বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রকল্প পাবনার রূপপুরে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার ঋণ নিচ্ছে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। তবে এ জন্য সুদে-আসলে রাশিয়াকে ফেরত দিতে হবে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ৯১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার শুধু সুদ বাবদই সরকারকে ফেরত দিতে হবে ৬৯ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রূপপুর পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত সচিবদের অভিজ্ঞতা বিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা জানানো হয়।
রূপপুর প্রকল্পের রেফারেন্স প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়ার নভোভারেনেঝ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে। অভিজ্ঞতা অর্জনের অংশ হিসেবে গত জুন ও জুলাইয়ে তিন দফায় সরকারের ১৩ জন সচিব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য গতকালের সভাটির আয়োজন করা হয়।
সমপ্রতি রাশিয়া সফর শেষে দেশে ফেরা কয়েকজন সচিব তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রধান অতিথি ছিলেন। মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার রূপপুরে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে আগামী বছর। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটটি উত্পাদনের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রোসাটাম। দ্বিতীয় কেন্দ্রটি উত্পাদনে আসবে তার এক বছর পরে।
রাশিয়ার অর্থায়ন ও প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, বলা হচ্ছে সুদে-আসলে সর্বোচ্চ ১৯ বিলিয়ন ডলারের মতো ফেরত দিতে হবে। আজকের লাইবরের হার ধরে করা হিসাবে দেখানো হয়েছে ১৮ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার সুদে-আসলে ফেরত দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে লাইবর বৃদ্ধি পেলে এই অর্থের পরিমাণ বাড়বে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে এই ঋণের সুদের হার ১.৭৫ শতাংশ এবং এর সঙ্গে কিস্তি পরিশোধের সময়কাল লাইবর (লন্ডন আন্তব্যাংক রেট) যুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আজকের (সোমবার) আন্তর্জাতিক বাজার অনুসারে লাইবর দশমিক ৯ শতাংশ ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশকে মোট ফেরত দিতে হবে ১৮ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। তবে লাইবর বাড়লে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু লাইবর যতই বাড়ুক সুদের হার কখনোই ৪ শতাংশের বেশি হবে না। সেই হিসাবে রাশিয়াকে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঋণের টাকা প্রদানের ১০ বছর পর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে। ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে ঋণের কিস্তি দেওয়া শুরু করতে হবে। প্রতিবছরের ১৫ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সমপরিমাণ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর আগে এই কেন্দ্রের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজের জন্যও রাশিয়ার কাছ থেকে ৫৫ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘রূপপুর নিয়ে সব ধরনের বিভ্রান্তি দূর করে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। রূপপুর বাংলাদেশের গর্ব। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব রাজুল হক খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান এবং জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৭:৩৯ ৪৩১ বার পঠিত