বঙ্গ-নিউজঃ আহত খাদিজা বেগম নার্গিস
ছাত্রলীগ নেতার নৃশংসতায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। অসংখ্য চাপাতির কোপের আঘাত রয়েছে তার মাথা ও দুই হাতে। স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, নার্গিস এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
এই হাসপাতালের মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের কনসালট্যান্ট এবং হাসপাতালের অ্যাসোসিয়েট মেডিক্যাল ডিরেক্টর ড. মির্জা নাজিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নার্গিসের মাথায় অসংখ্য চাপাতির কোপের চিহ্ন রয়েছে। তাকে এমনভাবে কোপানো হয়েছে যে, খুলি ভেদ করে ব্রেইন ইনজুরি হয়েছে। কোপানোর সময় হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করায় তার দুই হাতের রগ কেটে গেছে।’
নার্গিসের অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদলের প্রধান নিউরো সার্জন ডা. এ এম রেজাউস সাত্তার বলেন, ‘নার্গিসের মাথায় অসংখ্য আঘাত ছিল। তার যে অপারেশন হয়েছে, তাতে ৭২ ঘণ্টা আগে তার সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। তিনি ঝুঁকিতে আছেন। এ ধরনের রোগীদের বাঁচার সম্ভবনা শতকরা ৫ ভাগ।’
এর আগে বিকেল আড়ইটার দিকে পরিবারের সম্মতি নিয়ে নার্গিসের অস্ত্রোপচার শুরু হয়। সে সময় ড. মির্জা নাজিম উদ্দিন জানান, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকালে নার্গিসকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। মাথায় অসংখ্য আঘাত। যেগুলো কোপানোর চিহ্ন।’ তিনি বলেন, ‘নার্গিসকে আঘাত করার সময় সে দুই হাত দিয়ে আঘাত ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল, যাতে তার হাতেও গভীর আঘাত রয়েছে, হাতের রগ কেটে গেছে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নার্গিসকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে তার চাচা আব্দুল কুদ্দুস ও মামা আব্দুল বাসেত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নার্গিস দ্বিতীয়। তার বাবা মাসুদ মিয়া সৌদি প্রবাসী এবং মা মনোয়ারা বেগম গৃহিনী। বড় ভাই চীনে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন, ছোট দুই ভাই দেশেই লেখাপড়া করে।
নার্গিসের মামা আব্দুল বাসেত বলেন, খবরের কাগজে এই ছেলের সঙ্গে নার্গিসের প্রেমের খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা একেবারেই ঠিক নয়। ছেলেটি তাকে বিরক্ত করতো কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ও তো (নার্গিস) কখনও কিছু বলে নাই, ওর মায়ের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে আমার। সেও কিছু জানে না।’ এ সময় পাশে থাকা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘প্রেমের সর্ম্পক থাকলেই কি এইভাবে কুপাইতে হবে নাকি? মানুষ প্রেম করে আবার ভাইঙ্গাও যায়, তাই বইল্যা কী এইভাবে একজন আরেকজনরে কোপাইবো।
বাসেত বলেন, ‘নার্গিসের মা তার মেয়ের এই অবস্থার কথা এখনও জানেন না। সে জানে মেয়ের মাথায় একটুখানি কোপ লেগেছে, একটু পরপর মোবাইলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে, কিছুতেই তাকে মানানো যাচ্ছে না। তাকে বলতে পারছি না মেয়েটারে যমে টানাটানি করতাছে, যেকোনও সময় নিয়া যাইবো।’
এদিকে, মানববাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সিলেট শাখার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন ইমন ছিলেন হাসপাতালে নার্গিসের পরিবারের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য দোষীর দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। বদরুলকে দেখে যেন সমাজের অন্যরা ভয় পায়, আর কোনও নার্গিসকে যেন এ অবস্থার ভিতর দিয়ে যেতে না হয়; রাষ্ট্র এবং সমাজের কাছে সেই দাবি জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, সোমবার বিকালে নার্গিসকে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল ইসলাম প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে অবস্থার অবনতি হলে নার্গিসকে নেওয়া হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। এ ঘটনায় বদরুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪০:১৮ ৪১১ বার পঠিত