বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
বেশ কয়েকবার দিনক্ষণ নির্ধারণ করেও বিতরণ করতে না পারা আধুনিক প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) অবশেষে নাগরিকদের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে রাজধানী ঢাকায় এবং পরে পর্যায়ক্রমে সিটি কর্পোরেশন, জেলা-উপজেলা, পৌরসভা ও সবশেষে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এই স্মার্ট কার্ড পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন। এই কার্ডে ২৫ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, যা কেউ কখনো নকল করতে পারবে না। এই স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে নাগরিকরা অনেক সুবিধা পাবেন। যেমন আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, চাকরির আবেদন, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়সহ অনেক কিছু।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম জানান, উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) বিতরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২ অক্টোবর এ কার্যক্রমের উদ্বোধনের সময় দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর পর্যায়ক্রমে দেশের সব নাগরিকের হাতে এই কার্ড তুলে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে সাড়ে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। এ জন্য উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০১৪ সালের আগস্টেই। কিন্তু কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি না হওয়ার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়নি। ২০১৫ সালে ১৪ জানুয়ারিতে স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণের বিষয়ে ফ্রান্সের ওবার্থার টেকনোলজিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইসি। সেই চুক্তি অনুযায়ী, স্মার্টকার্ড উৎপাদনের জন্য ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১০টি মেশিন বসানো শুরু হয় এনআইডি উইংয়ে। এর পরেই এনআইডি চিপে তথ্য পার্সোনালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ডিসেম্বরে স্মার্টকার্ড উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর আগে বেশ কয়েকবার বিতরণের সময় নির্ধারণ করেও বহুল কাক্সিক্ষত এই স্মার্টকার্ড নাগরিকদের হাতে তুলে দিতে পারেনি কমিশন। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় নেয়া এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এরই মধ্যে। নানা দেন-দরবারের পর প্রকল্পটির মেয়াদ আরো দেড় বছর বাড়ানো হলেও এই বর্ধিত সময়ে প্রায় ১০ কোটি ভোটারের হাতে এটি পৌঁছে দেয়া যাবে কিনা, এ নিয়েও দেখা দেয় সংশয়। শুরু থেকে এ প্রকল্পে সমন্বয়হীনতার কারণে সবার হাতে স্মার্টকার্ড কবে পৌঁছাবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মতো সংশয় সৃষ্টি হয় দাতা সংস্থার মাঝেও। এ নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে অনুষ্ঠিত ‘ত্রিপক্ষীয় পর্যালোচনা বৈঠকে’ আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস (আইডিইএ) নামের এই প্রকল্পটির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
সে প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির কার্যকারিতা বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়। ইআরডির সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ খালেদ-উর-রহমান ইসি সচিবকে লেখা চিঠিতে বলেন, প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম জনগণের কাছে এনআইডি কার্ড বিতরণ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ত্রুটিগত কারণে চার মাস কার্ড উৎপাদন বন্ধ ছিল এবং এ কারণে কার্ড বিতরণ কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্ড বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করা নিয়ে এরই মধ্যে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। সে জন্য প্রকল্পটির কার্যকারিতা বাড়ানো প্রয়োজন।
এ নিয়ে ২৩ আগস্ট ‘স্মার্টকার্ড বিতরণে কালক্ষেপণে বিশ্বব্যাংকের অসন্তোষ; প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় ইসি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবকণ্ঠ। এর পরদিনই ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের ডেকে আগামী মাসেই (সেপ্টেম্বর) কার্ড বিতরণ শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অক্টোবরের শুরুতে সময় দেয়ায় এ দফায়ও তারিখ পরিবর্তন করতে হলো ইসিকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪০:১০ ৩৪৩ বার পঠিত