বঙ্গ-নিউজঃ পানি আর বালির সাথে বয়ে আসা নুড়ি পাথরের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অর্ধ শতাধিক গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আন্তঃসীমান্ত নদী মহানন্দার বুক থেকে পাথর উত্তোলনের উপরই এদের জীবন অতিবাহিত হয়।
ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সর্বউত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করেছে বালি আর পাথুরে নদী মহানন্দা। এর পর ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবার ঢুকে গেছে ভারতে । এ নদী ভারতের দার্জিলিংয়ের ২০৬০ মিটার উুঁচু মহালিদ্রাম পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বৃষ্টির পানিই এ নদীর উৎস। বর্ষার সময় দু’কূল প্লাবিত করে প্রবাহিতের সময় মহানন্দার স্রোতে ভেসে আসে ছোট, বড় এবং মাঝারি ধরণের নুড়ি পাথর । সেই পাথরের সাথেই জড়িয়ে গেছে এই এলাকার অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জীবন। মহানন্দার পাথরেই হয়েছে এসব মানুষের কর্মসংস্থান। জীবন মান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে মহানন্দার এই নুড়ি পাথর। বর্ষার সময় দু’কূল প্লাবিত করলেও চৈত্র-বৈশাখে এ নদী অনেকটা মরা নদীতে পরিণত হয়। উজানে ভারতের ফুলবাড়ি নামক স্থানে বাঁধ দিয়ে মহানন্দার গতি প্রবাহকে আটকে দেওয়ার ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানে ভরা বর্ষাতেও থাকে হাটু পানি । জাগছে চর। অনেকে আশংকা করছেন আর কিছুদিন পরেই হারিয়ে যাবে এই নদী। ফলে হয়ত বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাতাসে ফুলানো ট্রাকের চাকার টিউব, লোহার চালানি, পাথর নির্ধারণের জন্য লোহার রড নিয়ে কোথাও এক বুক, কোথাও বা হাঁটু পানির নিচ থেকে শ্রমিকেরা এই নুড়ি পাথর সংগ্রহ করছেন। বছরের প্রতিদিনই চলে পাথর সংগ্রহের কাজ। এর পর স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে এই পাথর বিক্রি করেন তারা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন এই পাথর । এরপর বড় ব্যবসায়ীরা সারাদেশে সরবরাহ করে থাকেন। গভীর শীত আর বন্যা হলেই কেবল থেমে যায় পাথর সংগ্রহ ।
একজন শ্রমিক গড়ে প্রতিদিন ২৫থেকে ৩০ সিএফটি পাথর উত্তোলন করেন। যার বাজারমূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। মহানন্দার পাথরের এই বিপুল কর্মকাণ্ডে নারীরাও খুঁজে পেয়েছে কর্মসংস্থান। সংসারের কাজ সামলে সকালেই দুপুরের খাবার সাথে নিয়ে পাথর চালুনির কাজে নেমে পড়েন তারা। তবে বাজারমূল্য যাই হোক, শ্রমিকদের পকেটে আসে দৈনি দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা। এ কারণে পাথর ও শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
পাথর শ্রমিক আতিয়ার রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সারাবছরই এই মহানন্দায় পাথর সংগ্রহের কাজ করে সংসার চালাই। মহাজনেরা পাথরের সঠিক মূল্য দেয় না। পাথরের মূল্য বাড়লে ভাল হয়। সর্দারপাড়া গ্রামের নারী শ্রমিক মোমেনা বেগম বলেন, পাথর ছাকনির কাজ করি। পুরুষের চেয়ে মুজুরি কম। সারাদিন কাজ করে দুই-আড়াইশ’ টাকা পাই।
এদিকে মহানন্দার এই নুড়ি পাথরের ব্যবসা নিয়ে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য জীবন পার করছেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে কিনে চড়া দামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছেন তারা। ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, মহনন্দায় শ্রমিকেরা পাথর সংগ্রহ করে। আমরা তাদের কাছ থেকে কিনে নেই। এর পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করি । বিভিন্ন এলাকার ব্রীজ, কালভার্ট এবং বিল্ডিং নির্মানে এই পাথর ব্যবহৃত হয়।
তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহানন্দা এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবিকার সন্ধান দিয়েছে । প্রায় ৩০ হাজার খেটে খাওয়া মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে এ নদীর স্রোতে ভেসে আসা ছোট ছোট পাথরগুলি। এ নদী হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । এমনটি ঘটলে এই নদীকেন্দ্রীক গড়ে ওঠা হাজার হাজার মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩১:৪০ ৩২১ বার পঠিত