বঙ্গ-নিউজঃ একটি ঘরে কুড়ি জনের জায়গায় যদি দু’শো জন থাকে, তবে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? শুধু তারাই নয় সঙ্গে রয়েছে আরশোলা, ইঁদুর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা। জলের অভাব। তীব্র দুর্গন্ধে বাতাসও হাঁপিয়ে ওঠে। মুরগি-খামারের থেকেও খারাপ অবস্থা। আর সেটাই এখন খবরের শিরোনামে। এ রকম ভয়ঙ্কর করুণ পরিস্থিতি ফিলিপিন্সের এক জেলে।
সেখানে ৮০০ জন কয়েদিকে রাখার ব্যবস্থা। তার জায়গায় রাখা হয়েছে ৩৮০০ জন কয়েদিকে। কোনও ফাঁকা জায়গা নেই। চার দিক গিজগিজ করছে অসংখ্য মানুষের মাথা। পানি, খাবার নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে হাতাহাতি। ফিলিপিন্স প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে নির্বিকার থাকার অভিযোগ উঠেছে।
ক্ষমতায় আসার আগে রড্রিগো ডুর্টাটে কথা দিয়েছিলেন ফিলিপিন্সকে মাদক মুক্ত করবে তার সরকার। চলতি বছরের জুন মাসে ক্ষমতায় আসার পরই সেই অভিযান চালু করেন তিনি। জুলাই মাসের প্রথম ২৪ দিনেই মাদক ব্যবসায়ী এবং ব্যবহারকারীদের ২৯৩ জনকে খুন করা হয়েছে দেশটিতে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, হত্যার সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। সংগঠনগুলির আরও অভিযোগ, জেলে যে সব অপরাধীদের রাখা হয়েছে, তাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে। ফিলিপিন্সে এই রকম টালমাটাল অবস্থায় মানিলার কিউজোন সিটির জেলের দুরবস্থার ছবি প্রকাশ হয়। তা দেখে অবাক গোটা বিশ্ব।
প্রেসিডেন্ট ডুর্টাট ক্ষমতায় আসার আগে এই জেলে কয়েদির সংখ্যা ছিল ৩০০ জন। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮০০ জনে। যেখানে এই জেলে ৮০০ কয়েদি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। আমেরিকার ইলিনিয়স বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধ সংক্রান্ত বিভাগের বিশেষজ্ঞ রেমুন্ড নারাগ এই জেল সম্বন্ধে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। তার যখন ২০ বছর বয়স, ফিলিপিন্স সরকার হত্যার দায়ে তাকে জেলে পাঠান। তার লেখা ‘ফ্রিডম অ্যান্ড ডেথ ইনসাইড দ্য জেল’-এ রেমুন্ড জানিয়েছেন, পাঁচ জনের থাকার একটি ঘরে ৩০ জনকে রাখা হত। খাবারে শুকনো মাছ দেয়া হতো। তার সাত বছর জেলে থাকার অভিজ্ঞতায় প্রতি মুহূর্তে তিনি মৃত্যুকে উপলব্ধি করেছেন বলেও জানিয়েছেন নারাগ। সেই একই ছবি ফুটে উঠেছে ২০১৬-য় রড্রিড ডুটার্ট সরকারের আমলেও। রাতে কয়েদিরা শুয়ে থাকে যেন ‘ফার্মে শুয়োরের পাল শুয়ে রয়েছে’, সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে এক কয়েদি এমনটাই জানিয়েছে।
নারাগ জানিয়েছেন, একটা অস্বস্তিকর পরিবেশে কয়েদিদের রাখা হয়। এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদেরকে দেরিতে খেতে দেয়া হয়। যাতে কয়েদিরা খাবার নিয়ে একে অপরে মারপিট করে। মাসে চার-পাঁচ জন কয়েদির শারীরিক অসুস্থতার জেরে মারা যাওয়াটা যেন রুটিনমাফিক। পানি ও খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকায় প্রতি দিন কয়েদিরা ঝগড়াঝাটি করেই থাকে। দিনের পর দিন অস্বস্তিকর পরিবেশে থেকে অনেক কয়েদি মানসকি অবসাদে ভোগে। সে জন্য কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ জানালেও জেল কর্তৃপক্ষ উদাসীন।
নারাগ তার অভিজ্ঞতায় আরও জানিয়েছিলেন মাত্র ৩০ স্কোয়্যার মিটারে ১৮০ জন কয়েদিকে দিনের পর দিন থাকতে হয়েছে। ঘুমানোর জন্য কোনও বিছানা নেই। নোংরার মধ্যে অপরিচ্ছন্ন জামাকাপড়, ঘর্মাক্ত শরীরে গা ঘেঁষে শুয়ে থাকতে হয়েছে প্রতিদিন। সাত বছর এ ভাবে কাটানোর পর ২০০২ সালে ছাড়া পান তিনি। কিন্তু আজও তাকে সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো তাড়িয়ে বেড়ায়। পর্যাপ্ত ঘর না থাকায় রাতে কয়েদিরা বাস্কেটবল কোর্টে, সিঁড়িতে শুয়ে থাকতে বাধ্য হয়।
ফিলিপিন্স সরকারের উদাসীনতা যে জায়গায় পৌঁছেছে, তার প্রতিবাদ করে নারাগ বলেন, যদি আমেরিকার কোনও জেলে এ রকম ঘটনা ঘটত, তা হলে প্রতিদিন দাঙ্গা হতো। এখনও পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০০ জনকে মাদক অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এমনকী, ড্রাগ মুক্ত করতে লক্ষাধিক মানুষকে মারতে পিছ পা হবে না বলেও কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে ফিলিপিন্স সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ৫:২৭:২৪ ২৭৭ বার পঠিত