বঙ্গ-নিউজঃ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক জেএমবি সদস্যরা নিজেদের ‘দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশ’-এর সদস্য বলে দাবি করেছে। আর এই সংগঠনের সদস্যরা গুলশানে হলি আর্টিজান, শোলাকিয়ায় ঈদগাহ মাঠের পাশে এবং মাদারীপুরে কলেজশিক্ষকের ওপর হামলা পরিচালনা করে।
বুধবার দুপুরে র্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এ তথ্য জানান। এ ছাড়া র্যাবের অনলাইন মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজেও এ কথা বলা হয়েছে।
র্যাবের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, আপনারা জানেন ‘আত-তামকীন’ জেএমবি কর্তৃক পরিচালিত একটি জঙ্গি ওয়েবসাইট। জঙ্গিরা তাদের বিভিন্ন হামলার সংবাদ ও ছবি ‘আত-তামকীন’ সাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করে। এ ছাড়া এ সাইটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রচার-প্রসারের জন্য আইএস কর্তৃক সংগঠিত বিভিন্ন হামলার সংবাদ বাংলায় অনুবাদ করে নিয়মিত প্রচার করে থাকে।
পেজে আরও বলা হয়, জানা যায় যে, এবিটি (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) ও জেএমবির শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বহীনতার কারণে তারা নিজেদের মধ্যে একরকমের সমঝোতায় আসে, এবং ‘দাওলাতুল ইসলাম’-এর ব্যানারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
র্যাব জানায়, অতিসম্প্রতি জেএমবির দুটি গ্রুপ দাওলাতুল ইসলামের ব্যানারে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় নাশকতা সংঘটিত করে। পরবর্তী সময়ে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত আলামত নিয়ে কাজ শুরু করে র্যাব। এরপর র্যাবের গোয়েন্দারা জানতে পারে, জেএমবির এ রকম আরো বেশ কিছু গ্রুপ নাশকতার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে এবং যেকোনো স্থানে তারা নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। এমন সংবাদে র্যাব ৪-এর একটি দল ৯ আগস্ট মঙ্গলবার রাত ১০টার সময় রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জাহিদ আনোয়ার ওরফে পরাগকে (২২) আটক করে। পরে পরাগের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো দুটি অভিযান চালায় র্যাব। রাত ২টায় গাবতলীর আল-আরাফাত খাবার হোটেল থেকে মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজুল (২৯) ও জাহিদ হাসান ওরফে মাঈনকে (২১) আটক করা হয়। এরপর পরের দিন মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের উত্তর বিসিলের একটি ভাড়া বাসা থেকে দাওলাতুল ইসলামের মুখপাত্র ও ‘আত-তামকীন’ সাইটের অ্যাডমিন ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে সিফাত (২৭), মো. জিয়াবুল হক ওরফে জিয়া এবং মো. নয়ন হোসেনকে আটক করে র্যাব।
র্যাব আরও জানায়, এদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের মধ্যে পাঁচজন জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর একজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের। এরই মধ্যে তারা আত্মঘাতী হামলার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। সেই সঙ্গে তাদের আমিরের নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় নাশকতার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। এছাড়া অনুসন্ধানে এই দলে নারী সদস্যদের সক্রিয় উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে। তবে বাংলাদেশের এসব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সরাসরি যোগাযোগের কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানায় র্যাব।
সদস্য সংগ্রহ :
র্যাবের ফেসবুক পেজে বলা হয়, এই সব জঙ্গি সংগঠন দাওয়াতের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করে থাকে। দাওয়াত দেয়ার আগে ওই ব্যক্তির মনোভাব যাচাই করা হয়। এটা হতে পারে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে অথবা ফেসবুকে কোনো ধরনের পোস্ট পছন্দ করে তার ওপর ভিত্তি করে। যদি ফেসবুকে পরিচয় হয়, তবে তাকে গ্রুপের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর তাকে ইসলাম, জিহাদ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি দেয়া হয়। যখন সদস্যরা সক্রিয়ভাবে এসব কাজে অংশগ্রহণ করে, তখন নেতৃস্থানীয় ভাইয়েরা তাদের সঙ্গে সশরীরে, ফোনে বা অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ করেন । প্রয়োজনে এ সব লোকের জন্য আর্থিক সুবিধা এমনকি চাকরির ব্যবস্থা করা হয়।
এরপর সদস্যরা যখন সক্রিয় অবস্থানে থাকে, তখন তাদের ফেসবুকের অন্য একটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই গ্রুপে অন্তর্ভুক্তির আগে সদস্যদের সামাজিক, ব্যক্তিগত ও আকিদাগত তথ্য দিতে হয়। পরে ওই সব তথ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে সদস্যদের টেলিগ্রাম গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই গ্রুপে দ্বীন, জিহাদ ইত্যাদি বিষয়ে ভিডিও দেয়া হয়। তবে এখানে গ্রুপের সদস্যরা সব সময় একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করেন এবং একজন অপরজনের পরিচয় সম্পর্কে জানেন না। আর গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা সদস্যদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন এবং যখন কোনো সদস্যকে অত্যন্ত বিশ্বস্ত মনে হয়, তখন তাকে অপর আরেকটি গোপন গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যখন কোনো সদস্য জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তখন ওই সদস্যকে পর্যবেক্ষণে রেখে বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে অপর গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ওই সদস্যর সঙ্গে আমির বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যোগাযোগ করে তাকে চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভর করে তাকে আত্মঘাতী হামলা বা জিহাদের জন্য মনোনীত করেন। এরপরই সে মিশনে বেরিয়ে পড়ে। যাকে তারা হিজরত নামে অভিহিত করেন। সে হিজরতে বেরিয়ে গেলেই আমিরসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মিশন শেষে নিরাপদে ফিরতে পারলে কিছুদিন পর পুনরায় দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
যেভাবে অর্থ আসে :
সাধারণত নিজেরাই চাঁদা দিয়ে অথবা হিতাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে ইয়ানত (অর্থ) সংগ্রহ করে সংগঠন পরিচালনা করে থাকে তারা। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকার কারণে তারা তাদের লেনদেনের প্রক্রিয়াটি ব্যাংক অথবা বিকাশের মাধ্যমে করে না। এ ক্ষেত্রে তারা চোরাকারবারি প্রক্রিয়ায় অর্থ সংগ্রহ করে। এর সুবিধা হলো যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে তবে তাকে জঙ্গি হিসেবে নয় চোরাকারবারি হিসেবে চালিয়ে দেয়া সহজ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ৫:৩৭:২৩ ৩১১ বার পঠিত