্যাচেলর মিলিয়ে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের প্রতিটি রুমে আলাদা পরিবার ও ব্যাচেলররা থাকেন। নিচতলার ফ্ল্যাটের একটি কক্ষের ভাড়াটে জাহিদুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

জঙ্গি আস্তানা ছিল এ বাড়ির দোতলায়

জাহিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাড়িটির দ্বিতীয় তলার পূর্বপাশের ফ্ল্যাটটি তিনমাস আগে ওরা ভাড়া নেয়। তবে তাদের খুব কমই দেখা যেত। তারা বাসা থেকে বের হতো না।’

শুক্কুর নামে ওই বাড়ির আরেক ভাড়াটিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমি পিকআপ ভ্যান চালাই। গত কয়েকদিন আগে দোতালার ফ্ল্যাটের সামনে একজোড়া স্যান্ডেল দেখে বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, দোতালার পূর্বপাশের ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া হয়েছে কিনা? তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, ‘ভাড়া হয়েছে।’ তবে আমি ভাড়াটিয়াদের কখনও দেখিনি। সকালে আমার স্ত্রী ও সন্তানকে পুলিশ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর পুলিশ অভিযান চালায়।”

সিটিটিসি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। এখানে শোলাকিয়া হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও ঢাকা বিভাগের নব্য জেএমবির প্রধান ফরিদুল ইসলাম আকাশসহ সাতজন নিহত হয়েছে। বাকিদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

পুলিশের অভিযানের পর পাতারটেক এলাকার গণ্যমান্য পাঁচ ব্যক্তিকে জঙ্গিদের লাশ দেখায় পুলিশ। এদের মধ্যে দুজন হলেন, আলফাজ উদ্দিন পলাং ও মোহাম্মদ আলী।

আলফাজ উদ্দিন পলাং বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘পুলিশ লাশগুলো আমাদের দেখিয়েছে। তবে কাউকেই আমরা চিনি না। এর আগেও দেখছি বলে মনে হচ্ছে না। ভেতরের একটি রুমে এক জায়গায় পাঁচজনের এবং আরেক জায়গায় দুজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখছি। দেয়ালে ও ফ্লরে অনেক রক্ত ছিল। ফ্ল্যাটের দরজার সামনেই তিন-চারটা ট্রাভেল ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেছি।’

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ফ্ল্যাটের ভেতরে কোনও আসবাবপত্র নেই। কেবল লুঙ্গি ও গামছা দেখেছি। বাথরুমে একটি লাল প্ল্যাস্টিকের বালতি দেখেছি। এছাড়া, তেমন কোনও জিনিসপত্র দেখিনি। তবে আমরা সব রুমে যেতে পারিনি। মাত্র দুই রুমে গিয়েছি। জঙ্গিদের কারও লাশ আমরা চিনি না।’

বাড়িটির সামনের সড়কেই ‘নানা-নাতি’ নামে মুদি দোকানের মালিক মফিজ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকাল ৯ টার দিকে পুলিশ আমাকে দোকান বন্ধ করে দিতে বলে। আমি দোকান বন্ধ করি। এর আগে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে একজন-দুজন করে পুলিশ ওই বাড়ি ও আমার দোকানের সামনে হাটা চলা করে। ১১ টার দিকে গুলির শব্দ পাই। এরপর বিকালেও শব্দ পাই।’ ওই বাসার ভাড়াটিয়াদের তিনি কখনও দেখেননি বলেও জানান।

এদিকে, শনিবার সকালে গাজীপুরের পশ্চিম হারিনালে আরেকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। সেখানেও অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারসহ অভিযান পরবর্তী কার্যক্রমগুলো চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। আশুলিয়াতে র‌্যাবের আরেক অভিযানে নব্য জেএমবির অর্থদাতা আব্দুর রহমান নিহত হয়। এসময় তার আস্তানা থেকে ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। একইদিন টাঙ্গাইলে র‌্যাবের অভিযানে আরও দুই জেএমবির সদস্য নিহত হয়। নিহত জঙ্গিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ব্লকরেইড পরিচালনা করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সফল অভিযান চালানো হয়েছে।’

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৪:২৫   ৩১৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আজকের সকল পত্রিকা’র আরও খবর


নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন হাজী মোহাম্মদ হারিজ খান
সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা
আশুলিয়ায় খুশবু রেস্তোরাঁ উদ্বোধন
ধর্মপাশায় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচী
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের আন্তরিক হতে হবে: শেখ হাসিনা
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন

আর্কাইভ