বঙ্গ-নিউজঃ ভোলার মনপুরার পূর্ব পাশের মেঘনায় জলদস্যুদের গুলিতে আরো এক জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর একদিন আগে নিহত অপর এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রোববার উদ্ধার হওয়া জেলে শনিবার জলদস্যুদের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এদিকে মেঘনায় জলদস্যু মোল্লা বাহিনী কর্তৃক অপহৃত পাঁচ মাঝিকে মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে।
মনপুরার জংলার খাল সংলগ্ন পূর্ব পাশের মেঘনা থেকে রোববার দুপুর ৩টার দিকে ওই জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে লাশটির এখনো পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, লাশটি তজুমুদ্দিন থানার নিখোঁজ জেলে শফিকুল ইসলামের। এদিকে ভোলা ও হাতিয়া থানার ১২টি ডাকাতি মামলার আসামি জহুরুল ইসলাম নামে এক জলদস্যুকে স্থানীয় জেলেরা শনিবার রাত ১২টার দিকে জংলার খাল সংলগ্ন মেঘনায় ট্রলার থেকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটক জলদস্যু বর্তমানে মনপুরা থানা হেফাজতে রয়েছে।
জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, ১ অক্টোবর মিয়াজ মির শাহ সংলগ্ন মেঘনায় ইলিশ মাছ ধরা অবস্থায় জলদস্যুদের হামলায় ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে মাছ ধরতে আসা জেলেরা জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়। ওইদিন একই ঘটনায় মনপুরার কামাল মাঝি জলদস্যুদের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হন।
উপজেলার চর ফৈজুউদ্দিন গ্রামের বাড়িতে রোববার গিয়ে দেখা যায়, নিহত জেলে কামাল মাঝির স্ত্রী জান্নাত বেগম স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে চার সন্তান নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন নিহত কামল মাঝির দুই ভাই মহিউদ্দিন, হোসেন ও তার বোন জামাই সাইফুল।
নিহত কামাল মাঝিসহ তিন জেলে পরিবারের সদস্যদের কান্না আর আহাজারিতে এলাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে তজুমুদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহীন মন্ডল জানান, আমরা মনপুরার মেঘনা থেকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় এনেছি। লাশটি তজুমুদ্দিন মহাজান কান্দির জেলে শফিকুল ইসলাম। লাশটি পরিবারবর্গ নিয়ে যাওয়ার জন্য চাচ্ছেন।
অপরদিকে মনপুরার মেঘনা থেকে জলদস্যু মোল্লা বাহিনী কর্তৃক অপহৃত রহমান মাঝি, ইউনুছ মাঝি, নুরামিন মাঝি, ইউসুফ মাঝি ও রুহুল আমিন মাঝিকে মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার হয়েছে বলে শুনেছি। জলদস্যুরা পাঁচ মাঝিকে শনিবার সকাল ৬টায় মনপুরার মিয়াজ মির শাহ সংলগ্ন চর থেকে মাছ ধরা অবস্থায় অপহরণ করে উড়ির চরে নিয়ে যায়।
পরে অপহৃত মাঝিদের থেকে মুক্তিপণ আদায় করে রোববার ভোর রাতে বদনার চরে রেখে যায়। অপহরণের ২০ ঘণ্টা পর অপহৃত মাঝি উদ্ধার হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
উদ্ধার হওয়া রহমান মাঝি জানান, ইলিশ ধরা অবস্থায় হাতিয়ার জলদস্যু মোল্লা বাহিনীর রুবেল ও বাবুলের নেতৃত্বে জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে পাঁচটি ট্রলার থেকে পাঁচ মাঝিকে ধরে নিয়ে যায়। উড়ির চরে নামক স্থানে জিম্মি করে মারধর করেন।
মুক্তিপণের টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় তাদেরকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রহমান মাঝি বলেন, উদ্ধার হওয়ারা বর্তমানে মনপুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা রয়েছেন। আমিসহ তিনজন মাঝি দুই লাখ ২৮ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে জলদস্যুদের দেয়ার পর তারা আমাদের ছেড়ে দেয়। পরে জংলার খাল থেকে একটি ট্রলার গিয়ে বদনার চর থেকে আমাদের নিয়ে আসেন।
অপহৃত জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন আমাদের কোনো সহযোগিতা করছেন না। আমরা জলদস্যুদের বিষয় জানালে তারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্ট করেন।
হাতিয়া জোনের কোস্টগার্ড মোটেও সহযোগিতা করছে না। তাদের নাকের ডগায় প্রায় প্রতিদিন জলদস্যুরা জেলেদের ওপর হামলা চালায়। জেলেদের আটক করে মুক্তিপণ আদায় করে। জলদস্যুদের গুলিতে জেলেরা প্রাণ হারায়। এখন জলদস্যুদের ভয়ে জেলেরা মেঘনায় মাছ ধরতে সাহস পাচ্ছে না বলেও জলদস্যুদের হাত থেকে ফিরে আসাদের অভিযোগ।
হাতিয়া জোনের কোস্টগার্ড প্রধান লেঃ কমান্ডার ওমর ফারুক নতুন বার্তাকেকে বলেন, আমারা ঘটনা শোনার পর অপহৃত মাঝিদের উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করি। আমাদের উদ্ধার অভিযানের কথা জলদস্যুরা জানতে পেরে জলদস্যুরা এলাকায় ছেড়ে অন্য এলাকায় আত্মগোপন করে। তবে মেঘনায় আমাদের জলদস্যুদের ধরার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৫:০০ ৪১৪ বার পঠিত