বঙ্গ-নিউজঃ খাদিজা বেগম নার্গিস
৭২ ঘণ্টা কখন শেষ হবে, কখন শেষ হবে অপেক্ষা। সবাই জানতে চান। তারা জানতে চান তাদের জন্য নয়। জানতে চান নার্গিসের জন্য। সিলেটের খাদিজা বেগম নার্গিস যে এখন অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন, আছেন জীবনসংকটে। চিকিৎসকরা বলছেন, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। শুধু অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে খাদিজার অস্ত্রোপচার শেষ হয়েছে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায়। সেই হিসেবে ৭২ ঘণ্টা শেষ হবে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায়। কিন্তু এত সময় অপেক্ষা করতে চাইছেন না কেউ। সবার প্রশ্ন নার্গিস এখন কেমন আছেন? তার জ্ঞান ফিরেছে? সে কথা বলবে তো? সে ফিরে আসবে তো।
সংবাদ মাধ্যমে টেলিফোনে প্রশ্ন। রাস্তায় সাধারণ মানুষের প্রশ্ন। সংবাদকর্মীদের কাছে পরিচিতজনের প্রশ্ন- নার্গিসের সর্বশেষ খবর কি?
সিলেটের নার্গিস এখন সবার নার্গিস। বাংলাদেশের নার্গিস। পুরো বাংলাদেশে এখন তার সুস্থতা কামনায়, ফিরে আসার প্রার্থনায় আনত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে এখন নার্গিস ছাড়া যেন কোন পোস্ট নেই। নরপিশাচ বদরুলের প্রতি ঘৃণা আর নার্গিসের জন্য ভালবাসার সমান্তরাল প্রকাশ সবখানে।
বুধবার সকালেও নার্গিসের অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন। তিনি মঙ্গলবার অস্ত্রোপচারের পর যা বলেছিলেন তাই ফের বলেছেন। বলেছেন, ‘৭২ ঘণ্টা শেষ না হলে কিছু বলা সম্ভব না। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তবে আমরা আমরা এখনও আশাবাদী।’
স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খাদিজা বেগম নার্গিস
নার্গিসের মাথা এবং হাতে অসংখ্য চাপাতির কোপ। চিকিৎসকরা বলছেন ,‘ আমরা সেই দৃশ্য আপনাদের কাছে বর্ণনা করতে পারবো না। আমরা নিজেরাও হতভম্ভ তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে। এমন নির্মম ঘটনা আমরা চিকিৎসকরাও আগে দেখিনি।’
নার্গিসকে বিদেশে পাঠানোর প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসার জন্য। কিন্তু তাকে বিদেশে পাঠানোরও সুযোগ নেই এই মুহূর্তে। বিদেশে নেওয়ার জন্য যে শারীরিক প্রস্তুতি দরকার তাও তার নেই।
সিলেটে সোমবার বিকেলে নার্গিসকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। রাতেই তাকে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার জাকিয়া আহমেদ তার চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিয়ে রিপোর্ট করছেন। জাকিয়া বুধবার সকালে জানান, ‘স্কয়ার হাসপাতালে ৬ তলার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নার্গিস এখন আছেন। সেখানে চিকিৎসকরা কাউকে যেতে দিচ্ছেন না। তারা মাঝে মাঝে সাংবাদিকদের ডেকে ব্রিফ করেন। কারণ সারাদেশের মানুষ নার্গিসের অবস্থা জানতে চান।’
স্কয়ার হাসপাতালে আরও অনেক রোগী আছেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা আসছেন। কিন্তু তারাও এখন সবার আগে নার্গিসের খোঁজ জানতে চান। সাংবাদিকদের দেখলেই ঘিরে ধরেন। সবাই সমস্বরে জানতে চান,‘ নার্গিসের অবস্থা এখন কেমন। ডাক্তাররা কী বলছেন। সে ভালো হবে তো। ফিরে আসবে মেয়েটি?’
মঙ্গলবার তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম নার্গিসের মাথায় অস্ত্রোপচার করে। তারাও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাধারণ থিওরি ভুলে নার্গিসের জন্য কাতর। সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না। সব কথা বলতে পারছেন না। ডা.মির্জা নাজিম উদ্দিনের মুখে শুধু একটি কথাই বার বার ফিরে আসে ‘নৃশংস-নৃশংস’।
স্কয়ার হাসপাতালের ছয় তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের পাশের একটি কক্ষে আছেন নার্গিসের চাচা আব্দুল কুদ্দুস এবং মামা আব্দুল বাসেত। তাদের মুখে ভাষা নেই। চিকিৎসকদের দেখলেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। প্রথম দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও এখন আর তাদের ভাষা নেই। তাদের চোখে অজানা আশঙ্কা। তারও জানেন না ৭২ ঘণ্টা পর কী খবর অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
চিকিৎসকরা আশা হারাননি। ‘ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায়ও তারা জীবনের জন্য স্বপ্ন দেখেন। জীবন ফিরিয়ে আনার সব চেষ্টা করছেন।
আর আমরাও চাই, দেশের সব মানুষের একটিই প্রার্থনা এখন-মেয়েটি ফিরে আসুক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৭:৩৭ ৩১১ বার পঠিত