ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল, অনিয়মের আখড়া!

Home Page » প্রথমপাতা » ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল, অনিয়মের আখড়া!
বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০১৬



38.jpgবঙ্গ-নিউজঃ অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না, আবার থাকলেও রোগী দেখেন না। বেশির ভাগ রোগী দেখেন ইন্টার্নি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন তারা। প্রায়ই চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন রোগীদের। নানা ছুতোয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন।মিরপুরে অবস্থিত এই সরকারি হাসপাতালটির বিরুদ্ধে এরকম হাজারো অভিযোগ রয়েছে। ফলে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানে আসা রোগীরা।‘এখানে সবাই স্টুডেন্ট,কোনও ডাক্তার নাই।এক জনের কাছে গেলে তিনি কন ওনার কাছে যাও, তার কাছে গেলে আরেকজনের কাছে পাঠায়ে দেয়,এমন ঠেলাঠেলি চলতে থাকে। আবার কাল যে ডাক্তার দেখেছেন, তিনি যদি আজ না থাকেন, তাহলে অন্য ডাক্তার দেখতে চান।’ কথাগুলো বলছিলেন আদাবর থেকে আসা শাহিনুর বেগম।

কেবল শাহিনুর বেগমই নন,মিরপুরের নূর নবী সিদ্দিক, রংপুরের মহসিন আহমেদ, মালিবাগের জেবুন্নেসা রহমানসহ আরও অনেক রোগী এবং রোগীদের স্বজনরা বিভিন্ন অভিযোগ করলেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

তারা বলেন, সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্তেও গজ,ব্যান্ডেজ, হ্যান্ড গ্লাভস, ওষুধ সব কিছুর জন্য এখানকার লোকদের টাকা দিতে হয়। আর চিকিৎসকরা হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে রোগীদের রেফার করেন বাইরের ক্লিনিকে।

২ অক্টোবর ঢাকা ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে রোগীদের ভোগান্তি দেখা যায়। তারা এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে যাচ্ছেন, কিন্তু কোথাও সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বদলে চিকিৎসা দিচ্ছেন শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা।

হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলায় শিশু দন্ত বিভাগে প্রায় সোয়া দু’ঘন্টা বসে থেকেও কোনও সিনিয়র চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি।শিশুদের যাবতীয় চিকিৎসা করছেন কয়েকজন শিক্ষানবীশ চিকিৎসক। দেখা গেলো, দু’মিনিটে একটি শিশুকে দেখার পর তারা গল্পে মেতেছেন।বাইরে তখনও রোগী নিয়ে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিশুর মা বলেন, আমার ছেলেটা ব্যথায় কাতরাচ্ছে। আর দেখেন, ওনারা গল্প করছেন। বাচ্চাগুলো কি ওদের গিনিপিগ? নিয়ম অনুযায়ী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে সিনিয়র ডাক্তারও থাকার কথা। কিন্তু এখানে সিনিয়ররা থাকেন না। তাদের পাওয়াই যায় না। ফলে এই ইন্টার্নরা নিজেদের ইচ্ছা মতো কাজ করেন, বললেন শিশুটির মা।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নূর নবী সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২০ আগস্ট বহির্বিভাগে টিকিট কেটে সিরিয়াল অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে যাবার পর, একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক আমাকে স্লিপ দিয়ে পাঠান স্কেলিং সেকশনে।সেখানে আমাকে স্কেলিং -এর জন্য তারিখ দেওয়া হয় আগামী ৫ নভেম্বরের। এরপর সেখান থেকে অন্য সেকশনে পাঠানো হয়। সেখানে আরেক নবীন চিকিৎসক দাঁত দেখে ওপিজি নামে একটি টেস্ট করাতে বলেন এবং পাশের এক ক্লিনিকের নাম ঠিকানা লিখে দেন। সবচেয়ে অবাক হয়েছি,এসব ডাক্তারদের টেবিলে আমি রেমিকন হেলথ কেয়ার, মেডি ফেয়ার, পপুলার ডায়াগনস্টিকের রেফার করা প্যাড দেখেছি।’

নূর নবী সিদ্দিক আরও বলেন, ‘‘চিকিৎসক আমাকে হাসপাতালের বাইরে স্কেলিং করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে। এক রোগীর ব্যবহৃত উপকরণ আরেক রোগীর জন্য ব্যবহার করা হয়। আমি যা বোঝাতে চেয়েছি মনে হয় আপনি তা বুঝতে পেরেছেন।’ আসলে এখানকার চিকিৎসকরা সব জায়গা থেকে কমিশন পায়। কমিশনের লোভে তারা এখানে রোগী না দেখে পাঠাচ্ছেন বাইরের ক্লিনিকগুলোতে।”

মেয়েকে নিয়ে আসা শাহিনুর বেগম বলেন, ‘এখানে বড় ডাক্তার দেখি নাই কখনও।এখানে যখনই আসি দেখি ছাত্ররাই (শিক্ষার্থী) সবসময় কাজ করে। এর আগে দেখেছি, একটা বাচ্চার দাঁতের ভেতরে ছিদ্র (ড্রিল)করতে গিয়ে অনেক বেশি করে ফেলেছিল। পরে সেই শিশুটির মুখ ফুলে গিয়েছিল।’

এ সময় পাশে বসা মহসিন আহমেদ বলেন, ‘এখানে কোনও নিয়ম-কানুন নাই।একেক সময় একেকজন ডাক্তার বসেন।গত সপ্তাহে আমি ফিলিং করালাম,কিন্তু চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পরই সেটা উঠে যায়। জায়গা মতো ফিলিংটা বসলো কিনা সেটাও তারা চেক করেন না। সেকেন্ডের মধ্যে ফিলিংটি দাঁতে ঢুকিয়ে দিয়ে বলেন, চলে যান ।’

মহসিন আহমেদ বলেন, ‘এখানে হ্যান্ড গ্লাভস-এর জন্য প্রত্যেকের থেকে ২০ টাকা করে নেওয়া হয় ।সরকারি হাসপাতালে কেন টাকা নেওয়া হবে ।আর ডাক্তাররা সব সময়ই ইনিয়ে-বিনিয়ে বাইরের ক্লিনিকগুলোর কথা বলেন ।’

সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, শিশু দন্ত বিভাগে মূলত ইন্টার্ন করা চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল কলেজটির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরাই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সেখানে অধ্যাপকদেরও থাকার কথা। কিন্তু তারা সেখানে থাকেন না। এতে করে নানান দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক জাহিদুর রহমান বলেন,‘আমাদের গজ, ব্যান্ডেজের কিছু ঘাটতি রয়েছে। তবে সেটা এতো প্রকট হবার কথা নয় যে, প্রতি রোগীর কাছ থেকে ২০ টাকা করে নিতে হবে। আমি অবশ্যই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’

শিশু দন্ত বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করে ডা. জাহিদুর রহমান বলেন,‘ওখানকার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ এসেছে। আমি শেষবারের মতো তাদের ওয়ার্নিং দেবো এবং এরপর ব্যবস্থা নেবো।’

সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের টেবিলে যদি বাইরের ক্লিনিকের প্যাড থাকে,তাহলে কেন এই বিশাল দালান,সরকারের কেন এতো ব্যয় প্রশ্ন রেখে নূর নবী সিদ্দিক বলেন, ‘এই হাসপাতালের কোথাও সিনিয়র ডাক্তারদের পাওয়া যায় না। তাহলে কিসের সরকারি হাসপাতাল?’

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৩:০৭   ৩৪০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রথমপাতা’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ