বঙ্গ-নিউজ:হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত জঙ্গিদের বাইরেও এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত আট থেকে নয়জনের তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে,” বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।তবে তাদের পরিচয় তদন্তের স্বার্থে এখনি প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
গত ১ জুলাই গুলশানের ওই ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর কমান্ডো অভিযানে ছয়জন নিহত হন।
এরপর বসুন্ধরা ও শেওড়াপাড়ায় ওই হামলাকারীদের দুটি ‘আস্তানা’র সন্ধান মেলার পর ফ্ল্যাটগুলোর দুই মালিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এছাড়া গুলশানে উদ্ধার জিম্মিদের দুজন হাসানাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা পুলিশ জানালেও এরপর থেকে দুজনের সন্ধান নেই।
নরসিংদী, কুমিল্লা এবং ঢাকার আশুলিয়া থেকে এক নারীসহ অন্তত চারজনকে আটকের খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।
সম্প্রতি কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত নয়জনের একজন রায়হান কবির তারেক গুলশান হামলাকারীদের প্রশিক্ষক ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
গুলশানে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস পুলিশ জেনেছে বলে কয়েকদিন আগে জানিয়েছিলেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। রোববার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল জানালেন পরিকল্পনাকারীদের শনাক্তের কথা।
মনিরুল বলেন, “মাস্টারমাইন্ড কারা- তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন এমন আট-নয় জনের নাম পাওয়া গেছে।”
সম্প্রতি বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এক্ষেত্রে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “জনস্বার্থে পুলিশ ব্লক রেইড দিচ্ছে। এখানে সাধারণ মানুষের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সবার সহযোগিতায় অপরাধীদের ধরতে চায় পুলিশ।”
হামলায় ছিল ‘শুধু জেএমবি’
বিশ্বব্যাপী আলোচিত গুলশান হামলার পর আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা ও হামলাকারীদের ছবি ইন্টারনেটে এলেও বাংলাদেশ পুলিশ বরাবরই বলছে, হামলাকারীরা জেএমবির সদস্য।
“হামলাকারীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। তারা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে,” বলেন মনিরুল।
বাংলাদেশে গত দেড় বছরে সংঘটিত জঙ্গি কায়দায় হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম কিংবা হরকাতুল জিহাদকেই দায়ী করে আসছে পুলিশ।
গুলশান হামলায় জেএমবি ছাড়া অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার তথ্য পুলিশ পায়নি বলে জানান মনিরুল।
তবে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের দিকে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের নেতা জসীমউদ্দীন রাহমানীর নেতৃত্বে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়েছিলেন। তারা যৌথভাবে নিজেদের মতাদর্শ প্রচারে একমত হতে চেয়েছিলেন।
“তার কিছুদিনের মধ্যেই রাহমানীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করলে তাদের যৌথভাবে কাজ করার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।”
পরে ‘জিহাদি গ্রুপ অব বাংলাদেশ’ নামে আনসারুল্লাহ, জেএমবি ও হুজির নেতা-কর্মীরা এক হওয়ার চেষ্টা করেও সফল হয়নি বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
“পারস্পরিক অবিশ্বাস ও মতপার্থক্যের কারণে তারা এক হয়ে কাজ না করতে পেরে বর্তমানে আলাদাভাবে নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অস্তিত্ব জানান দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা সব সময় কাজ করে।”
বাংলাদেশ সময়: ০:৪০:২০ ৪৫০ বার পঠিত