বঙ্গ-নিউজ: রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ভবনে থাকা ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় গোলাগুলিতে নয় ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ৫ নম্বর সড়কে জাহাজ বিল্ডিং নামের ওই ভবনে এ অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভিযানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযান শেষে সকাল ৮টার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক বলেন, নিহতরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। ওই বাড়ি থেকে বড় হামলার পরিকল্পনার তথ্য পুলিশের কাছে আগে থেকেই ছিল বলে জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান জানান, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ওই ভবনে পুলিশ ‘অপারেশন স্টর্ম ২৬’ নামের এই অভিযান চালায়। পুলিশের সঙ্গে এ অভিযানে অংশ নেয় স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল।
এর আগে সোমবার গভীর রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ওই আস্তানায় অভিযানে যায়।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বোমা নিক্ষেপ করে জঙ্গিরা। পুলিশ তাদের আস্তানা লক্ষ্য গুলি চালায়। এ সময় জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এতে নয় ‘জঙ্গি’ নিহত ও এক পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ওই বাড়িতে গিয়ে দরজা খোলার নির্দেশ দিলে ভিতর থেকে ‘নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবর’ বলে জানালা দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে জঙ্গিরা। এ সময় পুলিশ প্রথমে পিছু হটলেও পরে পাল্টা গুলি ছোড়ে। জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলির পাশাপাশি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
গভীর রাতে বোমা ও গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এলাকা। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে আতংকগ্রস্ত হয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। এতে কিছু সময়ের জন্য অভিযান ব্যাহত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ওই এলাকায় মাইকিং করে এলাকার বাসিন্দাদের দরজা-জানালা বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মুহুর্মুহু গুলির শব্দে এলাকাবাসী আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া গেছে। পুলিশ সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের বাসায় তল্লাশি চলছে বলেও জানা গেছে।
অভিযানে থাকা দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা রাত আড়াইটায় যুগান্তরকে বলেন, আমরা খবর পাই এখানে একটি জঙ্গি আস্তানা আছে। এরপর মিরপুর থানার পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান শুরু করে। এ সময় পাঁচতলা ওই বাড়িতে থাকা আস্তানার ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই পুলিশ ওয়্যারলেসে পুলিশ কন্ট্রোলরুমে খবরটি জানানোর পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে রাখে।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার ভয়াবহতা আচ করতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ম্যাসেস পাঠিয়ে ঘটনাস্থলে আরও পুলিশ পাঠানোর জন্য বলা হয়। রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, মুহুর্মুহু গুলি ও বোমার শব্দে পুরো এলাকা চরম আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় অনেক বাসায় শিশু ও নারীর কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেছে।
এর আগে রাজধানীর বাড্ডা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছিল পুলিশ। এসব আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর বসুন্ধরা ও মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় আরও দুটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। শেওড়াপাড়া থেকে গ্রেনেড ও কালো পোশাক উদ্ধার করা হয়।
আর বসুন্ধরা থেকে কালো পোশাকসহ জঙ্গিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৯:২৪ ৪৭৬ বার পঠিত