বঙ্গ-নিউজঃ রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেফতার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম ও কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসিব খানের সম্পৃক্ততা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাসনাতের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রতিবেদন পেলে ও ঘটনাস্থল থেকে জীবিত উদ্ধার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে জঙ্গিদের সঙ্গে এই দু’জনের যোগসাজশ ছিল কিনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
ওই সূত্র মতে, তাহমিদের হাতের পিস্তলে গুলি বা ম্যাগাজিন ছিল না। ৩২ প্রত্যক্ষদর্শীর মধ্যে ইতিমধ্যে ২১ জনের লিখিত বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারপর বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ওই ভবনের ছাদে জঙ্গিদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ অবস্থায়’ হাসনাত ও তাহমিদের ছবিগুলোর আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। রিমান্ডে থাকা এই দুই সন্দেহভাজন আসামির গুলশান হামলায় জড়িত থাকা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হতে নানামুখী তদন্ত চলছে।
আলোচিত এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেফতার সন্দেহভাজন হাসনাত করিমের মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য রোববার সিআইডিতে পাঠিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। ফরেনসিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে হাসনাত করিমের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জঙ্গিরা কী কী করেছিল। কোন কোন অ্যাপস ডাউনলোড করা হয়েছিল ও পরবর্তী সময়ে কী কী ডিলিট (মুছে ফেলা) করা হয়েছিল-পরীক্ষায় সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকাশিত ছবিতে তাহমিদের হাতে অস্ত্রটি দেখা গেছে, সেটি পিস্তল। কোন পরিস্থিতিতে সে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল- সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। একইভাবে ভবনের ছাদে হামলাকারী জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাত করিম ও তাহমিদের ‘সাবলীল’ ছবির ব্যাপারেও তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, গুলশানের ওই ঘটনাস্থল থেকে অভিযানের আগে-পরে হাসনাত-তাহমিদসহ মোট ৩২ জন জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। যারা ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। তাদের মধ্যে ২১ জনের লিখিত বক্তব্য নিয়েছে পুলিশ। তাছাড়া ৯ জন আদালতে তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে গুলশানের ঘটনায় হাসনাত ও তাহমিদের ভূমিকার ব্যাপারে সন্দেহাতীত সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হবে। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের দু’জনকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জঙ্গি হামলার শুরু থেকে উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত হলি আর্টিজানের ভেতরে এই দু’জনের ভূমিকা কী ছিল তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে রোববার কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাত ও তাহমিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি রিমান্ড শেষে সুস্পষ্টভাবে জানানো হবে। এখন পর্যন্ত এই হামলায় তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, রিমান্ডে হাসনাত ও তাহমিদ দাবি করেছেন, জঙ্গিরা অস্ত্রের মুখে তাদের ছাদে নিয়েছিল। হামলাকারী জঙ্গি যখন বুঝতে পেরেছে যে কোনো সময় হোটেলে কমান্ডো অভিযান শুরু হতে পারে, তখনই তাদের ছাদে নেয়া হয়। তাহমিদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল একটি অস্ত্রও। অপর একটি সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত ভারতীয় নাগরিক ডা. সত্য প্রকাশ এরই মধ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে হাসনাত ও তাহমিদ জঙ্গিদের অস্ত্রের মুখেই এই কাজ করেছেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন সত্য প্রকাশ।
অপর একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে যে ছবিতে হাসনাত ও তাহমিদকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে তা যদি অস্ত্রের মুখে তারা করে থাকে তাহলে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে তা প্রমাণ করতে হবে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে হাসনাত করিম জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যে কারণে কয়েক বছর আগে নর্থ সাউর্থ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। আর এক ব্যবসায়ী পুত্র কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ ঘটনার একদিন আগে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনার দিন দুই বান্ধবীসহ ওই হোটেলে যান তাহমিদ।
প্রসঙ্গত, ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের স্প্যানিশ হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সংকটের সময় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে ওই জঙ্গিরা। তাদের ছোড়া গুলি ও বোমায় নিহত হন ২ পুলিশ কর্মকর্তা। পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। একই সময় নিহত হয় হামলাকারী ৬ জন জঙ্গি।
পরে ওই নারকীয় ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। দেশ-বিদেশে আলোচিত এই মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ওই বর্বর জঙ্গি হামলার হোতা জেএমবি নেতা তামিম চৌধুরীকে শনাক্ত করলেও এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ৬:৫৩:৫২ ৩১৮ বার পঠিত