হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬তম ইগ নোবেলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলার সময় দর্শকরা কাগজের তৈরি বিমান মঞ্চের দিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন। ছবি: রয়টার্সবঙ্গ-নিউজঃ ল্যাব পরীক্ষায় বায়ু দূষণের পরিমাণ কম দেখাতে জালিয়াতির কৌশল আবিষ্কারের জন্য রসায়নে এবছরের ‘ইগ নোবেল’ পেয়েছে জার্মানির বিখ্যাত মোটর নির্মাতা কোম্পানি ফক্সভাগেন।
সাহিত্য, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, অর্থনীতি ও রাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। আর বিদ্রুপাত্মক ‘ইগ নোবেল’ দেওয়া হয় অদ্ভূত ও আজব ‘আবিষ্কারের’ জন্য, যদিও এসব গবেষণার বেশিরভাগ নিয়েই নামী সাময়িকীগুলোতে বিজ্ঞানসম্মত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বছরের সেরা অদ্ভূত গবেষণাগুলোকে সম্মান জানাতে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীরাও এসেছিলেন।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ২৬তম বর্ষে পা রাখা এই অনুষ্ঠানে যেসব ‘ইগ নোবেল’ বিজয়ী সত্যিকার নোবেল বিজয়ীদের হাত থেকে পুরস্কার নিতে এসেছিলেন তাদের দেওয়া হয় ১০ ট্রিলিয়ন জিম্বাবুয়ান ডলার (জিম্বাবুয়ের মুদ্রা)।
ফক্সভাগেনের গাড়ি রাস্তায় চলার সময় বাতাসে নাইট্রোজেন অক্সাইডসহ যে পরিমাণ ক্ষতিকর উপাদান ছাড়ে, তা যুক্তরাষ্ট্রে এসব উপাদানের অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি।
তবে জার্মানির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি জালিয়াতির কৌশল খাটায়, যাতে ল্যাব পরীক্ষার সময় গাড়িটি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর উপাদান না ছড়ায়। গাড়ির ভেতর একটি সফটওয়্যার বসিয়ে করা হতো এই কাজ।
ল্যাব পরীক্ষার সময় গাড়িগুলোকে যখন নিয়মিত রাস্তায় না চালিয়ে ঘূর্ণায়মান রাস্তায় একটি নির্ধারিত গতিতে চালানো হয় তখন গাড়ির কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের ওই সফটওয়্যার অবস্থাটি বিশ্লেষণ করে বাতাস ও জ্বালানির সমন্বয় করে দূষণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে।
২০১৫ সালে এই জালিয়াতি ধরা পড়ার পর বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করা প্রায় ১১ মিলিয়ন গাড়িতে ওই কৌশল বসানোর কথা স্বীকার করে ফক্সভাগেন কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছর রসায়নে ফক্সভাগেনকে ইগ নোবেল দেওয়ার ঘোষণায় বলা হয়, গাড়ির ব্যাপক দূষণ সমস্যার সমাধানে করার জন্য এই পুরস্কার, যেখানে ল্যাব পরীক্ষার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে… তড়িৎ-যান্ত্রিকভাবে দূষণের মাত্রা কম দেখানো যায়।
জীববিজ্ঞানে এবার যৌথভাবে ইগ নোবেল পেয়েছেন দুজন, যার মধ্যে ছাগলের সঙ্গে কয়েকদিন কাটিয়ে এই পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের এক ব্যক্তি।
বিবিসি বলছে, চলতি বছর আল্পসে বসবাসকারী টম থুইটেস নকল পা ব্যবহার করে ছাগলের সঙ্গে তিনদিন কাটিয়ে এই পুরস্কার জয় করেছেন।
ছাগল-মানব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া থুইটেসের হাতে বৃহস্পতিবার ইগ নোবেল তুলে দেওয়া হয়।
আল্পস পর্বতে ছাগলের পালের সঙ্গে তিনদিন কাটিয়ে নজর কাড়েন টম থুইটেস। তিনি প্রায় বছরখানেক সময় চিন্তা-ভাবনা-গবেষণা করে ছাগলের মতো হাঁটার জন্য কৃত্রিম পা বানান। এরপর ছাগলের জীবনযাপন আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আল্পস পর্বতে এই প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটান।
নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে টম থুইটেস বলেন, “নকল পা লাগিয়ে ছাগলের পালের সঙ্গে আমিও ঘাস চিবুচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় কয়েকটি ছাগল আমার দিকে এগিয়ে আসে, শিং দিয়ে গুঁতোও মারে।”
প্রথম দিকে আধুনিক জীবনের চাপ থেকে মুক্তির জন্য টম থুইটেস এই অভিনব কাজ শুরু করলেও ধীরে ধীরে এর সঙ্গে তার আবেগও যুক্ত হয়ে যায়।
টম থুইটেস প্রায় বছরখানেক সময় চিন্তা-ভাবনা-গবেষণা করে ছাগলের মতো হাঁটার জন্য কৃত্রিম পা বানান। ছবি: বিবিসি
টম থুইটেস প্রায় বছরখানেক সময় চিন্তা-ভাবনা-গবেষণা করে ছাগলের মতো হাঁটার জন্য কৃত্রিম পা বানান। ছবি: বিবিসি
ছাগল-মানব টম থুইটেস তার পুরস্কারটি যার সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন সেই চার্লস ফস্টারও যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ফস্টারও প্রাণীর দৃষ্টিতে জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে হাস্যরস এবং ভিন্নধারার চিন্তাশীল কর্মের জন্য ১৯৯০ সাল থেকে আইজি নোবেল পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক হাস্যরসাত্মক ম্যাগাজিন ‘অ্যানালস অব ইমপ্রোবাবল রিসার্চ’ আইজি নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনে প্রেরণা যুগিয়েছে।
এবার মনোবিজ্ঞানে ইগ নোবেল দেওয়া হয়েছে ১০০০ জন মিথ্যাবাদীর সত্যবাদিতার ওপর একটি গবেষণার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডের একটি দল ওই এক হাজার জনের ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা জীবনে কী পরিমাণে ও কত ভালোভাবে মিথ্যা বলতে পারে তা নির্ধারণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০:১৩:০৫ ৩৪২ বার পঠিত