বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে যা খেললো বাংলাদেশ এককথায় পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি। একেবারে সাজানো গোছানো একটি ম্যাচ। কোনো খুঁত কিংবা খাদ নেই। ছন্দটাও চমত্কার। চাওয়ার সঙ্গে পাওয়ার কি অপূর্ব মিল! দৃশ্যগুলো যেন আগেই থেকেই আত্মস্থ, মঞ্চে নেমে শুধু পারফর্ম করলেই হবে। ঠিক এভাবেই সোমবার সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে নিজেদের চাওয়াগুলো পাওয়ায় পরিণত করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের মেয়েরা। মঞ্চে নেমে সে কী দাপুটে পারফরম্যান্স! বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে অসহায় আত্মসমর্পণ সিঙ্গাপুর মেয়েদের। দল্টিকে এক এক করে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিলো বাংলার মেয়েরা। এটাকে অসহায় বলা ছাড়া উপায় আছে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে সোমবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে উড়িয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
‘সিঙ্গাপুরকে এতটুকু ছাড় দেয়া হবে না। হালকাভাবে নেয়ার তো সুযোগই নেই। ওদের বিপক্ষে অ্যাটাকিং ফুটবলই খেলব’- আগের দিন ম্যাচপূর্ব এক প্রতিক্রিয়ায় এমনটা জানান লাল-সবুজের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। আর এদিন শিষ্যরা গুরুর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। সিঙ্গাপুরকে এতটুকু ছাড় দেয়নি। এমনভাবে চেপে ধরেছে যে প্রতিপক্ষ আক্রমণেরই সুযোগ পায়নি। আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিন্তু এর ঝাঁজ তেমন ছিল না। একেবারে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন, একতরফাভাবে ম্যাচ জিতেছে কৃষ্ণা রানীর দল। খেলা দেখে মনে হয়েছে গোলপোস্ট বোধহয় একটি? আদতে গোলপোস্ট দু’টিই ছিল। কিন্তু এক পোস্টেই আক্রমণ হয়েছে। খেলাও হয়েছে সিঙ্গাপুরের অর্ধেই। বাংলাদেশের অর্ধে খুব কমই বল নিয়ে ঢোকার সুযোগ পেয়েছে।
ইরানের বিপক্ষে বাংলাদেশ অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী গোল করতে পারেননি। তবে বেশকিছু ভালো আক্রমণ ছিল তার। গোল করতে না পারার আক্ষেপে হয় তো মনে মনে পুড়েও ছিলেন। সিঙ্গাপুরকে পেয়ে সেই আক্ষেপ দারুণভাবে ঘুচিয়েছেন কৃষ্ণা। ম্যাচে জোড়া গোল এসেছে তারই পা থেকে। জোড়া গোল করেছেন অনুচিং মগিনীও। অপর গোলটি করেছেন মৌসুমি। ইরান ম্যাচেও এক ছিল তার।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এদিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ৭ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না। ১৮ মিনিটে কৃষ্ণার ক্রসপিস ঠিক মতো জালে জড়াতে পারেননি মৌসুমি। ম্যাচের বয়স যখন ৩৯ মিনিট, তখনই ডেডলক ভাঙেন অধিনায়ক কৃষ্ণা। সানজিদা আক্তারের ক্রস দারুণ হেডে জালে জড়ান তিনি (১-০)। প্রথমার্ধে কৃষ্ণার গোলে লিড নিয়ে বিশ্রামে যায় বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে ভয়ঙ্কররূপে আবির্ভূত হন ছোটনের শিষ্যরা। ৪৭ মিনিটে ম্যাচে নিজের জোড়া গোলপূর্ণ করেন কৃষ্ণা। মার্জিয়ার পাসে দলকে ২-০ এর লিড এনে দেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। পিছিয়ে পড়া সিঙ্গাপুর এরপর নিজেদের কিছুটা গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাতে থাকে। আক্রমণে না গিয়ে রক্ষণে শক্তি বৃদ্ধি করে। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝের ২০ মিনিট বাংলাদেশ বেশকিছু আক্রমণ করলেও সেগুলো প্রতিপক্ষের রক্ষণ, কখনোবা গোলরক্ষকের বাধার মুখে পড়ে। তবে সেই রক্ষণ কৌশলও বাংলাদেশের রণে মার খেয়ে যায়। শেষ ১০ মিনিটে আরো তিন গোল তুলে নেয় কৃষ্ণা বাহিনী। ৮১ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামা তহুরার শট সিঙ্গাপুর গোলরক্ষক ঠেকালেও বল তালুবন্দি করতে পারেননি। ওই বল ফাঁকায় পেয়ে আলতো শটে জালে জড়ান অনুচিং (৩-০)। মিনিট পাঁচেক পর আবারো গোল উল্লাসে মেতে ওঠেন ছোটন শিষ্যরা। এবার মৌসুমির গোলে লিড ৪-০ তে নিয়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ গোলটি আসে শেষ মুহূর্তের ইনজুরি টাইমে। গোলটি করে কৃষ্ণার মতো অনুচিংও নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন (৫-০)।
ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন কৃষ্ণা, তহুরা, মার্জিয়ারা। কোচ ছোটনকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে মাতেন। ক্যামেরায় নানা ভঙ্গিতে পোজ দেন। পতাকা নিয়েও কেউ কেউ মার্চপাস্ট করেন। একদিনের ব্যবধানে ইরান এবং সিঙ্গাপুরের মতো দু’টি শক্তিশালী দলকে হারানোর আনন্দ-উচ্ছ্বাস এমন বাধাহারা হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
এদিকে একইদিন একই ভেন্যুতে আরো দু’টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ৯-০ গোলের বড় জয় পেয়েছে ইরান। ইরানী ফরোয়ার্ড ফাতেমা ঘোসামি একাই করেন পাঁচ গোল। এছাড়া ফাতেমা মাখদুমি জোড়া গোল করেন এবং মারাল তার্কমান ও রোগায়েহ জালাল একটি করে গোল করেন। দিনের অপর ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৫-০ গোলের বড় জয় পেয়েছে চীনা তাইপে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৬:৪৮ ৪১১ বার পঠিত