বঙ্গ-নিউজঃ ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে যেন আত্মহত্যার হিড়িক পড়ে গেছে। এরই মধ্যে তুরস্কে পাঁচ সেনা এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যার খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এ ছাড়া বন্দিদের নির্মম নির্যাতন, চাবুক মারা এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলেও জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের খবর অনুযায়ী বন্দিদের পানি পর্যন্ত খেতে না দিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের অনুগত পুলিশ বাহিনী। এ সংক্রান্ত বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও প্রমাণ আছে বলে দাবি তাদের।
এ ছাড়া এই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত অন্তত পাঁচ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি অ্যামনেস্টিসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এর আগে গত দুইদিনে তুরস্কে অন্তত দুই পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসে। এর আগে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর চাকরিচ্যুত হওয়ার খবর শুনে আত্মহত্যা করেন তুরস্কের একটি জেলার উপ-গভর্নর নেজমি আকমান। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকমান নিজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরপত্তারক্ষীর বন্দুক কেড়ে নিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইনডিপেনডেন্টের খবর অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারী উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের একজন ইস্তাম্বুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা মিথাত আয়নাচি। তিনি অভ্যুত্থানের পর পরই একটি ট্যাংকের পাশ থেকে সেনাবাহিনীর পোশাকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে জানা যায়, পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায়ই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
এ ছাড়া ২২ জুলাই তুরস্কের সেনাবাহিনীর আরেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কর্নেল লেভেন্ত ওন্দার আত্মহত্যা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর জানানো হয়েছিল ব্যর্থ সামরিক অভ্যত্থানে তাঁকে অভিযুক্ত করার পর পরই তিনি একটি পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন। যদিও দেশটির পুলিশ বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছিল স্নায়ুবৈকল্যে আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
এদিকে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর আটক হওয়া ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, আইনজীবী, চিকিৎসক ও বন্দিশিবিরে দায়িত্ব পালন করা এক কর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে অ্যামনেস্টি।
এতে দেখা যায়, আটককৃতদের হয়ে কাজ করছেন এমন দুই আইনজীবী অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদস্যরা ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের ধর্ষণ করছেন। গত কয়েকদিনে এমন দৃশ্য তাঁরা অনেক দেখেছেন।
আটককৃতদের অনেককে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত খাবার, পানি ও চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
এদিকে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এর আওতায় শনিবার সরকারের এক ডিক্রিতে আটককৃতদের বিনা অভিযোগে আটকে রাখার সময়সীমা চারদিন থেকে বাড়িয়ে ৩০ দিন করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট জানায়, তুরস্কে ইতিমধ্যে প্রায় ১৩ হাজার সেনা সদস্য, পুলিশ, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা এবং সাধারণ জনগণকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার ৪২ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এঁদের মধ্যে আছেন নাজলি ইলিচাক। ২০১৩ সালে দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকা মন্ত্রীদের সমালোচনা করায় সরকারপন্থী একটি পত্রিকা থেকে তাঁকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪০:২০ ৪০৪ বার পঠিত