ব্রিটেনের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে

Home Page » ফিচার » ব্রিটেনের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে
সোমবার, ১ আগস্ট ২০১৬



যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরে থেরেসা মে

বঙ্গ-নিউজঃ  কর্মঠ। নিজেকে জাহির করতে চান না। অথচ সামনে এগিয়ে যান সফলভাবেই। অর্থাৎ প্রচণ্ড পরিশ্রমী। তার দিন শুরু হয় সাধারণ মানুষের চেয়ে দুই-তিন ঘণ্টা আগে অন্তত চার-পাঁচ গুণ বেশি কাজ করেন মন্ত্রিসভার যেকোনো সদস্যের চেয়ে। সব কিছুতে এত গুণ যার তিন হলেন থেরেসা মে। রান্না-বান্নার হাতও বেশ পাকা। তার সংগ্রহে রেসিপি বইয়ের সংখ্যা ১০০টির বেশি। শারীরিক গঠন ঠিক রাখতে প্রচুর হাঁটেন। অদম্য এ নারী যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন গত ১৩ জুলাই (২০১৬) বুধবার। যিনি বিগত ক্যামেরন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সেখানেও কাজ করেন সফলভাবে। লৌহমানবী ম্যার্গারেট থ্যাচারের পর যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন থেরেসা মে। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বলেন, আমি এমন একটি সরকার গঠন করব, যে সরকার শুধু সুবিধাভোগী মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য নয়, বরং কাজ করে যাবে সব মানুষের জন্য।
থেরেসা বাকিংহাম প্যালেসে গিয়ে দেখা করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে। আর সেখানেই নতুন সরকার গঠনে আনুষ্ঠানিকভাবে রানীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন তিনি। রানীর কাছ থেকে ফিরে থেরেসা যান প্রধানমন্ত্রীর বাস ভবন ১০ ডাউনিংস্ট্রিটে। সেখানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। ওই ভাষণে তিনি বলেন, এ সরকার হবে সব মানুষের। একটি উন্নততর যুক্তরাজ্য উপহার দেয়াই হবে এ সরকারের প্রধান কাজ। খেটে খাওয়া বা কোনো রকমে জীবনযাপন করেন, এমন মানুষের পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বিদায়ী ভাষণে ক্যামেরন বলেন, গত প্রায় ছয় বছরে আমি (ক্যামেরন) গণমানুষের ভাগ্যের উন্নতির জন্য কাজ করেছি। তিনি তার উত্তরসূরি থেরেসাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মনে হচ্ছে থেরেসা মেও তার দায়িত্ব পালন করা থেকে এতটুকুও পিছপা হবেন না। কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের লড়াইয়ে আন্দ্রিয়া লিডসম (প্রতিদ্বন্দ্বী) সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ১১ জুলাই (সোমবার)। তখন দলটির নেতা নির্বাচিত হন থেরেসা। এর আগে না থাকার বিষয়ে গণভোটের রায় হয় যুক্তরাজ্যের ইইউতে। এরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন ক্যামেরন। ইইউতে না থাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেন ক্যামেরন। তিনি পদত্যাগ করেন এর জন্যই।
মার্গারেট থ্যাচার এবং থেরেসা মে দুইজনেই কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য। তবে তাদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। থ্যাচার ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘোর বিরোধী। আর অন্য দিকে থেরেসা যেতে চাচ্ছিলেন না ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ থেকে। অথচ এখন থেরেসাকেই দিতে হচ্ছে ব্রেক্সিটের নেতৃত্ব। এখন প্রশ্ন, এটা কি তার জন্য দুর্ভাগ্য? এখন থেরেসাকে ভাবতে ও বলতে হচ্ছে ব্রেক্সিট মানে ব্রেক্সিটই। এ নিয়ে আর ভাবার অবকাশ থাকল না (থেরেসার) ২৩ জুনের গণভোটের পর। দেশটির জনগণও তাকে স্বাগত জানিয়েছে।
থেরেসা মের জন্ম ১৯৫৬ সালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের ইস্টবনে (একটি সমুদ্র তীরবর্তী শহর)। স্থানীয় স্কুলে শুরু হয় তার পড়ালেখা। শিক্ষার্থী ছিলেন অক্সফোর্ডেরও। তবে ওই সময়ে তিনি সবার নজরে পড়েননি আড়ালে থাকার স্বভাবের কারণে। কখনোই থেরেসাকে প্রচারের সারি বা আলোর নিচে থাকতে দেখা যায়নি আধুনিক রাজনীতিকদের মতো।
থেরেসার কাজ করার ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে ব্যাংকিং খাতেও। এতে বোঝা যায়, ব্যাংকিং প্রশাসনও তার ভালো জানা। তারপরও তার ভালো লাগে সুস্থ রাজনীতি চর্চা। আর এ কারণেই রাজনীতিতে তার প্রবেশ ঘটে ১৯৯৭ সালের দিকে। কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতায় আসে ২০১০ সালে। তারপর সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় থেরেসাকে। বলা যেতে পারে, এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন দফতরগুলোর মধ্যে একটি। সেই থেকে কাজ করে যান এ পদে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এবারো দায়িত্ব বর্তিয়েছে সঠিক বা শক্ত হাতেই। কারণ তিনি প্রচণ্ড পরিশ্রমী। শুধু পরিশ্রম করলেই চলে না, প্রশাসনিক কাজের ভালোমন্দ বুঝতেও হয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের। সেই ভালোমন্দও ভালোই বোঝেন থেরেসা মে। ক্যামেরন বলেন, আমাদের দেশ আজ আগের চেয়েও দৃঢ়, বলে বিশ্বাস করি। থেরেসাকে তিনি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমার বিশ্বাস তিনি দৃঢ় ও স্থিতিশীল নেতৃত্ব উপহার দেবেন। তবে বলা যেতে পারে, ব্রেক্সিট ছাড়াও থেরেসার সামনে আরো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশ ও তার দল এখনো বিভক্ত ব্রেক্সিট নিয়ে। এ প্রসঙ্গে থেরেসা বলেন, ‘সমস্যা তো থাকবেই। এর সমাধান করতে হবে ধৈর্য ও বুদ্ধির সাথে, সবাইকে কাজে লাগিয়ে।’ ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকা অ্যান্দ্রিয়া বলেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হচ্ছেন থেরেসাই। কারণ এখানে এখন প্রয়োজন স্থিতিশীল সরকার।
জিম কালাঘানের (১৯৭৬ সাল) পর থেরেসা মেই ব্রিটেনের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক প্রধনামন্ত্রী, যার বয়স এখন প্রায় ৫৯ বছর। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এ দৌড়ে ছিলেন পাঁচজন প্রার্থী। তার মধ্য থেকে নির্বাচিত হন থেরেসা। যে কারণে অনেকে তাকেও বলছেন ‘দ্বিতীয় লৌহমানবী’। বর্তমানে ৬৮ জন নারী পার্লামেন্ট সদস্য রয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিতে। আর হাউজ অব কমন্সে তাদের সদস্য (মোট) ৩৩০ জন। তাদের ২৩০ জন এমপির মধ্যে ৯৯ জন নারী। থেরেসা মেকে মেরি মেও বলা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৪:৪৫   ৩৫২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ফিচার’র আরও খবর


অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে

আর্কাইভ