বঙ্গ-নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী করেছে তাদেরও বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কারণ তারা যুদ্ধাপরাধী। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী করেছে তাদের বিচার কেন হবে না? তাদেরও বিচার হওয়া উচিত। যে অপরাধ করে তারা যেমন অপরাধী আর যারা অপরাধকে সমর্থন করে তারাও তেমন অপরাধী।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের ১২তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতির কাছে দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করছি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা এ বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে হত্যার পর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের যে যাত্রা শুরু হয় তখন এই অবৈধ ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তাদেরকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা করেছিল। এমনকি খালেদা জিয়া যাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার হয়েছে, বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে তাদের হাতে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দিয়েছিল। তাদের মন্ত্রী করা হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের অত্যন্ত অবাক করে দেয়। একটি মেয়েকে জনসম্মুখে কোপানো হয়েছে, মানুষ দাঁড়িয়ে তা দেখেছে। কেউ ভিডিও করছে, মোবাইল ফোনে ছবি তুলছে, কেউ মেয়েটাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। কেন এই মানবিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে গেল, কেন ওই মেয়েটিকে বাঁচাতে এগিয়ে গেল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীকে ধরা হয়েছে। যারাই অপরাধী, যে অপরাধই করুক সে শাস্তি পাবেই। তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
তিনি বলেন, ‘কোন কোন পত্রিকায় এসেছে ওই ছেলেটি অমুক দল, তমুক দল করে। এখানে কোন দলীয় কোন্দলের বিষয় ছিল না বা দল হিসেবে তাকে কেউ হত্যা করতে যায়নি। পত্রিকায় এসেছে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সে খাদিজাকে হত্যা করতে গেছে। এজন্য একটা মানুষকে হত্যা করতে হবে? পত্রিকা এবং কিছু লোক এটাকে দলীয় হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করছে। দলীয় হিসেবে তাদেরকে কেউ প্রশ্রয় দিচ্ছে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি অনেক নেতারা এ ব্যাপারে অনেক কথা বলছেন। তারা যখন জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে সে কথা কি তারা ভুলে যাচ্ছে। পুলিশকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে মেরে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। তাও আমরা দেখেছি। এভাবে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করা বিএনপি-জামায়াতই শিখিয়েছে। এরাই পথ দেখিয়েছে। এই নৃশংসতা করে করে মানুষের ভেতরে একটা পশুত্বের জন্ম দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কে কোন দল করে তা বিবেচ্য বিষয় নয়, অপরাধ যে করবে তার বিচার হবেই। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে। যারাই এ জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হচ্ছে এবং হবে। তিনি অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় শিক্ষক ও দেশবাসীকে তাদের সন্তান ও ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা এখন প্রমাণিত। বিশ্বের অনেক দেশ এই স্বীকৃতি দিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশ এগিয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে, বিনোয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৪৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্রের হার অনেক হ্রাস পেয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে মধ্যম আয়ে পৌঁছবে। ইতোমধ্যে নিম্নমধ্যবিত্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিছে। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। কারো কাছে মাথা নত করবো না।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছি। প্রযুক্তি ব্যবহারে দেশ অনেক দুর এগিয়েছে। বিদেশে বসে ৫১টি ফাইলে স্বাক্ষর করেছি। এতেই বুঝা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বাংলাদেশ কতদূর এগিয়েছে। আমাদের যতটুকু অর্জন তা দেশের মানুষের। কারণ তারা ভোট দিয়ে আমাদের সরকারে পাঠিয়েছে বলেই আমরা এই পর্যায়ে এগিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘মা হিসেবেও আমি গর্বিত। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি তার কাছ থেকেই জেনেছি। সেও প্রযুক্তির জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও অটিজম নিয়ে কাজ করছে। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সে কাজ করছে। আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি ফাউন্ডেশন তৈরী করে দিয়েছি। তারা এখন সমাজে অবহেলিত নয়। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও অটিজম বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আমার বোনেরও তিনটি সন্তান। তাঁর তিনটি সন্তান তিনটি সোনার টুকরা। তাঁর মেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এখন এমপি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত গাড়ীতে আগুণ দিয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করেছে। ২০১৫ সালে বিএনপি নেত্রী সরকার পতনের প্রতিজ্ঞা করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যারা মানুষ পুড়িয়েছে তাদের কি বিচার হবে না। তিনি বলেন, যারা মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদের বিচার বাংলার মাটিতে অবশ্যই হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় তা আমি কামনা করি। ভারত-পাকিস্তান উভয়ে যেন সংযত আচরণ করে এ জন্য তিনি আহবান জানান।
তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে অবশ্যই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাবো। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মৎস্য উৎপাদন বিশেষ করে ইলিশের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিম ছাড়ার সময়ে, অর্থ্যাৎ নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, দেশে এখন আর হাহাকার নেই। দেশ যেন একটি দারিদ্রমুক্ত দেশ হতে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সংসদে থাকতে যা বলতো তা কান পেতে শুনা যেত না। বর্তমান বিরোধী দল সংসদীয় গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে অবদান রাখছেন। এজন্য বিরোধী দলকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
এ সময় স্পিকারকে প্রধানমন্ত্রী জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান এবং তার দীর্ঘায়ু ও সফলতা কামনা করেন। বাসস
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৭:২৯ ৪০৮ বার পঠিত