বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
রাত দেড়টা। মেয়ের জামাইকে সঙ্গে নিয়ে হজ ক্যাম্পে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের অফিসে ঢোকেন ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। দূর থেকে দেখেই মনে হলো-কারো উপর প্রচণ্ড ক্ষেপে আছেন তিনি। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। মেজাজ হয়ে আছে তিরিক্ষি।
রাতের ডিউটিতে থাকা বিমানের একমাত্র কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে চড়া ভাষায় কথা বলছেন লোকটির জামাতা। তিনিও বিড় বিড় করে কী যেন বলছেন। দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না। তবে তার ফিজিক্যাল মুভমেন্ট বলে দিচ্ছে বিমানের কর্মকর্তার উপর ক্ষোভ ঝারছেন তিনি।
কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই ক্ষেপে যান লোকটি- নাম দিয়ে কী হবে? কতজনই তো নাম লিখল। ইন্টারভিউ নিলো। কিন্তু সমস্যার সমাধান তো কেউ দিল না। সবাইকে চেনা হয়ে গেছে। সবাই ‘চোর’। আমরা চোরের দেশে বাস করছি।
কুমিল্লা থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব এই হজযাত্রীর ক্ষোভের যৌক্তিকতা আছে বৈ কি? শুক্রবার (২৬ আগস্ট) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ছিল তার ফ্লাইট। কিন্তু রাত দেড়টায়ও আসে নি ফ্লাইট। কখন আসবে- সেটাও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না বিমান কর্তৃপক্ষ। তাই মনের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য এই রাত দুপুরে বিমানের অফিসে ঢুকেছেন তিনি।
হজ ক্যাম্পের লবিতে ১০ জন হজযাত্রীর মালপত্র, লাগেজ-ব্যাগেজ একত্র করে দুইজন মিলে পাহারা দিচ্ছেন। এরাও হজযাত্রী। এদের একজন অঘোরে ঘুমাচ্ছেন। আরেকজন জেগে আছেন। জেগে থাকা হজযাত্রী মমতাজ উদ্দিন এসেছেন গাজীপুর থেকে। বাকি ৯ জনের বাড়ি বিভিন্ন জেলায়।
মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল- তাদের ফ্লাইট ছিল শুক্রবার (২৬ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে। কিন্তু সেই ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে শনিবার দুপুর আড়াইটায় আসবে ফ্লাইট।
নির্ধারিত সময় ফ্লাইট না আসায় চরম দুর্ভোগে পড়া এই হজযাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, রাত সাড়ে ৩টায় ফ্লাইট ধরব বলে সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে হজ ক্যাম্পে এসেছি। আসার পর শুনি কীসব ঝামেলা হয়েছে। আজ রাতে আর ফ্লাইট আসবে না। কাল দুপুর পর্যন্ত এখানে অপেক্ষা করতে হবে।
হজক্যাম্পে টাঙানো ফ্লাইট শিডিউল থেকে জানা যায় শুক্রবার মোট ৩টি ফ্লাইট ছিল। এর মধ্যে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে বিজি ২০৫০, বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে বিজি ২০৫২ এবং রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে বিজি ৪০৫২ ফ্লাইট ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু রাত দেড়টা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের এই তিনটি ফ্লাইটের একটিও ছেড়ে যায়নি। কী কারণে শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে, সেটিও বলতে পারছেন না কেউ।
হজ ক্যাম্পের পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়ের কারণ বলতে পারবেন বিমান কর্তৃপক্ষ। আমাদের যেটা জানানো হয়েছে, সেটি হলো টেকনিক্যাল কারণে প্লেন আসতে পারেনি, তাই শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।
রাত পৌনে ২টার দিকে বিমানের অফিসে গিয়ে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে জানতে চাইলে বিমানের কমার্শিয়াল অ্যাসিসট্যান্ট মো. ইলিয়াস হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে অথেনটিক কিছু পাবেন না। এটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। তবে আমাকে যেটা বলা হয়েছে, সেটা হলো টেকনিক্যাল প্রবলেমের কারণে শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট প্রথম হজ ফ্লাইট উদ্বোধনের সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সমোস্বরে বলেছিলেন-এবার হজ ফ্লাইটে কোনো শিডিউল বিপর্যয় হবে না। হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা হবে।
কিন্তু বিমান সেই কথা রাখতে পারেনি। অন্যবারের মত এবার দেখা দিয়েছি ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়। শুক্রবার সেই বিপর্যয়ের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। এদিনের ৩টি ফ্লাইটের একটিও নির্ধারিত সময় ছেড়ে যায় নি।
এবার এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন বাংলাদেশি হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ১০ হাজার বাংলাদেশি। বাকি ৯১ হাজার ৭৫৮ জন যাচ্ছেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। দুই মাসব্যাপী হজ ফ্লাইট পরিচালনায় শিডিউল ফ্লাইটসহ ২৮১টি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। চলতি হজ মৌসুমে ৪ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিডিউল ফ্লাইটসহ মোট ১৪৪টি হজ ফ্লাইট যাত্রীদের নিয়ে যাবে। আর ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ফিরতি হজ ফ্লাইট থাকবে ১৩৭টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০৪:২৫ ৩৭০ বার পঠিত